বাস, ট্রেনের পরে এ বার হেলিকপ্টার। নববর্ষে মালদহ ও বালুরঘাটের জন্য এই উপহারে আনন্দিত স্থানীয় বাসিন্দারা।
বালুরঘাট থেকে হেলিকপ্টারে কলকাতা পৌঁছনো যাবে মাত্রই দু’ঘণ্টায়। ভাড়া ১৭০০ টাকা। এক ঘণ্টা ২৫ মিনিটে কলকাতা থেকে যাওয়া যাবে মালদহে। ভাড়া ১৩০০ টাকা। এ দিন সেই হেলিকপ্টার মালদহে পৌঁছলে বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বাগত জানান রাজ্যের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্র। বালুরঘাটে পূর্ত মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ছিলেন বিমানবন্দরে। তিন মন্ত্রী আলাদা ভাবে হলেও একই সুরে জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই রাজ্যের উড়ানের মানচিত্রে জায়গা পেল মালদহ ও বালুরঘাট। পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করবেন। মুখ্যমন্ত্রী কথা রেখেছেন। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী হেলিকপ্টার পরিষেবা বাড়ানো হবে।”
মাত্র ৭ আসনের হেলিকপ্টারের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে থাকায় উড়ানে বড় লোকসান হবে না বলে মনে করছে পরিবহণ দফতর। আপাতত, সপ্তাহে একদিন ওই রুটে হেলিকপ্টার চলবে। |
এদিন হেলিকপ্টারে মালদহে যান কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রদীপ সান্যাল ও তাঁর স্ত্রী রুমা দেবী। আদতে মালদহের বাসিন্দা প্রদীপবাবু বলেন, “কবে মালদহে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হবে সেই আশায় ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মালদহের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। আমি আশা করব, সপ্তাহে একদিন নয়, অন্তত তিন-চারদিন হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু থাকবে।” ওই উড়ানে যাত্রী ছিলেন মালদহ শহরের পিরোজপুরের বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী রজত চক্রবর্তী ও তাঁর বাবা-মা। রজতবাবু বলেন, “বিমানে অনেক চড়েছি। কিন্তু হেলিকপ্টারে চড়ার অনুভূতি যে আলাদা সেটা বুঝলাম। এত নিচু দিয়ে হেলিকপ্টারটি যাচ্ছিল, গঙ্গা নদী থেকে শুরু করে জাতীয় সড়ক, রেল স্টেশন সবই হেলিকপ্টার থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।”
এদিন কলকাতা থেকে সাত যাত্রীর মধ্যে ছয় জন মালদহে নেমে যান। মালদহ থেকে যেহেতু কোনও যাত্রী কলকাতার টিকিট কাটেননি, সে কারণে মালদহ থেকে হেলিকপ্টারটি ছয়টি ফাঁকা আসন নিয়ে ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ বালুরঘাট রওনা দেয়। হেলিকপ্টারের ক্যাপ্টেন মুকেশ মালহোত্রা বলেন, “এখন সপ্তাহে একদিন কলকাতা থেকে মালদহ বালুরঘাট পরিষেবা চালু হয়েছে। চাহিদা যদি বেশি হয়, তবে এই পরিষেবা আরও বাড়ানো হবে। সবই নির্ভর করছে চাহিদার উপরে।”
বালুরঘাট-কলকাতা হেলিকপ্টার উড়ানের প্রথম দিনই তাতে চড়তে কলকাতার বেহালার পর্ণশ্রীর বাসিন্দা তৃপ্তি বন্দ্যোপাধ্যায় ট্রেনে করে সকালে বালুরঘাটে পৌঁছেছেন। একটা সময়ে তিনি বালুরঘাটে সপরিবারে ৫ বছর কাটিয়েছিলেন। তাই বালুরঘাট থেকে কপ্টার সার্ভিস চালুর খবরে তৃপ্তিদেবী স্বামী ছেলে পুত্রবধু নাতি সহ ৫ জনে মঙ্গলবার শিয়ালদহ থেকে গৌড় এক্সপ্রেস চেপে এদিন সকালে বালুরঘাট পৌঁছন। সোজা মাহিনগরের বিমানঘাঁটিতে চলে যান। তিনি বলেন, “নস্টালজিয়া তো আছেই। তার সঙ্গে জয় রাইড ভালবাসি। সেই কবে ৮০-র দশকে কলকাতা থেকে বাসে চেপে বালুরঘাটে আসা-যাওয়া। তার পর ট্রেনে এখন হেলিকপ্টারে বালুরঘাট থেকে কলকাতা যেন স্বপ্নের মতো।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “আপাতত সপ্তাহে বুধবার করে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কলকাতা ভায়া মালদহ হয়ে থেকে কপ্টারটি বালুরঘাট যাবে। ১৫ মিনিট বাদে ফের বালুরঘাট থেকে সরাসরি কলকাতার উদ্দেশে উড়ে যাবে। কলকাতার যাদবপুরের কুইক সার্ভিস নামে একটি সংস্থা এবং মালদহের রবীন্দ্র এভিনিউ এলাকার ডায়মন্ড ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল সংস্থা থেকে হেলিকপ্টারের টিকিট কেনা যাবে। তা ছাড়া অনলাইনেও টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে।” বালুরঘাটে শীঘ্রই টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা হবে বলে জেলাশাসক বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হলেও প্রথম দিন তাতে চড়ার টিকিট না পাওয়ায় দুই জেলায় অনেক উৎসাহীদের মধ্যেই হতাশা রয়েছে। মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “আগে এলে আগে পাবেন, এই ভিত্তিতে টিকিট বিক্রি হয়েছে। কলকাতা যেতে হেলিকপ্টারের সাতটি আসনের টিকিট বালুরঘাটের মানুষ কেটেছেন। সেই জন্য মালদহের কেউ টিকিট পাননি। আশা করছি, মালদহ হেলিকপ্টার পরিষেবা খুব ভাল ভাবে চলবে।”
|
বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি। |
শুরু হল কলকাতা থেকে মালদহ ও বালুরঘাটে হেলিকপ্টার পরিষেবা। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে ৬ জন যাত্রীকে নিয়ে হেলিকপ্টারটি বুধবার বেলা সাড়ে ১২টায় মালদহ বিমানবন্দরে নামে। সেখান থেকে ২০ মিনিটেই বালুরঘাটে পৌঁছে যায়। বালুরঘাট থেকে ৭ যাত্রীকে নিয়ে ২টো নাগাদ কলকাতা ফেরত যায়। পৌঁছয় বিকেল ৪টে। প্রতি বুধবার ওই রুটে কপ্টার চলবে। কলকাতা-মালদহের ভাড়া ১৩০০ টাকা। বালুরঘাট পর্যন্ত ১৫০০ টাকা। |