আপনি কি জানেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জোসিমার ডি’ সিলভা নামলেই গোল করেন?
চ্যানেলওয়ালাদের অসংখ্য বুমের সামনে থেকে মুখটা হঠাৎ-ই সরিয়ে নেন আর্মান্দো কোলাসো। তার পর কিছুটা গম্ভীর মুখে বলে দেন, “আরে আমার লেনও তো গতকাল দু’গোল করেছে। পারফর্মারদের প্রতিদিনই নিজেকে প্রমাণ করতে হয়।”
জোসিমার, সাব্রোসা, পেন, নবি, মেহরাজ, অসীমমহমেডান তো যথেষ্ট শক্তিশালী? “লিগে যারা খেলছে সব দলই শক্তিশালী। জয় নয়, ভাবছি ছেলেদের কথা। এক বা দু’দিন অন্তর ম্যাচ। ছেলেরা খেলে যাচ্ছে। টানা সাতটা ম্যাচ জিতেছে। জানি না বেলুনটা কবে ফুটো হয়ে যাবে।”
ডার্বির আগেই লিগ খেতাবটা পকেটে পুরে নিতে চান নিশ্চয়ই? “যে কোনও কোচই তাই চাইবে। ডার্বির আগে সবাই চাইবে চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামতে। তবে আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবছি। মহমেডান ম্যাচেও তিন পয়েন্টই লক্ষ্য।”
চৌম্বকে লাল-হলুদ কোচের সাংবাদিক সম্মেলনের নির্যাসজোসিমার-পেনদের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে রেকর্ড সংখ্যক আই লিগ জেতা গোয়ানের গলায় কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। ডেম্পোকে অসংখ্য ট্রফি দেওয়ার সময় যেমন থাকতেন, কলকাতায় এসে প্রথম ট্রফি জেতার সামনে দাঁড়িয়ে একই রকম তিনি। সেই আর্মান্দোসুলভ ফুরফুরে মেজাজ। চাপমুক্ত।
আর্মান্দোর কোচিংয়ে যাঁরা খেলেছেন, তাঁরা বলেন, এটাই নাকি দেশের সফলতম ক্লাব কোচের কোচিং ইউ এস পি! সাফল্যের রসায়ন। |
ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঢুকলে মনটা কেমন যেন ভাল হয়ে যায়। মনে হয় এটা মান্ধাতার আমলের ময়দানের কোনও তাঁবু নয়, বিদেশের কোনও ক্লাব। নির্মিয়মান কাফেটোরিয়া থেকে প্রেস কর্নার, জিম থেকে ড্রেসিংরুম, স্বয়ংক্রিয় বিশাল গেট, জাকুজি। ঝকঝকে, সাজানো-গোছানো। এতটাই যে, ত্রিফলায় সাজানো গঙ্গার ঘাট, ইডেন বা প্রিন্সেপ ঘাটের বাউল-ভাওয়ালি উৎসব দেখে আসার পরও যা দেখতে বুধবার উৎসবের বিকেলে ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকেই। কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে। কেউ বা প্রেমিকাকে সঙ্গী করে।
এর মধ্যেই ইংরেজি নববর্ষের বিকেলে কেক বিতরণ, ক্লাবের অনুকরণীয় পরিবেশের সঙ্গে কেমন যেন মিলে যায় আর্মান্দোর তুরীয় মেজাজ, মনোভাব। মোগার ‘অশ্লীল’ বিতর্ক, চিডি-উগা-মেহতাবদের চোট কোনও কিছুই আচড় ফেলতে পারে না সেখানে।
হবে না-ই বা কেন? আর দু’ম্যাচ (আজকের মহমেডান আর রবিবারের ইউনাইটেড ম্যাচ) জিতলেই ফের কলকাতা লিগ পকেটে। দু’ম্যাচ বাকি থাকতেই। এ বার নিয়ে টানা চার বার। পাশের ভগ্নপ্রায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর তাঁবুকে অন্ধকার করে আবার বাংলা চ্যাম্পিয়ন। “ইস্টবেঙ্গল টিমটা তো যথেষ্ট ভাল। তবে আমার সুবিধা, মহমেডানে এ বার দুই প্রধান-ফেরত অনেক অভিজ্ঞ ফুটবলার আছে। যাদের জেদটা আমি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি,” বলার সময় সাদা-কালোর নতুন কোচ সঞ্জয় সেনের গলায় বিপক্ষ সম্পর্কে সম্ভ্রম, সঙ্গে আশাও। মাস চারেক পর পুরানো সংসারে ফিরে কিছু করে দেখানোর জন্য নানা অঙ্ক কষছেন তিনি। পেনকে রিজার্ভে রেখে জোসিমার আর সাব্রোসাকে নামাচ্ছেন তিনি।
আর্মান্দোর উড়তে থাকা বেলুনকে ফুটো করে দিতে ৪-৪-১-১ ফমের্শনে দল নামাচ্ছেন মহমেডান কোচ। জোসিমারের পিছনে অসীম। মাঝমাঠের দুই প্রান্তে রহিম নবি আর ইজরায়েল গুরুংপাল্টা আক্রমণে যাওয়ার জন্য। “গোয়ার মাঠে গিয়ে আর্মান্দোর ডেম্পোকে হারিয়েছিলাম একবার। দেখা যাক এ বার ওদের লিগ জয় পিছোতে পারি কি না,” বলছিলেন বহু অঘটন ঘটানো সঞ্জয়।
মহা-ডার্বির আগে ‘মিনি-ডাবির্’ জিতলেই ট্রফি প্রায় মুঠোয়। এই অবস্থায় দাঁড়িয়েও আর্মান্দো বিপক্ষ সম্পর্কে তেমন ভাবছেন বলে মনে হল না। বর্ষশেষের উৎসবে ফুটবলাররা রাত জাগবেন বলে এ দিন অনুশীলনই করাবেন না বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে মত বদলান। মহমেডান ম্যাচের গুরুত্বের কথা ভেবে। ফুটবলারদের ওয়ান টাচ খেলিয়ে আর সামান্য দৌড়োদৌড়ি করিয়েই ছেড়ে দিলেন তিনি। “আরে পরপর ম্যাচ। কিছু করার নেই। ছেলেরা যে সবাই এসেছে এবং অনুশীলন করছে এটাই বড় ব্যাপার,” বলে দেন আর্মান্দো। যা দেখে রিউজি সুয়োকার মন্তব্য, “এ রকম তো ডেম্পোতেও করতেন উনি। টিমকে কখনও চাপে ফেলতেন না।” কিন্তু মহমেডান কোচ তো আপনাকেই লাল-হলুদের প্রধান অস্ত্র বলেছেন? “আমি একা নই। ইস্টবেঙ্গলের সবাই প্রধান অস্ত্র। দেখছেন না লেনও গোল করে যাচ্ছে,” মাসখানেক আগেও ক্ষিপ্ত এবং আগুনে মেজাজের সুয়োকা নতুন কোচের জমানায় এসে রীতিমতো টিম ম্যান।
আর্মান্দোর হাতে পড়ে ডেম্পোর পথেই যে হাঁটতে শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গল! ট্রফি জয়ের সামনে দাঁড়িয়েও যাঁরা শান্ত কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল।
|
বৃহস্পতিবারে কলকাতা লিগ
ইস্টবেঙ্গল: মহমেডান
(যুবভারতী ৪-০০) |