এডে চিডি, জেমস মোগাদের ভিড়ে সব সময়ই ঢাকা পড়ে যান বছর উনিশের ছেলেটা। অথচ সুযোগ পেলে তিনিই ‘কালো ঘোড়া’ হয়ে ওঠেন ইস্টবেঙ্গলের। গোল করে বারবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন। তবুও হাজার ওয়াটের আলোর বাইরেই থেকে যান মণিপুরের লেন।
আই লিগের প্রথম একাদশে জায়গা হয় না। এ মরসুমে পরিবর্তে নেমেছেন হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচে। তাতেও কিন্তু একটি গোল রয়েছে লেনের পকেটে। কল্যাণীতে সালগাওকর ম্যাচে লেনের গোলেই অক্সিজেন পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আর কলকাতা লিগে তো সুযোগ পেয়ে প্রতি ম্যাচেই গোল করে চলেছেন তিনি। আর্মি একাদশের হয়ে গোল ছিল। এ বার রেলের বিরুদ্ধেও জোড়া গোল করে ফেললেন লাল-হলুদের তরুণ স্ট্রাইকার। ম্যাচের পর বলেও দিলেন, “গোল না করতে পারলে তো আর সুযোগই পাব না।” কথার মধ্যেই ফুটে বেরোয় জেদ, কিছুটা যেন অভিমানও। |
কলকাতা লিগে অচেনা ছবি। মোগাদের ভিড়ে কণিকা। |
জেমস মোগার মতো ছ’ফুট তিন ইঞ্চির বিদেশি স্ট্রাইকারের পাশেও ছোট চেহারার লেন মঙ্গলবার ঝলমল করছিলেন। গোল করার পরও অবশ্য লেনের জানা নেই প্রথম একাদশে তাঁর জায়গা হবে কি না! উল্টোদিকে সুদানের স্ট্রাইকার তো ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন না আসাটা অভ্যেস করে ফেলেছেন। তবু প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। আর সব ম্যাচেই গোলের সুযোগ নষ্ট করে চলেছেন। এমনকী এ দিন নিজে গোল করতে না পেরে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহিলা রেফারিকেই খারাপ ইঙ্গিত করে বসলেন। এর জন্য পরে ক্ষমাও চাইলেন না। মোগার হয়ে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন কোচ আর্মান্দো কোলাসো। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার এ প্রসঙ্গে যদিও বলছেন, “রেফারি নয়। মোগা সতীর্থদের কাছে হতাশা প্রকাশ করছিল। কোচের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শৃঙ্খলার প্রশ্নে আমরা কাউকেই রেয়াত করি না।”
ময়দানে শুধু নয়, ভারতীয় ফুটবলের বিপ্লব ঘটিয়ে জলপাইগুড়ির মেয়ে কণিকা বর্মন এ দিন বাঁশি মুখে মাঠে নেমেছিলেন। মহিলা হলে কী হবে, দাপটের সঙ্গেই ২২ জন পুরুষকে সামাল দিলেন। মোগার মতো ফুটবলারের খারাপ ইঙ্গিত যেমন গায়ে মাখলেন না, তেমনই পেনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য সুয়োকার প্রশংসায় বাড়তি উচ্ছ্বাসও দেখালেন না। যেখান থেকেই ডিকার প্রথম গোল। |
বিরতির আগে সুয়োকাকে রেলের বাবু মণ্ডল বিশ্রী ফাউল করলে পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। সুয়োকা তো মাঠের মধ্যেই কণিকাকে বলেন, “খুব ভাল সিদ্ধান্ত।” রেলের ফুটবলাররা অবশ্য তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ জানান। পরে রেলওয়ে এফসির ম্যানেজার রাজু দত্ত বললেন, “মহিলা রেফারি প্রথম ম্যাচ খেলালেন, সে সব ঠিক আছে। কিন্তু পেনাল্টির সিদ্ধান্ত একেবারেই ঠিক ছিল না।” এ সবে অবশ্য এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত হতে দেখা গেল না কণিকাকে।
প্রথমার্ধেই খাবরার সৌজন্যে ২-০ এগিয়ে যায় আর্মান্দো কোলাসোর দল। বিরতির পর জোড়া গোল করে ৪-০ করেন লেন। গোটা ম্যাচে লাল-হলুদেরই দাপট ছিল। কেবল রাজু গায়কোয়াড়ের আত্মঘাতী গোলটুকুই ছিল ম্যাচের ছন্দপতন। ম্যাচের পর গোয়ার কোচ অবশ্য খাতা-কলম নিয়ে কলকাতা লিগের অঙ্ক কষতে বসে গেছেন। যা পরিস্থিতি, তাতে আর দু’ম্যাচ জিতলেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে ইস্টবেঙ্গল। ১১ জানুয়ারি ডার্বির আগেই কি মরসুমের প্রথম ট্রফি ঘরে তুলতে পারবেন আর্মান্দোর ছেলেরা? সময়ই সে কথা বলবে।
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত (অভ্র), রাজু, অর্ণব, রবার্ট, নওবা, খাবরা (লোবো), সুয়োকা, ভাসুম, ডিকা (তুলুঙ্গা), মোগা, লেন।
|