ঘরে পড়ে চাকরির চিঠি, ফিরে এলে নিথর ছেলে
ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখে বছরের শেষ দিনে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিলেন বছর ছাব্বিশের যুবক। ফিরে এসে নববর্ষের সকালটা বাবা-মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে রাতে হায়দ্রাবাদের ট্রেন ধরার পরিকল্পনা ছিল। নতুন চাকরির ডাক এসেছে সেখান থেকে।
মঙ্গলবার সকালে ছেলে যখন পিকনিকে যায়, দুর্গাপুরের এমএএমসি কলোনির বি-ওয়ান মোড়ের মজুমদার দম্পতিও ছিলেন বেশ খোশমেজাজে। বিকেলে আসা একটি খবরে পাল্টে গেল গোটা আবহ। বুধবার বিকেলে স্টেশনের পথ ধরার বদলে এক মাত্র ছেলে শৌভিক সিংহ মজুমদারের নিথর দেহ যখন শ্মশানের দিকে রওনা হল, নিস্তব্ধ আবাসনে নির্বাক বসে প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া।
মঙ্গলবার দুর্গাপুর থেকে আট যুবক গিয়েছিলেন গঙ্গাজলঘাটিতে পিকনিক করতে। জলাধারে নৌকা ডুবে চার জন তলিয়ে যাওয়ার পরে সেই বিকেলেই উদ্ধার হয়েছিল শৌভিকের দেহ। ধান্ডাবাগের উৎপল মণ্ডল, আমরাইয়ের রিন্টু সেন ও ভিড়িঙ্গির রাজু মান্নার দেহ মেলে বুধবার সকালে। বিকেলে তাঁদের দেহ আনা হয় দুর্গাপুরে। বছরের প্রথম দিনেই এমন একটা দুঃসংবাদে থমথমে হয়ে গিয়েছিল চার পাড়াই। দেহ পৌঁছনোর পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিজন থেকে প্রতিবেশী, সকলেই।
উৎপলের বাবা। ছবি: বিকাশ মশান।
উৎপলের বিয়ে হয়েছিল বছরখানেক আগে। ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা ছাড়াও তিনি গাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা ও একটি রেস্তোঁরায় কাজ করতেন বলে পড়শিরা জানান। বড় রাস্তা থেকে গলি রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে তাঁদের বাড়ি। এ দিন বিকেলে গলি ছেড়ে ভিড় উপচে এসেছিল রাস্তা পর্যন্ত। আশপাশের বাড়ির ছাদেও ছিল মানুষের ভিড়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, সকলের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতেন উৎপল। প্রতিবেশী রূপা মণ্ডল, মানু মান্নারা বলেন, “বছরের প্রথম দিনে এমন ঘটনা ঘটল, যা কল্পনারও বাইরে।” কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন উৎপলের স্ত্রী টিনাদেবী।
ধান্ডাবাগের কাছে দেশবন্ধুনগরে ছোটবেলা কেটেছে রিন্টু সেনের। পরে তাঁরা সপরিবারে আমরাইয়ে চলে যান। বাড়িতে রয়েছেন বাবা-মা ও দুই দাদা। কয়েক বছর আগে দেশবন্ধুনগরে আলমারির দোকান করেন রিন্টু। এ দিন প্রথমে দেশবন্ধুনগরে দোকানের সামনে নিয়ে আসা হয় তাঁর দেহ। আশপাশের ব্যবসায়ী থেকে পুরনো প্রতিবেশীরা ছিলেন সেখানে। দাঁড়িয়ে পড়েন পথচলতি মানুষজনও। প্রদীপ বর্মণ নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, “আমাদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশত রিন্টুদা। সকলের সঙ্গেই খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।” দেশবন্ধুনগর থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় আমরাইয়ের বাড়িতে।
ভিড়িঙ্গি স্কুলপাড়ার বাসিন্দা রাজু এএসপি কারখানায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতেন। এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়িতে এসে পৌঁছয় তাঁর দেহ। স্ত্রী রিক্তাদেবী কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। রাজুর দিদি তাপসী ভাণ্ডারি বলেন, “বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল ভাইয়ের। মঙ্গলবার বিকেল সওয়া ৩টে নাগাদ শেষ বার কথা হয়। তার পর থেকে আর ওর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। সন্ধ্যায় নৌকাডুবির খবর পাই। ভাই নিখোঁজ জেনে সারা রাত উৎকণ্ঠায় কেটেছে। সকালে খারাপ খবরটা এল।”
বি-ওয়ান মোড়ের শৌভিক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ করতেন। প্রতিবেশীরা জানান, শৌভিক পড়াশোনায় ভাল ছিলেন। ভাল ছেলে হিসেবেও এলাকায় সুনাম ছিল। তাঁর সুবীর মজুমদার এমএএমসি-র কর্মী ছিলেন। এ দিন বিকেলে ওই আবাসনের সামনে ছিল প্রতিবেশীদের ভিড়। তাঁরা জানান, বছরের প্রথম দিনেই হায়দ্রাবাদে একটি চাকরিতে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল শৌভিকের। প্রতিবেশী হিরক রায়, রাজা গুণেরা বলেন, “এমএএমসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কর্মীদের মতোই সুবীরবাবুদেরও আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছিল। তার মধ্যেই পড়াশোনা করে এমবিএ পাশ করেছিল শৌভিক। ও কাজকর্ম শুরু করায় অবস্থা পাল্টাচ্ছিল। সব ভেসে গেল!”
চাকরির চিঠি পড়ে রইল ঘরেই।

এই সংক্রান্ত খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.