গত ছ’মাসে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও ) রাজ্যের সীমানা লাগোয়া নমনি অসম -সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হুমকি দিয়ে আদায় করেছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কেএলও -র কয়েকজন প্রথম সারির জঙ্গির নেতৃত্বে গত দু’বছর ধরে এই টাকা আদায়ের জাল বিস্তার করে কেএলও। ওই ছকে কেপিপি নেতা -কর্মীদের একাংশকে কাজে লাগানো হয়েছে বলেও পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ বাড়ছে। জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণের ঘটনার পর কেপিপি -র অন্যতম দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতারের পরে ওই সব তথ্য যাচাই করে দেখছে পুলিশ। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি শশীকান্ত পূজারি বলেন, “বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে কেএলও -র সঙ্গে কেপিপি -র এক শ্রেণির নেতা -কর্মীর যোগসাজশের অভিযোগ মিলেছে। কেএলও -র তোলা আদায়ের কাজে অনেকেই মদত দিয়েছে বলে অভিযোগ। বেশ কিছু নামও আমাদের হাতে রয়েছে।”
তবে কেএলও -র সঙ্গে কেপিপি -র নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ কেপিপি -র শীর্ষ নেতৃত্ব। মঙ্গলবার দলের সভাপতি অতুল রায় সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “পুরোটাই সরকার এবং পুলিশের চক্রান্ত।” অতুলবাবুর দাবি, “আমরা গণতান্ত্রিক পথে রাজ্য এবং ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করছি। হিংসাত্মক কার্যকলাপ আমরা সমর্থন করি না। আমাদের আন্দোলন নষ্ট করে দেওয়ার জন্য নানা নেতার নামে অভিযোগ তুলে চক্রান্ত চলছে।”
পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ, অসমের ধুবুরি, কোকরাঝাড় ছাড়াও এ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার, ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ি, কোচবিহার, তুফানগঞ্জ, মালদহ, কুমারগ্রাম এলাকা থেকে ওই ৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রায় ১০টি অভিযোগ পুলিশের হাতে আসে। সেখানে রেলের ঠিকাদার, কলেজের অধ্যক্ষ, পাইকারি ব্যবসায়ীরা রয়েছে। সমস্ত অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে পুলিশের কাছে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়।
সম্প্রতি বিস্ফোরণের পর রাজ্য সরকারের কড়া মনোভাবের পর আরও কিছু ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদার টাকা আদায়ের জন্য হুমকি পাওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছেন। সেই সুবাদে কোথা থেকে টাকা আদায় হয়েছে তা নিয়েও স্পষ্ট কিছু তথ্য মিলেছে বলেও পুলিশের দাবি। পুলিশের তদন্তকারী দলের এক অফিসার জানান, মূলত চারটি দল করে চার ভাগে ওই টাকা আদায় করা হয়েছে। তার পরে ‘বিশ্বস্ত’ লিঙ্কম্যানের মাধ্যমে তা কেএলও শিবিরে পৌঁছেও দেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, প্রথমে এলাকার বিত্তশালী লোক বা কার কাছে টাকা রয়েছে, কে জমি বা ফসল বিক্রি করে সম্প্রতি টাকা পেয়েছেন বা কার ব্যবসার সুবাদে প্রচুর আয় হচ্ছে, এই সুনির্দিষ্ট তথ্য জোগাড় করার জন্য এক শ্রেণির লোককে ব্যবহার করা হয়েছে। এর পরে জোগাড় করা হয় টেলিফোন নম্বর। এই খবর দেওয়ার জন্য টাকা দেওয়া হয়। গোয়েন্দারা প্রাথমিক ভাবে যে সন্দেহ করছেন, তা হল, তোলা আদায়ের টাকা অস্ত্র বা বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং রোজকার খরচের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রেও একই তথ্য জানা গিয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, ২০১১ সালে কেএলও -র প্রথম সারির কয়েকজন জঙ্গি জামিন পাওয়ার পরে ফের তোলা আদায়, অস্ত্র প্রশিক্ষণের ছক কষে উত্তরবঙ্গে জাল বিছোতে আসরে নামেন। |