কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) কার্যকলাপ দমনে পশ্চিমবঙ্গকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিল কেন্দ্রীয় সরকার। আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কেএলও-র বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপকে কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। অন্য কোনও শক্তি যাতে এই ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গকে সমস্যায় না ফেলে, সেটা দেখার জন্য কেন্দ্রকে এ দিন অনুরোধ করেছেন মমতা।
গত কয়েক দিন ধরেই কেএলও উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, কেএলও-কে মদত দেওয়ার জন্য বাইরের কিছু শক্তি সক্রিয়। রাজ্যের গোয়েন্দাদের কাছে এমন রিপোর্টও এসেছে যে, অসম থেকে কিছু জঙ্গি কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে আত্মগোপন করেছে।
মমতার অভিযোগ, ওরা রাজবংশীদের রাজনৈতিক আন্দোলনকে জঙ্গি সন্ত্রাসের পথে নিয়ে যেতে চাইছে। মমতা এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে বলেন, “৩৪ বছরের বাম শাসনে ওই এলাকা অবহেলিত হয়েছে। ফলে সেখানে কামতাপুরি এবং রাজবংশী সত্ত্বার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এটা দূর করার এক মাত্র উপায় হচ্ছে সেখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। সেটা করতে রাজ্য বদ্ধপরিকর।” পরে উত্তরবঙ্গের বিস্ফোরণ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ মুখে মানবাধিকারের কথা বলবে, আর গিয়ে খুন করে আসবে, তা হতে পারে না।”
বৈঠকে অনিল গোস্বামী মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, বিহার, অসমের কিছু অংশ এবং উত্তরবঙ্গ মূলত এই তিনটি এলাকায় জঙ্গিরা সম্প্রতি সক্রিয় হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আরও ২টি রাজ্য যে হেতু যুক্ত, তাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও রাজ্যওয়াড়ি দৃষ্টিভঙ্গী নিচ্ছে এই সমস্যার সমাধানের জন্য। আপাতত ঠিক হয়েছে, অসম পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নমনি অসম এবং উত্তরবঙ্গে যৌথ টহলদারি চালাবে দুই রাজ্যের পুলিশ।
উত্তরবঙ্গের সমস্যার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের বক্তব্য, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় স্কিমের মাধ্যমে সেখানে আর্থিক সহায়তা বাড়ানো হবে।
এ ব্যাপারে রাজ্যও যাতে তার ম্যাচিং গ্রান্ট দিতে পারে, সে জন্য অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। রাজ্য ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা এই অনুদান দিতে আগ্রহী। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে একাধিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নিতে চায় রাজ্য সরকার।
বস্তুত জঙ্গলমহলের মতো উত্তরবঙ্গেও উন্নয়নের অস্ত্রেই বাজিমাত করতে চায় রাজ্য। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে বলেন, “আমরা ঠিক করেছি, জঙ্গলমহল মডেল উত্তরবঙ্গেও কার্যকর করা হবে। এক দিকে রাজনৈতিক ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ করা হবে, অন্য দিকে প্রশাসনিক ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবিলা করা হবে।”
জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ ও কেএলও-র সাম্প্রতিক সক্রিয়তার পিছনে রাজ্যের বাইরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনিও। কেএলও-র পিছনে নেপাল বা বাংলাদেশের কোনও জঙ্গি সংগঠন রয়েছে কি না জানতে চাইলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “সব কথা আমি বাইরে বলতে পারি না। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।”
গৌতম দেব এ দিন জানান, আগামী ২০ জানুয়ারি শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের সচিবালয়ের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সচিবালয় ভবনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘উত্তর কন্যা’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এর নামকরণ করেছেন। |