কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সঙ্গে (কেএলও) ‘সম্পর্ক’ দূর অস্ত্ উল্টে তাদের গায়ে ‘জঙ্গি সংগঠনের’ তকমা এঁটে দিলেন কামতাপুর পিপলস্ পার্টির (কেপিপি) সভাপতি অতুল রায়।
জলপাইগুড়ির বজরাপাড়ায় বিস্ফোরণ এবং মালদহের পাকুয়াহাটে যাত্রিবাহী বাসে গুলি চালানোর ঘটনায় কেএলও’র সঙ্গে কেপিপি’র-ও যোগসাজশ স্পষ্ট বলে দিন কয়েক ধরেই দাবি করছিলেন গোয়েন্দারা। স্বতন্ত্র কামতাপুর গড়ার লক্ষ্যে ওই দুই সংগঠন ফের হাত মিলিয়েছে, জলপাইগুড়ি ও মালদহ দুই জেলার গোয়েন্দা পুলিশের সেই দাবিকেই এ দিন কার্যত উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের আদ্যন্ত এক ‘গণতান্ত্রিক’ সংগঠন বলেই দাবি করলেন কেপিপি প্রধান।
ধৃত কেপিপি নেতা
দীপঙ্কর সিংহ।
|
কেপিপি সভাপতি
অতুল রায়।
|
এ দিন শিলিগুড়িতে রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে অতুলবাবুর দাবি, “নাশকতার সঙ্গে জড়িত কোনও সংগঠনের সঙ্গেই আমাদের সংস্রব নেই। কেএলও’র থাকতে পারে। তারা একটি জঙ্গি সংগঠন। তাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সর্বাত্মক পুলিশি অভিযান চালালেও আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তা বলে আমাদের নিরীহ সমর্থকদের গ্রেফতার করা হচ্ছে কেন?” এ ব্যাপারে তিনি কাঠগড়ায় তুলছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে। মন্ত্রীকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তিনি। অতুল বলেন, “ভারতীয় আইন অনুসারে তফসিলি জাতি বা উপজাতির কাউকে বিনা দোষে হয়রানি করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। গৌতমবাবুর পরামর্শেই পুলিশ আমাদের সমর্থকদের উপরে চড়াও হচ্ছে। তাই তাঁকেও গ্রেফতার হওয়া উচিত।”
মন্ত্রীর গ্রেফতার-সহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ১০ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গের ৬টি জেলায় জেলাশাসকের দফতরের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিও এ দিন ঘোষণা করে দেন তিনি। তবে, জেলা প্রশাসন অনুমতি না দিলে ২০ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ বনধের হুমকিও দিয়েছেন অতুল। তিনি জানান, কামতাপুর গড়ার প্রশ্নে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে আলোচনার দাবি জানালেও সাড়া পাননি। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার আমাদের অস্বীকার করছে। আমরা গণতান্ত্রিক দল। নির্বাচনে আমাদের মনোনীত প্রার্থীরা লড়াই করে। আমাদের সঙ্গে রাজ্য সরকারকে বসতেই হবে।”
গৌতম দেব অবশ্য এ নিয়ে কোনও পাল্টা মন্তব্যে যাননি। তিনি বলেন, “যে যাই বলুক, কেপিপিকে কোনও রকম সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।”
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কেএলও’র সঙ্গে তাদের আঁতাঁত প্রকাশ্যে এসে পড়াতেই এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে ওই মন্তব্য অতুলের। গৌতম দেবকে গ্রেফতারের দাবিও তাদের পাল্টা কৌশল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “পাল্টা চাপ দিতেই এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেছেন অতুল। তবে কেএলও-কেপিপি আঁতাঁত নিয়ে আমরা নিশ্চিত। যোগসাজশের খবর পেলেই আমরা গ্রেফতারও করব।”
জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে এ দিন আরও এক কেপিপি নেতাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার রাতে শিলিগুড়ি মহকুমার খরিবাড়ির গুরুদয়ালজোত এলাকা থেকে ধৃত ওই নেতার নাম দীপঙ্কর সিংহ। পুলিশ জানিয়েছে, দীপঙ্কর কেপিপি’র দার্জিলিং জেলার মুখ্য সংগঠক। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, বিস্ফোরক রাখা ও বিস্ফোরণ ঘটানো-সহ অপহরণ, তোলা আদায়ের মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা আদালত।
বর্ষশুরুর দিনে ফের কোনও নাশকতার চেষ্টাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। উত্তরবঙ্গ জুড়ে তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও মালবাজার মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় সিআরপিএফ মোতায়েন করা হয়েছে। জাতীয় সড়ক, বাজার এবং শহরের ব্যস্ত এলাকায় কড়া নজরদারিও চলছে।” জঙ্গিদের গতিবিধি জানতে বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই ৫ হাজার ৪০০ জন সিভিক পুলিশ নিয়োগেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। |