বারবার গণধর্ষণ, হুমকি, কুৎসা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আত্মাহুতির পথ নিয়েছিল মেয়েটি। কিন্তু মৃত্যুতেই বা রেহাই কই! তার দেহ নিয়ে টানাপোড়েন চলল রাতভর। মৃতদেহ ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। তার উপরে ডেথ সার্টিফিকেটের অভাবে আটকে থাকল সৎকার। নিমতলাঘাট শ্মশানে মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শববাহী গাড়িটি। রাত ১টা ২৫ মিনিট নাগাদ শ্মশানে বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ দেহ-সহ গাড়িটি নিয়ে চলে যায় মৃতার বাড়িতে।
মধ্যমগ্রামের অগ্নিদগ্ধ কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে মঙ্গলবার সারা দিন আর জি কর হাসপাতালে টানাপোড়েন, রাস্তা অবরোধের পরে সন্ধ্যায় ময়না-তদন্তের পরে দেহটি হাতে পায় তার পরিবার। ভাবা হয়েছিল, সমস্যা বোধ হয় মিটল। সৎকারের পরে উত্তেজনা কমবে। কিন্তু কোথায় কী! মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে নতুন সঙ্কট।
অভিযোগ, শববাহী গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে নিমতলা শ্মশানে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। কিন্তু মৃতার পরিবারের কেউ সেই গাড়ির সঙ্গে ছিলেন না। ছিল না মৃতার ডেথ সার্টিফিকেটও। শ্মশানে নিয়ে গিয়েও তাই সৎকার করাতে পারেনি পুলিশ। শ্মশানের বাইরে মৃতদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারা।
কিশোরী অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পরে তার পরিবারের অভিযোগ ছিল, মধ্যমগ্রাম এবং বিমানবন্দর থানার পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। মৃত্যুর পরে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল কিশোরীর মৃতদেহ ছিনতাই করার। সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর অভিযোগ, সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অনৈতিক ভাবে দেহটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিশোরীর ডেথ সার্টিফিকেট দেখিয়ে শ্যামলবাবু অভিযোগ করেন, “আসল ডেথ সার্টিফিকেট আমাদের কাছে। ওরা কী নিয়ে দেহের সৎকার করছে? ওটা কি তা হলে জাল সার্টিফিকেট?”
ডেথ সার্টিফিকেট জাল কি না, শ্যামলবাবু তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও নিমতলা শ্মশানে পুলিশের কাছে কোনও ডেথ সার্টিফিকেটই ছিল না। প্রশ্ন উঠেছে, কলকাতা পুলিশ মৃতার পরিবারের সম্মতি ছাড়াই কী ভাবে নিমতলা শ্মশানে মৃতদেহ নিয়ে গেল?
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্রের দাবি, “স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে মৃতার পরিবারের কথা হয়েছে। তার পরেই নিমতলা শ্মশানে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়।” পুলিশের বিভিন্ন কর্তা মৃতার বাড়িতে যান তার পরিবারের লোকেদের বোঝাতে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও ভিড় করেন। কিন্তু মৃতার পরিবারকে নিমতলা শ্মশানে যেতে রাজি করানো যায়নি।
বর্ষবরণের রাতে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে যখন হুল্লোড় চলছে, নিমতলা শ্মশানের সামনে তখন দাঁড়িয়ে একটি শববাহী গাড়ি। তার ভিতরে সাদা চাদরে ঢাকা এক কিশোরী। গাড়ি ঘিরে ঠায় দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মীরা। গভীর রাতে মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে এক দল লোক শ্মশানে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রশ্ন তোলেন, পরিবারের সম্মতি ছাড়া পুলিশ কী ভাবে দেহ আনল শ্মশানে? বচসা শুরু হয়। কিছু পরে পুলিশ শববাহী গাড়িটি নিয়ে মেয়েটির বাড়ি চলে যায়। পরিবারের লোকজন দরজা খোলেননি। মৃতদেহ নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশ। |