কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন এবং কামতাপুর পিপলস পার্টির যোগসাজশের খবর মিলছিল কিছু দিন ধরেই। জলপাইগুড়ি ও মালদহ কাণ্ডে ধরপাকড়ের পরে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সে কথাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মগোপন করে থাকা কেএলও জঙ্গিদের সঙ্গে কেপিপি নেতাদের একাংশের ‘ঘনিষ্ঠতা’ স্পষ্ট। পুলিশের দাবি, তারই ভিত্তিতে রবিবার কোচবিহার থেকে কেপিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক নুবাস বর্মন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি সুভাষ বর্মনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার নুবাসকে জলপাইগুড়ি ও সুভাষ বর্মনকে মালদহ আদালতে হাজির করানো হলে দু’জনেরই ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন দুই বিচারক।
জলপাইগুড়ি বিস্ফোরণ কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন কেএলও সদস্য চন্দন রায়কে রবিবার গ্রেফতার করে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ। ২০০৩ সালে ভুটানে সেনা অভিযানের সময় ধরা পনেছিল চন্দন ওরফে জ্যাকি। গ্রেফতারের পরে তার মোবাইলের সূত্র ধরেই কেপিপি নেতা নুবাস বর্মনের নাম উঠে আসে। বিস্ফোরণের আগে এবং পরে একাধিক বার চন্দনের সঙ্গে ধৃত ওই কেপিপি নেতার মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও, ২০০২ সালে কেএলও লিঙ্কম্যান অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল সুভাষকে। পুলিশের সন্দেহ, প্রাক্তন কেএলও লিঙ্কম্যান বর্তমানে কেপিপির এই শীর্ষ নেতা নতুন করে কেএলও-র সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্বে রয়েছে। জলপাইগুড়িতে বিস্ফোরক পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও তার তত্ত্ববধানে হয়েছিল বলে নুবাস পুলিশের জেরায় কবুল করেছে। এমনই দাবি জেলা পুলিশের।
অন্যদিকে, মালদহে বাসে গুলি চালানোর ঘটনায় কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুভাষ বর্মনকে গ্রেফতারের পরে তাকে জেরা করে জানা গিয়েছে কেএলও নেতা মালখান সিংহের সঙ্গে সুভাষের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। মালদহ জেলা পুলিশ সূত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে। এমনকী বাসে গুলি চালানোর আগের দিন মালখানের সঙ্গে সুভাষের বৈঠকও হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
তবে, কেপিপির সভাপতি অতুল রায়ের অভিযোগ, “আমাদের সঙ্গে কোনও নাশকতাকামী সংগঠনের যোগ নেই। নতুন সরকার আসার পরে দাবির পূরণ হয়নি ঠিকই। তবে আমরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আন্দোলনে নেমেছি। সে জন্যই চক্রান্ত করে আমাদের উপরে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, পৃথক রাজ্যের দাবিতে স্থানীয় ভাবে সভা-মিছিল করার নরম-পন্থার বিরোধী ছিলেন নুবাস। দলের অন্দরে এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্যও হয়েছিল বেশ কয়েক বার। অসম এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি সংগঠনকে নিয়ে ‘সেপারেট স্টেট ডিমান্ড কমিটি’র অন্যতম নেতাও হয়ে উঠেছিল সে। সম্প্রতি সে ওই কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ওই কাজে দিন কয়েক আগে দিল্লিও গিয়েছিল সে। দলের বৈঠকে নিজেকে সে ‘প্রাক্তন সেনাকর্মী’ বলেই পরিচয় দিত নুবাস। নুবাস অবশ্য এ দিন বলেন, “জলপাইগুড়িতে বিস্ফোরণের নিন্দা করেছি আমি। এ ধরনের কোনও ঘটনায় আমি জড়িত নই। আর পুলিশ কিনা সেই অভিযোগেই আমাকে গ্রেফতার করেছে!” মালদহ আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে একই সুরে অভিযোগ করেছেন কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারি সভাপতি সুভাষও। পুলিশের সামনেই তিনি চিৎকার করে বলেন, “আমার সঙ্গে মালখান সিংহের সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। মালখান আমাকে খুনও করতে চেয়েছিল। পুলিশ ওই গুলি চালনার কোনও সূত্র খুঁজে না পেয়ে মিথ্যা অভিযোগে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
আদালত চত্বরে সুভাষের মেয়ে স্মিতাদেবীকেও এ দিন উত্তেজিত হয়ে বলতে শোনা যায়, “বাবার উপর অত্যাচার বন্ধ না হলে আমরা পুরো পরিবার অস্ত্র ধরতে বাধ্য হব।” আদালতে দাঁড়িয়েই ধৃত কেপিপি নেতার স্ত্রী সুমতিদেবী বলেন, “পুলিশ মালখান সিংহকে ধরছে না। অথচ আমার স্বামীকে পুলিশ এই নিয়ে ১২ বার গ্রেফতার করল।” যা শুনে মালদহ জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কে কী বলছে, আগে খতিয়ে দেখি। তার পরে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |