আপ-ভাবনা দূরে, মমতা এগোতে চান ‘আপন’ ঢঙে
দেড় দশক পার করে এসে দলকে আরও যুগোপযোগী করে তুলতে চান তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে রাখতে এক দিকে তাঁর পরিকল্পনা, তৃণমূলকে আরও প্রযুক্তি-বান্ধব করে তোলা। তেমনই লক্ষ্য, সামনের লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী তালিকায় সমাজের বিভিন্ন অংশের আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। আর সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল নেত্রী চাইছেন, কাজ করে দেখানোর প্রশাসনিক মন্ত্র যেন দলেও অনুসৃত হয়। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সাফল্য ঘিরে হইচইয়ে মাথা না-ঘামিয়ে তাঁর দল যেন আরও আম আদমির প্রতি নিবেদিতই থাকে।
রাত পোহালে ক্যালেন্ডারে ইংরেজি নববর্ষ। সেই সঙ্গেই তৃণমূলের ১৬তম বর্ষপূর্তি। দলের প্রতিষ্ঠা দিবস জেলায় ও ব্লকে ব্লকে প্রতি বছরের মতোই উদযাপিত হবে। লোকসভা ভোটের বছরে দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি তৃণমূল নেত্রীর মূল বার্তা তোলা থাকবে ৩০ জানুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশের জন্য। তৃণমূল সূত্রের ইঙ্গিত, ব্রিগেডের মঞ্চ থেকেই দলের প্রযুক্তি সড়গড় হয়ে ওঠার আরও প্রমাণ দিয়ে কিছু ঘোষণা করবেন মমতা। মাত্র এক বছর চার মাস আগে সোশ্যাল সাইটে আবির্ভূত হয়ে সাইবার স্পেসে এখনই ঈর্ষণীয় জায়গায় তৃণমূল নেত্রী! তাঁর দল এখন গুরুত্ব দিচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রি আদানপ্রদানে যাতে পাড়ার চায়ের দোকান থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পর্যন্ত মানুষের কাছে দ্রুত লয়ে একই ভাবে পৌঁছে যেতে পারে তৃণমূলের বার্তা। এই ধারা বজায় রেখেই আরও কিছু ঘোষণা হবে মমতার তরফে।
ইন্টারনেট দুনিয়ায় মূলত তরুণ প্রজন্মকে ধরে রাখার তাগিদে এই পরিকল্পনার পাশাপাশিই একেবারে ময়দানের রাজনীতির জন্যও তৃণমূলের অন্দরে পুরোদমে চলছে হোমওয়ার্ক। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “গত বারই সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে লোকসভায় প্রার্থী বাছাই করেন দলনেত্রী। এ বার সেই ভারসাম্যই থাকবে আরও ভাল ভাবে।” তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, ইদানীং যে মন্ত্রে নিজের প্রশাসন সামলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা, সেই একই কর্তব্য ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে দলের জন্যও। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে কাজ করো, নিজেদের দায়িত্ব পালন করো, না-পারলে পথ দেখো স্পষ্ট বার্তা নেত্রীর! মানুষের ভোটে জিতে লোকসভায় গিয়ে কাজের কাজ করতে পারবেন, গত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এমন মুখই বেছে নেওয়া হবে।
তাঁর নিজের সহজ-সাধারণ ভাবমূর্তি এবং সকলের জন্য তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ, এই দুই ভিতে ভর করেই নতুন বছরে বাংলার গণ্ডির বাইরে দলকে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন মমতা। তৃণমূলের ১৫ বছরের মধ্যে ১০ বছর সঙ্গে আছেন পেশায় ক্যুইজ মাস্টার ডেরেক ও’ব্রায়েন। অধুনা দলের রাজ্যসভার সচেতক। ডেরেক বলছেন, “তৃণমূল নেত্রীর লম্বা লড়াইয়ের অধ্যায়ে তাঁকে খুন করার চেষ্টাও হয়েছে! সেই ১৯৯৮ সালে স্বাধীন দল যখন গড়েন, কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তিনি দল, আন্দোলন এবং শেষে জনমত গড়ে তুলতে পেরেছেন। এখন তাঁর লক্ষ্য, তাঁর চারপাশটাকেই সেই ভাবে গড়ে নেওয়া।” যেখানে অশান্তি থাকবে না, ভাল কাজের জন্য পুরস্কার থাকবে। ভুল করলে তিরস্কারও।
কিন্তু তাঁদের এই সংগঠন বিস্তারের পরিকল্পনার সময় দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাফল্য কি কোথাও অস্বস্তির কারণ হতে পারে? যে হেতু চাল-চলন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান এবং কাজের ধরনে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর মিল পাওয়া যাচ্ছে? তৃণমূল নেতৃত্ব এমন তুলনায় ঢুকতেই নারাজ। ডেরেকের বক্তব্য, “আপ একেবারে নতুন এসেছে। তাদের সম্পর্কে কিছু বলতে হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে।” একই সুরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলছেন, “অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেই মমতা সাফল্য পেয়েছেন। এ রাজ্যের মানুষের মনে তাই আপ দাগ কাটতে পারবে কি না, সময়ই বলবে!”
আপ সম্পর্কে কোনও মূল্যায়নে না গেলেও দেড় দশক পার করে এসে ফিরে দেখতে গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব একটি বিষয়ে তৃপ্তি পাচ্ছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়, পি চিদম্বরম থেকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, নানা সময়ে নানা নেতা কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়েও সুবিধা করতে পারেননি। শরদ পওয়ার এনসিপি-কে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেও তাঁকে চলতে হচ্ছে কংগ্রেসের কাঁধে ভর রেখে! সেখানে মমতা সিপিএমের মতো জাঁদরেল প্রতিপক্ষকে হারিয়ে, কংগ্রেসকে কোণঠাসা করে তাঁর রাজ্যে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠতে সফল হয়েছেন। দিল্লিতে কেজরিওয়ালদের সাফল্য নিয়ে এখন হইচই চললেও দীর্ঘ ও কঠিন পথে রাজনৈতিক লক্ষ্যপূরণের মমতা-কাহিনি গোটা দেশেই বিরল, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.