পরীক্ষায় টোকাটুকিকে ঘিরে দৌরাত্ম্যের মোকাবিলায় পুলিশি দাওয়াই বাতলে দিল রাজ্য সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়লে এ বার থেকে সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে বলেন, নকল রুখতে আগামী মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থেকেই এই ব্যবস্থা বলবৎ হবে।
নকল করাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি রাজ্যের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোলমাল হয়। টুকতে বাধা দেওয়ায় ভাঙচুর হয় বেশ কিছু স্কুলে। টোকাটুকি ধরে ফেলায় আক্রান্ত হন কয়েক জন নজরদার-শিক্ষক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই সরকার নকল প্রতিরোধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, “মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নকল কিংবা অন্য কোনও রকম অসাধু উপায় অবলম্বন করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লে চরম শাস্তি হবে। এমনকী গ্রেফতার পর্যন্ত করা হতে পারে।”
ওই দুই পরীক্ষায় টোকাটুকির উপরে নজর রাখার জন্য শিক্ষা দফতর স্পর্শকাতর এলাকাগুলির প্রতিটি পরীক্ষা-হলে ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা করবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোনও পরীক্ষার্থী নকল করেও পরীক্ষা চলাকালীন ধরা না-ও পড়তে পারে। কিন্তু পরে যদি ভিডিও ক্যামেরায় দেখা যায় যে সে নকল করেছে, তা হলে তাকে চিহ্নিত করে পরবর্তী কালেও শাস্তি দেওয়া হবে। গ্রেফতারও করা হতে পারে।”
|
তিন দাওয়াই |
হাতেনাতে ধরা পড়লে গ্রেফতার। |
স্পর্শকাতর পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিডিওগ্রাফি। ভিডিও-য় নকল ধরা পড়লেও গ্রেফতার। |
পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছে ফোটোকপির দোকান বন্ধ। |
|
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১২ মার্চ। সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা পর্ব শেষ করার পথ ও পদ্ধতি ঠিক করতে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি, শিক্ষা দফতরের সচিব, স্কুল কমিশনার-সহ বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। টোকাটুকির মোকাবিলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানেই। এ দিনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে, পরীক্ষার দিনগুলিতে পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত সব ফোটোকপির দোকান বন্ধ রাখা হবে।
কোন কোন পরীক্ষা কেন্দ্র স্পর্শকাতর, কী ভাবে ঠিক করা হবে?
শিক্ষামন্ত্রী জানান, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিরা তাঁকে বলেছেন, রাজ্যে বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে আগে থেকেই চিহ্নিত করা আছে। ওই পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে বিভিন্ন সময়ে টোকাটুকিকে কেন্দ্র করে গোলমাল হয়েছে। সেখানে পরীক্ষার পুরো সময়টা ছাত্রছাত্রীরা কী রকম আচরণ করছে, নকল করছে কি না, তা ভিডিও ক্যামেরায় ধরে রাখা হবে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে উপদ্রুত এলাকা চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেই তালিকা পেলে ৬ জানুয়ারি রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এবং বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তালিকা অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে, তা ঠিক করা হবে ওই বৈঠকে। আর ভিডিওগ্রাফি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের।
পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার ফলেই কি রাজ্য সরকার এ বার এতটা সক্রিয় হচ্ছে?
মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, আগের সরকারের জমানায় টোকাটুকি হলেও তা বন্ধ করার জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত বছর টোকাটুকি অনেক কম হলেও তা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করতেই উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ব্রাত্যবাবু বলেন, “আমরা কোনও রকম ঝুঁকি নেব না।”
পরীক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য গত বছরের মতোই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের হেল্পলাইন চালু থাকবে। হেল্পলাইন খোলা রাখা হবে ২৪ ঘণ্টা। কোনও পরীক্ষার্থী সমস্যায় পড়লে অনলাইনে তাঁর সমস্যার কথা পর্ষদ ও সংসদকে জানাতে পারবেন। এমনকী অ্যাডমিট কার্ডে কোনও ভুল থাকলে অনলাইনেই সেই সমস্যা জানাতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা। সে-ক্ষেত্রে পর্ষদ এবং সংসদ ভুল সংশোধন করে সংশ্লিষ্ট স্কুলে অনলাইনেই সংশোধিত অ্যাডমিট কার্ড পাঠিয়ে দেবে।
মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে ৮ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রাজ্য দূষণ পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী ওই দুই পরীক্ষার তিন দিন আগে থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে লাউডস্পিকার বাজানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা দফতর। |