এগারো বনাম তেরো!
জিততে চাই ন’টা উইকেট, হাতে রান পড়ে পঁচাশি। জেতা-হারা পরে, বরং অনেক বেশি করে টিম রামনের ‘কুকর্ম’ বোঝাতে চলে আসছে উপরোক্ত লাইন।
এক দিকে, বাংলা। যারা এগারো জন খেলছে। অন্য দিকে, তামিলনাড়ু। যারা নাকি এগারো জন ক্রিকেটারের সঙ্গে দু’জন আম্পায়ারকেও খেলাচ্ছে!
অবাক হওয়ার নয়। চিপকের ধুলো ওড়ানো, লাল মাটির ‘খোঁয়াড়ে’ বাংলা বনাম তামিলনাড়ু গুরুত্বপূর্ণ রঞ্জি ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শেষে এমন অভিযোগই উঠে পড়ল বঙ্গ শিবির থেকে!
স্কোরকার্ড দেখলে বোঝা যাবে না। মনে হবে, তামিলনাড়ুর জেতা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। হাতে ন’টা উইকেট, দীনেশ কার্তিক (৫৬ ব্যাটিং) হাফসেঞ্চুরি করে অপরাজিত, ঘূর্ণি পিচ থেকে ফায়দা না তুলতে পেরে বঙ্গ স্পিনাররা টিমকে কোয়ার্টার ফাইনালের রাস্তা থেকে ছিটকে দিচ্ছেনসাদা চোখে তেমনই মনে হবে। কিন্তু বাংলা শিবির থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হচ্ছে যে, দিনের শেষে তামিলনাড়ুর দ্বিতীয় দিনের স্কোরকার্ড মোটেও ১০২-১ দেখাত না, যদি ঠিকঠাক আম্পায়ারিং হত। ঠিকঠাক আম্পায়ারিং হলে নাকি স্কোরটা ১০২-৪ দাঁড়ায়!
কারণদীনেশ কার্তিক দু’বার আউট ছিলেন। একবার পরিষ্কার এলবিডব্লিউ। একবার ক্যাচ ধরার পরও তাঁকে নট আউট ঘোষণা করা হয়েছে! বদ্রীনাথও (১৬ ব্যাটিং) এসেই নাকি এলবিডব্লিউ থেকে ‘মুক্তি’ পেয়ে গিয়েছেন আম্পায়ারের ‘বদান্যতায়’। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে তিনটে সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে গিয়েছে বাংলার। সন্ধেয় বাংলা টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে কেউ কেউ বলে দিলেন যে, একমাত্র বোল্ড ছাড়া আর কিছু পাওয়ার আশা না করাই ভাল। বোর্ড প্রেসিডেন্টের শহরে তাঁর ঘরের টিমের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ পাওয়া যে যাবে না, সেটা ধরে রাখা ছিল। কিন্তু ক্যাচ তুললেও যে আউট দেওয়া যাবে না, বোঝা যায়নি।
কিন্তু বাংলা দ্বিতীয় ইনিংসে এমন ব্যাটিংয়ের স্বপক্ষেও বা যুক্তি কোথায়?
মঙ্গলবার সকালে তামিলনাড়ুর বাকি চার উইকেট মাত্র উনিশ রানে ফেলে দেয় বাংলা। তামিলনাড়ুর প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় মাত্র ৮৫ রানে। অর্ণব নন্দী চারটে, সৌরাশিস লাহিড়ী তিনটে এবং ইরেশ সাক্সেনা দু’টো উইকেট পান। বাংলা কাঙ্খিত লিডও পেয়ে যায় ৪৫ রানের। যার পর দরকার ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে একটু ধৈর্য ধরে খেলা। বা রান তোলার জন্য বল্গাহীন আক্রমণের রাস্তায় যাওয়া। যে দু’টো কাজ সুদীপ চট্টোপাধ্যায় এবং অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল ছাড়া কেউ করে দেখাতে পারেননি। ৮২ বল খেলে সুদীপ ৩৯ করে যান। আর মাত্র ২৫ বল খেলে ৪৬ করে যান লক্ষ্মী। পাঁচটা বাউন্ডারি আর দু’টো ওভার বাউন্ডারি মেরে। কিন্তু বাকি আট জনের মধ্যে একমাত্র সৌরাশিস লাহিড়ী ছাড়া কেউ দু’অঙ্কের ঘরে ঢুকতে পারেননি। মাত্র চল্লিশ ওভারে শেষ হয়ে যায় বাংলার দ্বিতীয় ইনিংস। ১৩৯ রানে।
যা অবস্থা, তাতে অলৌকিক কিছু না ঘটলে বুধবারই ম্যাচ শেষ হচ্ছে। বাংলা জিতবে না হারবে? বাংলা অধিনায়ক বলছেন, জিতে মাঠ ছাড়বেন। টিমে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলে। কিন্তু হেরে গেলে রামনের অর্ডারি ‘ধানখেত’ ও আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ যতটা কারম হিসেবে প্রাধান্য পাবে, ঠিক ততটাই কিন্তু দ্বিতীয় কারণ হিসেবে উঠে আসবে বাংলার পরপর দু’টো ইনিংসে দেড়শোর কমে আউট হয়ে যাওয়া।
কে না জানে, টার্গেটটা আড়াইশো হলে কাহিনিই অন্য রকম হত। যেটা বাংলা শিবিরও মেনে নিচ্ছে।
|