দেশের এক নম্বর অলরাউন্ডারই তো
দলে নেই, সাবা বৈঠকে করছে কী
তুন বছরের প্রথম দিনটাই বলে দেবে এ মরসুমের রঞ্জিতে বাংলার ছুটি হয়ে যাবে কি না! দলটার ছুটি হয়ে গেলে কোচ হিসেবে অবশ্যই প্রচণ্ড কষ্ট পাব। তবে তার আগে পুরনো বছরের শেষ দিনটাও প্রাক্তন বাংলা ক্রিকেটার হিসেবে আমার কাছে হৃদয়বিদারক হয়ে থাকল। জাতীয় দলে বাংলার সেরা দু’জন ক্রিকেটারকে চূড়ান্ত বঞ্চিত হতে দেখে।
চেন্নাইয়ে বসে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য ভারতের যে ওয়ান ডে দল জানলাম তাতে আমি স্তম্ভিত বললেও কম বলা হবে। আচ্ছা, নির্বাচনী মিটিংয়ে কি সাবা করিম ছিল? থাকলে ওর কি একবারের জন্যও লক্ষ্মীরতন শুক্ল আর অশোক দিন্দা নাম দুটো মনে পড়েছিল? মুম্বইয়ের বৈঠকে সাবা আদৌ কোনও কথা বলেছে.কি?
অলরাউন্ডার স্লটে এই মুহূর্তে এলআরএস-কে টপকে কী ভাবে স্টুয়ার্ট বিনি ভারতের একদিনের টিমে আসে? বা, পেস বোলিং স্কোয়াডে দিন্দার আগে বরুণ অ্যারন? মাথায় ঢুকছে না!
জাতীয় দলে মহম্মদ শামি আর ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়মিত দেখে অনেকে হয়তো বলবেন, পূর্বাঞ্চলের জাতীয় নির্বাচক তো বাংলার প্লেয়ারের হয়ে মিটিংয়ে কথা বলছে! কিন্তু শামি-ঋদ্ধিমানকে ভারতীয় দলে রাখতে সাবাকে কিছু না বললেও চলবে। শামি ধোনির দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। আর দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে ধোনি ওর সিএসকে টিমমেটকে বিদেশে ঘোরাতে নিয়ে যাবেই। সাবা কি ঋদ্ধিকে টেস্টে খেলাতে পেরেছে?
যাঁদের নিয়ে বিতর্ক। মুম্বইয়ের নির্বাচনী বৈঠকের পর দুই
নির্বাচক রজার বিনি (বাঁ দিকে) ও সাবা করিম। ছবি: পিটিআই।
আমি লক্ষ্মীরতন শুক্লর বাংলা টিমের কোচ হিসেবে কথাটা বলছি না, একজন প্রাক্তন আম্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে বলছি, ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে এই মুহূর্তে এক নম্বর অলরাউন্ডারের নাম লক্ষ্মীরতন শুক্ল। কিছু দিন আগেই ইডেনে গ্রিন টপে গতবারের রঞ্জি ফাইনালিস্ট সৌরাষ্ট্রের সঙ্গে ও যে সেঞ্চুরিটা করেছিল, কিংবা সোমবারই চিপকের ভয়ঙ্কর টার্নিং উইকেটে ৪৫ রানের যে ইনিংসটা খেলল, বিশ্বাস করুন সে রকম ব্যাটিং আমি অনেক দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও কোনও অলরাউন্ডারকে করতে দেখিনি! অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি এ মরসুমে প্রতিটা রঞ্জি ম্যাচে কমপক্ষে কুড়ি ওভার বল করেছে। দরকারের সময় ব্রেক-থ্রু দিয়েছে। যে কোনও দিন স্টুয়ার্ট বিনির চেয়ে লক্ষ্মীর বলের পেস বেশি। দারুণ অ্যাথলিট। দুর্দান্ত ফিল্ডার।
কেউ কেউ বলতে পারেন, আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে খেলার ক্ষেত্রে লক্ষ্মীর বয়সটা (৩৩ ছুঁইছুই) ওর বিপক্ষে যাচ্ছে। কিন্তু স্টুয়ার্ট বিনিও তো ৩০ ছুঁইছুঁই। অনেকে আবার এ-ও বলতে পারেন, লক্ষ্মীরতন তো সেই কবে ইন্ডিয়ার হয়ে খেলেছে! এত বছর বাদে আবার পিছন ফিরে তাকানোর কী দরকার? হ্যাঁ, ও নিরানব্বই সালে আজহারের টিমে গোটা তিনেক ওয়ান ডে খেলেছিল। তখন বয়স মাত্র আঠারো। রাতারাতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারফর্ম করার চাপটা ঠিক ভাবে সামলাতে পারেনি। সবাই তো আর সচিন তেন্ডুলকর নয়! কিন্তু অত কম বয়সে জাতীয় দলে খেলে ফেলার জন্য তো আর লক্ষ্মীকে দায়ী করা যায় না। সেই দায়টা ওকে যারা আচমকা সুযোগটা দিয়েছিল তাদের।
যেমন এ দিন লক্ষ্মীকে বঞ্চিত করে স্টুয়ার্ট বিনিকে যারা সুযোগ করে দিল দায়টা তাদের। স্টুয়ার্টের বাবা রজার বিনি বর্তমানে অন্যতম জাতীয় নির্বাচক। সেটাকে আমি কোনও ইস্যু ধরছি না। ছেলের সত্যিই যোগ্যতা থাকলে বাবা কমিটিতে আছে বলে তার নির্বাচন আটকাবে কেন? কিন্তু সেটা না হলেই প্রশ্ন উঠবে। এবং স্টুয়ার্ট বিনির চেয়ে এই মুহূর্তে দেশে ভাল অলরাউন্ডার আছে। এ মরসুমে রঞ্জির পরিসংখ্যানেই সেটা পরিষ্কার।
ঠিক যেমন পরিষ্কার বরুণ অ্যারন আর দিন্দার এ মরসুমে রঞ্জি পরিসংখ্যানে আমাদের ছেলের এগিয়ে থাকাটা। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, সদ্য চোট সারিয়ে উঠে বরুণ না হয় ঘরোয়া ম্যাচে খেলছে, কিন্তু ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার ধকল সইতে পারার মতো ফিট হয়ে উঠেছে কি? যখন টেস্টে আবির্ভাব ঘটেছিল বরুণের, ও-ই ছিল দেশের দ্রুততম পেসার। সেই পেস-ও ওর চোট-পরবর্তী বোলিংয়ে আছে কি না আমার সন্দেহ আছে। তা ছাড়া, সাম্প্রতিক কালে তরুণ ভারতীয় পেসারদের দস্তুরই হচ্ছে, চোট সারিয়ে ভারতীয় দলে ফিরলেও দুটো ম্যাচ খেলল কী পরের চারটে ম্যাচ ফের ব্যথা-বেদনায় বসে যাবে। দিন্দা কিন্তু শুধু একশো ভাগ ফিটই নয়, ইনিংসে সাত, ম্যাচে দশ উইকেটে নিচ্ছে এ মরসুমে রঞ্জিতে। নিউজিল্যান্ডের মতো পেসার সহায়ক সফরে ওকে না পাঠানোটা নির্বাচকদের স্রেফ অন্যায়।
তবে যুবরাজ সিংহকে বাদ দিয়ে নির্বাচকেরা মনে হয় ভুল করেনি। টেস্টে আগেই বাদ পড়েছে। এ বার ওয়ান ডে থেকেও বাদ পড়ায় মনে হচ্ছে যুবরাজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন কার্যত শেষ হয়ে গেল। আর ওর জাতীয় দলে ফেরা ভীষণই কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ান ডে সিরিজে রান পায়নি। দেশে ফিরে রঞ্জি ম্যাচেও এক-দুই করছে এখন। তবে গৌতম গম্ভীর সম্পর্কে একই কথা বলার সময় এখনও আসেনি। অনেক দিন ও জাতীয় দলের বাইরে। নিউজিল্যান্ডের দলেও ঢুকতে পারল না। দিল্লি রঞ্জি থেকে ছিটকে গেলে আর তেমন ঘরোয়া ম্যাচও পাবে না। কিন্তু একটা দারুণ আইপিএল খেলে দিলে ইংল্যান্ডের জন্য গম্ভীরের নাম আবার ভেসে উঠতেই পারে।

নিউজিল্যান্ডের উড়ানে
একদিনের দল: ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), ধবন, রায়না, কোহলি, রোহিত, রাহানে, স্টুয়ার্ট বিনি, জাডেজা, অশ্বিন, ভুবনেশ্বর, শামি, রায়ডু, ঈশ্বর পাণ্ডে, ইশান্ত, বরুণ অ্যারন ও অমিত মিশ্র।

টেস্ট দল: ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), বিজয়, ধবন, পূজারা, কোহলি, রোহিত, রাহানে, জাডেজা, জাহির, শামি, ইশান্ত, রায়ডু, ভুবনেশ্বর, অশ্বিন, উমেশ, ঋদ্ধিমান (দ্বিতীয় উইকেটকিপার) ও ঈশ্বর পাণ্ডে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.