বর্ষশেষের তিক্ততা: আপনারাই বুঝে নিন, বলছেন ক্ষুব্ধ লক্ষ্মী
বাংলা ছাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন হতাশ দিন্দা
প্রথম জন বোর্ডের গত বছরের বর্ষসেরা অলরাউন্ডার। চলতি রঞ্জি মরসুমে পাঁচশোর কাছাকাছি রান করে ফেলেছেন। দ্বিতীয় জন, সাড়ে তিনশোও পেরোননি। রানের গড়েও প্রথমের অনেক পিছনে।
তবু প্রথম জন নিউজিল্যান্ডগামী বিমান ধরবেন না। দ্বিতীয় জন ধরবেন, কারণ তিনি সফরের ওয়ান ডে টিমে আছেন।
প্রথম জন লক্ষ্মীরতন শুক্ল।
দ্বিতীয় জন স্টুয়ার্ট বিনি।
আরও আছে। এক জন পেসার ঝাড়খণ্ডের হয়ে রঞ্জি ট্রফির সপ্তম ম্যাচ খেলে উইকেট সংখ্যা কুড়ি। উল্টো দিকে, এক বঙ্গ পেসারের অষ্টম ম্যাচ চলছে। উইকেটসংখ্যা উনত্রিশ। জাতীয় নির্বাচকের সামনে ম্যাচে দশ উইকেটও আছে।
এঁরা বরুণ অ্যারন এবং অশোক দিন্দা। বঙ্গ পেসারের তুলনায় উইকেট কম, তবু তিনি আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের ভারতীয় দলের ওয়ান ডে টিমে। আর দিন্দা? তিনি জাতীয় দলের ধারেকাছে নেই!
আশ্চর্য বললেও বোধহয় কম বলা হয়। বঙ্গ ক্রিকেটাররা রান পাচ্ছেন, বেশি উইকেট পাচ্ছেন, লক্ষ্মী গত বছর বোর্ডের বর্ষসেরা অলরাউন্ডার, দিন্দা নিয়মিত উইকেট নিচ্ছেন, কিন্তু জাতীয় দলের আশেপাশে কোথাও নেই! অথচ কেউ আড়াই বছর পর চোট সারিয়ে সদ্য উঠে, কেউ তেমন রান না করে অনায়াসে টিমে ঢুকে পড়ছেন। প্রশ্ন উঠে পড়ছে, তা হলে রঞ্জি ট্রফির মতো ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলে লাভটা কী? প্রশ্ন উঠছে, টিমে ডাক পাওয়ার মাপকাঠি নিয়ে। পূর্বাঞ্চলের জাতীয় নির্বাচক সাবা করিমের নির্বাচনী বৈঠকে ভূমিকা নিয়ে। সিএবি মহাকর্তাদেরও কার্যকলাপ নিয়ে।
লক্ষ্মীরতন শুক্ল এবং অশোক দিন্দা বর্তমানে দু’জনেই চেন্নাইয়ে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতে ম্যাচ খেলতে ব্যস্ত। এবং নির্বাচনের নমুনা দেখে দু’জন ক্ষুব্ধও। বাংলা অধিনায়ক চেন্নাই থেকে ফোনে বললেন, “নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচকদের নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই। এ সব নিয়ে যত ভাবব, তত ম্যাচ থেকে ফোকাস আমার সরে যাবে। আমার কাজ তো রান করা। ম্যাচ জেতানো। সেটাই করি। বাকি সব আপনারা দেখছেন, বুঝে নিন।” অশোক দিন্দা বরং বেশি আক্রমণাত্মক, “আশা করেছিলাম ডাক পাব। গত দু’তিনটে রঞ্জি মরসুম ধরেই ভাল খেলছি, উইকেট পাচ্ছি। কিন্তু ইন্ডিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছি না। আমি তো জাতীয় নির্বাচকের সামনে সাত উইকেট তুলে দেখালাম। আর কী করতে পারি?”
সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে, দিন্দার বাংলা ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখছেন কেউ কেউ। শোনা গেল, ঘনিষ্ঠ মহলে তেমন ইঙ্গিতও নাকি দিয়ে ফেলেছেন বঙ্গ পেসার। হতাশায়। শোনা গেল, তিনি নাকি বলে ফেলছেন যে, বাংলা ছাড়ার কথা ভাবাটা তাঁর কাছে অত্যন্ত কষ্টের। কিন্তু যে ভাবে দিনের পর দিন ব্রাত্য থাকতে হচ্ছে পারফর্ম করেও, তখন রাজ্য বদলে কিছু করা যায় কি না, ভেবে দেখতে চান। দিন্দাকে এটা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সরকারি ভাবে সে রকম কিছু বলতে চাইলেন না। বললেন, “এখন ঠিক সময় নয় এ সব নিয়ে কথা বলার।” কিন্তু টিমের অন্দরমহল থেকে কড়া প্রশ্ন উঠছে দিনের পর দিন জাতীয় প্রেক্ষাপটে ক্রিকেটারদের ‘নির্যাতিত’ হতে দেখেও সিএবি কর্তাদের নিশ্চেষ্ট হয়ে থাকা নিয়ে। টিমের একাংশ থেকে বলা হচ্ছে, প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার রজার বিনি নির্বাচনী বৈঠকে ছেলেকে দিব্যি ঢুকিয়ে দিচ্ছেন টিমে। বাংলার ক্রিকেটারদের সেখানে পারফর্ম করেও বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে। সিএবি কর্তারা সব দেখেও দেখছেন না। ক্রিকেটে কম, প্রশাসনিক কুটনীতিতে তাঁদের বেশি আগ্রহ! উষ্মা প্রকাশ করে কেউ কেউ বলছেন, তামিলনাড়ুতে যে বাংলাকে ‘খোঁয়াড়ে’ ছেড়ে দেওয়া হল, বা নিশ্চিত আউটও যে দেওয়া হচ্ছে না, সে সব নিয়ে কারও মাথাব্যথা আছে?
বাংলার ক্রিকেটমহলও যা দেখে ক্ষুব্ধ। দিন্দা-লক্ষ্মীদের মর্যাদারক্ষায় সিএবি কী করবে, তা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বললেন, “আমি একটা মিটিংয়ে আছি। এটা নিয়ে কাল কথা বলব।” বোর্ডের ফিনান্স কমিটিতে থাকা সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে প্রকাশ্য ক্ষোভ দেখালেন। বললেন, স্টুয়ার্ট বিনির নির্বাচনে যদি রজার বিনি থাকতে পারেন, তা হলে নির্বাচনী বৈঠকে বাকি ক্রিকেটারদের বাবাকেও ডাকা উচিত ছিল! বলে দিলেন, “লক্ষ্মী বোর্ডের বর্ষসেরা অলরাউন্ডার হয়েছে। দিন্দা উইকেট নিচ্ছে। উচিত ছিল ওদের নেওয়া।” সিএবি কোষাধ্যক্ষ প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, বোর্ডের পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটিতে ব্যাপারটা তোলা হবে।
কিন্তু সে প্রতিশ্রুতিতে বঙ্গ ক্রিকেটমহলের বিশেষ ভরসা নেই!
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক গোপাল বসু যেমন। নির্বাচনী বৈঠকে লক্ষ্মী-দিন্দাদের ব্রাত্য থেকে যাওয়া এবং সিএবি-র ভূমিকা নিয়ে তাঁর চাঁচাছোলা বক্তব্য, “রজার বিনির তো উচিত ছিল বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়া। ওর ছেলের যখন নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।” এবং একটু থেমে বিস্ফোরণ, “আর বাংলা ক্রিকেটারদের ব্রাত্য থেকে যাওয়াটা নতুন কিছু নয়। সিএবি-র কারও সাহস নেই বোর্ডের বিরুদ্ধে একটা কিছু বলার। বললেই তো মোহিন্দর অমরনাথের দশা হবে। তাই বলে না। কর্তারা সবাই পাপেট হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীতে সব জায়গায় পরিবর্তন হয়, শুধু সিএবি বাদে। ক্রিকেটারদের অবস্থা তাই এখানে এ রকমই হবে।” প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক প্রণব রায় এতটা ফ্রন্টফুটে যেতে চান না। শুধু বললেন, “আমি নির্বাচনের খুঁটিনাটি এখন আর অত খেয়াল রাখি না। তবে কাউকে এখান থেকে সুযোগ পেতে হলে পূর্বাঞ্চলের নির্বাচককেও বৈঠকে বলতে হবে। সেটা বলা হচ্ছে কি না জানি না যখন, বেশি মন্তব্য করব না।” কিন্তু বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক এবং প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিলেন, “টি-টোয়েন্টি হলে বিনি চলত। কিন্তু ওয়ান ডে-তে লক্ষ্মী তো অটোমেটিক চয়েস।” সঙ্গে সেংযাজন, “আর যত দূর জানি, বরুণ অ্যারনকে গত আড়াই বছর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোথাও ছিল না। সে ঢুকে গেল?”
ছিন্দ্রান্বেষীদের কেউ কেউ আবার দিন্দাকে টপকে অ্যারনের সুযোগ পাওয়ার প্রেক্ষাপটকে একটু দীর্ঘায়িতও করছেন। বলে দেওয়া হল, অ্যারন যেমন ঝাড়খণ্ডের, সাবা করিমও তো তেমন ঝাড়খণ্ডের। অত বোঝার কী আছে?

বাংলার অলরাউন্ডার বনাম কর্নাটকের অলরাউন্ডার
লক্ষ্মীরতন শুক্ল এ মরসুমে অষ্টম রঞ্জি ম্যাচ খেলছেন। ৭ ম্যাচে রান ৪৯১। সর্বোচ্চ ১৫৫। গড় ৫৪.৫৫। সেঞ্চুরি ২, হাফসেঞ্চুরি ১। উইকেট ৬। সেরা বোলিং ২-৩৬, গড় ৫১.৮৩।


স্টুয়ার্ট বিনি রঞ্জিতে সপ্তম ম্যাচ খেলছেন। ৬ ম্যাচে রান ৩২১। সর্বোচ্চ ১১৪। গড় ৪০.১২। সেঞ্চুরি ১, হাফসেঞ্চুরি ১। উইকেট ১১, সেরা বোলিং ৩-৪৩, গড় ৩৫.৯০।


বাংলার পেসার বনাম ঝাড়খণ্ডের পেসার
অশোক দিন্দা এ মরসুমে অষ্টম রঞ্জি ম্যাচ খেলছেন। ৭ ম্যাচে উইকেট ২৯। ইনিংসে সেরা ৭-৮২। ম্যাচে সেরা ১০-১৫৭।
গড় ২৫.৬২
বরুণ অ্যারন রঞ্জিতে সপ্তম ম্যাচ খেলছেন। ৬ ম্যাচে উইকেট ২০। ইনিংসে সেরা ৪-৪২। ম্যাচে সেরা ৭-৬৮।
গড় ২১.৯৫।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.