শিখর ধবন আর রোহিত শর্মাকে নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তিত নই। খুব তাড়াতাড়ি ওরা নিজেদের প্রমাণ করে দেবে। কিন্তু এই ভারতীয় দলে কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যা আছে, যেগুলো বিদেশ সফরে ভারতকে বড় ধাক্কা দিতে পারে। আর মনে রাখবেন, ২০১৪ সালে কিন্তু প্রচুর বিদেশ সফর আছে টিম ইন্ডিয়ার।
চলতি অ্যাসেজ সিরিজ থেকে একটা তুলনা টানা যাক। প্রথম তিনটে টেস্টে ব্যাটসম্যান মিচেল জনসন (না, বোলার মিচেল জনসন নয়) ব্র্যাড হাডিনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে কয়েকটা চাপের পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল। ওদের ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে যা লিড পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তাতে ইংল্যান্ডকে সহজেই মাটির তলায় পুঁতে দেওয়া যায়। সিরিজের রাশটা অস্ট্রেলিয়ার হাতেই। আর এখন সিরিজ ৪-০, অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেও দেখতে পারেন। প্রথম টেস্টে ভার্নন ফিলান্ডার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ইনিংস খেলে ম্যাচটা ড্রয়ের দিকে নিয়ে গেল। তার পর দ্বিতীয় টেস্টে রবিন পিটারসেনের ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকাকে জিততে সাহায্য করল। বার্তাটা খুব সহজ: ভাল টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম এগারোর কেউই যেন স্রেফ পুতুলের মতো ব্যাট হাতে নিয়ে ক্রিজে না থাকে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন, যে টিমের টেলএন্ডার বিপক্ষকে নাকানিচোবানি খাওয়াতে পেরেছে, তারাই বড় টিম হিসেবে উঠে এসেছে।
ব্যাটসম্যানদের শুধু ব্যাট করতে হবে আর বোলারদের শুধু বল করতে হবে এই থিওরিটা মন্ত্রের মতো জপে যাওয়ার দিন কিন্তু চলে গিয়েছে। আজকের ক্রিকেটে আপনার দরকার এমন লোয়ার অর্ডার, যা অন্তত দেড়টা সেশন ক্রিজে পড়ে থাকতে পারবে। হাতে গোণা কয়েকটা ওভারে টিমের ল্যাজ গুটিয়ে গেলে এখন আর চলে না।
পরিসংখ্যান দেখলে ব্যাপারটা আরও ভাল করে বুঝতে পারবেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুটো টেস্টেই ভারতের শেষ পাঁচটা উইকেট খুব তাড়াতাড়ি পড়ে গিয়েছিল। ডারবান টেস্টের দুটো ইনিংস মিলিয়ে ভারতের চার বোলারের মোট রান মাত্র ১৮। ওয়ান্ডারার্সে চার বোলারের মিলিত রান ছিল ৫৫। সব মিলিয়ে বোলাররা পাঁচ বার শূন্য রানে আউট হয়েছিল। শক্ত ভিতের এ রকম অনুপস্থিতি কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং-জাহাজকেও ডুবিয়ে দিতে পারে।
সমস্যাটা আরও প্রকট হয়ে যাচ্ছে কারণ, এই চার-পাঁচ জনই এখন ভারতের সেরা বোলার। জাহির খান না মহম্মদ শামি, অশ্বিন না রবীন্দ্র জাডেজা কাকে বাদ দেবেন টিম থেকে? অশ্বিন আর জাডেজার কিন্তু অলরাউন্ডার হওয়ার ক্ষমতা আছে। যদিও বাউন্সি, সিম-সুইং করা পিচে ওদের টেকনিক নিয়ে যথেষ্ট খাটতে হবে।
এখন ব্যাটিংয়ের যা অবস্থা, তাতে পূজারা-কোহলি-রাহানের উপর খুব বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে। ধবন আর রোহিত যত তাড়াতাড়ি ফর্মে ফিরবে, তত ভাল। আরও ভাল হয় যদি দলের টেলএন্ডাররা রান করতে পারে। এর চেয়ে নির্দিষ্ট নীল নকশা আর কী হতে পারে?
ডারবান টেস্টের শেষ দিন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের কড়া ওষুধ গিলতে হল ঠিকই। তবু আমি বলব, ভারতের পক্ষে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক পাওয়া গিয়েছে এই সফরে। ভবিষ্যতে ভারত নিয়ে আগ্রহী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি।
|