শিখর ছোঁয়ার দিনে মন জুড়ে স্কুলেরই স্মৃতি
শীর্ষে পৌঁছেও ভুলে যাননি গোড়ার কথা। ভোলেননি সেই প্রতিষ্ঠানকে, যা এক কিশোরকে নিরন্তর জুগিয়ে এসেছিল উত্তরণের রসদ ও অনুপ্রেরণা। এ বার নিজের রাজ্যে এলে ছোটবেলার স্কুলটিতে এক বার তিনি পা রাখতে চান।
অরূপ রাহা।
দায়িত্ব গ্রহণের দিনে এমনটাই জানালেন ভারতের নতুন বায়ুসেনা-প্রধান অরূপ রাহা। মঙ্গলবার দিল্লি থেকে আনন্দবাজারকে টেলিফোনে বললেন, “ছোটবেলায় পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার উৎসাহ পেয়েছিলাম।” চাকরি জীবনের শিখরবিন্দুতে পৌঁছে তাঁর মন জুড়ে ওই দিনগুলোর স্মৃতি। অরূপবাবু জানিয়েছেন, বায়ুসেনা-প্রধান হিসেবে এর পরে যখন তিনি কলকাতা আসবেন, চেষ্টা করবেন এক বার স্কুলে ঘুরে আসার।
প্রাক্তনীর শিখরজয় উপলক্ষ্যে পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলেও উচ্ছ্বাসের ঢল। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ দিন সেখানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। মিষ্টিও বিলি হয়। “এটা আমাদের কাছে খুব আনন্দের খবর।” বলেন স্কুলের অধ্যক্ষ বিএস ঘোরপোড়ে। পাশাপাশি অরূপবাবুর পদপ্রাপ্তির দিনে আমবাঙালি ডুব দিয়েছে নস্ট্যালজিয়ায়। ১৯৬০-এ তদানীন্তন বায়ুসেনা-প্রধান সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অপমৃত্যু হয়েছিল। তার পরে এই চুয়ান্ন বছরে বিমানবাহিনীর কর্তৃত্বভার আর কোনও বাঙালির হাতে আসেনি। অরূপ রাহার হাত ধরে যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল।
অরূপবাবু নিজেও যেন খানিকটা নস্ট্যালজিয়ায় আক্রান্ত। আদতে বৈদ্যবাটির বাসিন্দা হলেও চাকরির সূত্রে দেশের নানা প্রান্তে থাকতে হয়েছে। তবু শিকড়ের টানে বছরে দু’বার ঘরে ফেরেন। মা ও ছোট ভাই এখনও কলকাতাবাসী। ফোনে জানালেন, নতুন দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরে শিগগিরই কলকাতায় আসার ইচ্ছে রয়েছে। স্মরণীয় দিনটির শরিক হতে নতুন এয়ার চিফ মার্শালের দিল্লির বাড়িতে সোমবার থেকেই জড়ো হয়েছিলেন নিকটজনেরা। চলে এসেছেন সদ্য ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিসে যাওয়া মেয়ে অনশ্রীও। কেমন লাগছে?
ফোনে বায়ুসেনা-প্রধানের গলা ভেসে এল, “খুব ভাল।”
বায়ুসেনা-সূত্রের খবর, ১৯৭৪-এ যুদ্ধবিমানের চালক হিসেবে বিমানবাহিনীতে যোগদান ইস্তক অরূপবাবুর কর্মজীবন রীতিমতো উজ্জ্বল। বায়ুসেনার মধ্য ও পশ্চিম কম্যান্ডের দায়িত্ব সামলেছেন। ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের এয়ার অ্যাটাশে-ও ছিলেন। নম্র ব্যবহারের সুবাদে বাহিনীর সর্বস্তরে তিনি জনপ্রিয়। টেকনিক্যাল বিভাগের এক প্রাক্তন বাঙালি কর্মীর মন্তব্য, “কাজের সূত্রে এক বার অরূপবাবুর কাছাকাছি এসেছিলাম। এত অমায়িক ব্যবহার খুব কম লোকের মধ্যে দেখা যায়। আজও দিল্লিতে দেখা হলে নিজে এগিয়ে এসে কথা বলেন।”
নতুন কর্মভার বুঝে নিতে অরূপবাবু এ দিন দুপুরে বায়ুভবনে যান, যেখানে আগে থেকে হাজির ছিলেন বায়ুসেনার বিভিন্ন কম্যান্ডের প্রধান-সহ উচ্চ কর্তারা। রীতি মেনে অরূপবাবুকে তাঁরা অভিবাদন জানান। ওঁদের সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রবেশ করেন বায়ুভবনে। সেখানে বিদায়ী বায়ুসেনা-প্রধান নরম্যান অনিলকুমার ব্রাউন স্বাগত জানান উত্তরসূরিকে। দু’জনে করমর্দন। এ বার বিদায়ী প্রধানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পালা। প্রথানুযায়ী নতুন প্রধানকে নিজের চেয়ার ছেড়ে দেন ব্রাউন, সরকারি কাগজপত্রে সই করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। অফিসারদের সঙ্গে ছবি তোলা সেরে বিদায়ী এয়ার চিফ মার্শাল বায়ুভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। গিয়ে ওঠেন দাঁড় করানো সুসজ্জিত মারুতি জিপসি’তে। রেওয়াজ মেনে সেটিকে দড়ি দিয়ে কিছুটা টেনে নিয়ে যান বায়ুসেনা-অফিসারেরা।
ন্যাক ব্রাউন প্রাক্তন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এ দিনই শুরু হয়ে গেল অরূপ রাহার জমানা। বায়ুসেনা-সূত্রের বক্তব্য: অরূপবাবু দায়িত্বটি পেলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। বিশেষত যেখানে ক’দিন আগেই বিস্তর জলঘোলা হয়েছে বায়ুসেনার ‘কপ্টার দুর্নীতি’ ঘিরে। তবে এই মুহূর্তে বাহিনীর সামনে পাখির চোখ হল আকাশ-প্রতিরক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ন। ডিসেম্বরে বিদায় নিয়েছে মিগ-২১এফএল বোমারু (লাগাতার দুর্ঘটনার দৌলতে যার নামই হয়ে গিয়েছিল উড়ন্ত কফিন)। বায়ুসেনার ডানা মজবুত করতে ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে সি-৩০জে সুপার হারকিউলিস মালবাহী বিমান। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান ‘তেজস’ বাহিনীতে সামিল হবে নতুন বছরে। দেশের নানা প্রান্তে নতুন নতুন ঘাঁটিও তৈরি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের পানাগড়ে যেমন গড়ে উঠছে সি-৩০জে সুপার হারকিউলিসের ‘বেস।’ উত্তরবঙ্গের সগাঁওয়ে নতুন বিমানঘাঁটি হচ্ছে, সেখানে একই সঙ্গে নানা ধরনের বিমান ও হেলিকপ্টার মোতায়েন রাখা যাবে (ফৌজি পরিভাষায়, কম্পোজিট এভিয়েশন বেস)।
বায়ুসেনার প্রধান হিসেবে এই উন্নয়নযজ্ঞের মূল কাণ্ডারী এখন অরূপবাবুই। গুরু দায়িত্ব পালনের শপথ গ্রহণের পরে এ দিন যাঁর মন্তব্য, “পূর্বসূরিদের দেখানো পথে এগিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য। আমাকে ভাল করে কাজ করতে হবে।” নববর্ষের শুভেচ্ছা শুনে হেসেও ফেললেন। “আমার আর আমার পরিবারের সকলের জন্য সত্যিই এটা শুভ নববর্ষ।”
বললেন ভারতের নতুন এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.