নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তায় দেবযানীর ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি ও ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল। তবে একই সঙ্গে, ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারের পথে যে তারা হাঁটবে না সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে আমেরিকা। এই ঘটনায় আমেরিকা ভারতের উপর চাপ বজায় রাখার পন্থা নিলেও একে এখনই বিশেষ আমল দিতে রাজি নয় ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এ দিন মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, সরকারের স্পষ্ট বিবৃতির জন্য অপেক্ষা করছে ভারত।
চলতি মাসেরই ১২ ডিসেম্বর ভরা রাস্তায় হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা হয় নিউ ইয়র্কে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিচারিকার ভিসায় মজুরি সংক্রান্ত ভুল তথ্য দিয়েছিলেন তিনি। বিদেশি কূটনীতিককে শুধু গ্রেফতার করেই ক্ষান্ত হয়নি ওবামা প্রশাসন, তাঁকে নগ্ন করে তল্লাশিও করা হয়। এমনকী তার পর ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মাদকাসক্তদের সঙ্গে এক কুঠুরিতে। এর পরই ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয় নতুন করে।
আমেরিকার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতে কর্মরত মার্কিন দূতাবাস কর্মী ও তাঁদের পরিবারের পরিচয় পত্র তলব করে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। এ দেশের বিমানবন্দরে তাঁরা যে বিশেষ সুযোগ-সুবিধে পেতেন, বাতিল করা হয় তা। বিদেশ থেকে আমদানি করা জিনিসের উপরও জারি হয় নিষেধাজ্ঞা। একই সঙ্গে ভারতের দাবি ছিল, দেবযানীর বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করুক আমেরিকা। ওই আইএফএস অফিসার যাতে পূর্ণ রক্ষাকবচ পান, তার জন্য তড়িঘড়ি তাঁকে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থায়ী কমিটিতে বদলিও করা হয়।
কিন্তু এত কিছুর পরও নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও সরতে নারাজ ওবামা-প্রশাসন। দেবযানী-মামলার পরবর্তী শুনানি ১৩ জানুয়ারি। সেই দিনের কথা মাথায় রেখেই তাঁর বিরুদ্ধে আরও প্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ২০১২-এর নভেম্বরে ভারত থেকে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক পরিচারিকাকে নিউ ইয়র্কে নিয়ে যান দেবযানী। মার্কিন বিদেশ দফতর জানিয়েছে, নিয়মমাফিক পরিচারিকার সঙ্গে একটা চুক্তি পত্র সই করে জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা জমা দেওয়ার পর সঙ্গীতার সঙ্গে দেবযানী আরও একটা চুক্তি করেন। আমেরিকার অভিযোগ, দু’জায়গায় দু’রকম তথ্য তো রয়েইছে, তার উপর আবার প্রথম চুক্তির অনেক শর্ত স্রেফ উল্লেখই করেননি দ্বিতীয়টি। দেবযানী আইনের তোয়াক্কা করেননি বলেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি আমেরিকার।
ভারত অবশ্য এর বিরুদ্ধে কূটনৈতিক রক্ষাকবচের যুক্তিই তুলে ধরছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে বদলি হওয়ার সুবাদে যত দিন রক্ষাকবচ থাকবে, তত দিন হয়তো আদালতে হাজির হতে হবে না দেবযানীকে। মামলাটি ‘সাসপেনশনে’ থাকবে। তার মাঝখানে দেশেও ফিরতে পারবেন তিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি কখনও আমেরিকায় যেতে হয়, সে ক্ষেত্রে আবার গ্রেফতার করা হতে পারে দেবযানী খোবরাগাড়েকে।
তাঁকে নিয়ে বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন এক ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে সঙ্গীতা রিচার্ডের পরিবার নিয়ে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, কোনও এক মার্কিন কূটনীতিক নিজের বিশেষ সুবিধে বলে কর ফাঁকি দিয়ে বিমানে করে নিউ ইয়র্ক নিয়ে গিয়েছেন সঙ্গীতা রিচার্ডের পরিবারকে। কে এমন কাজ করেছেন, তা খতিয়ে দেখছে বিদেশ মন্ত্রক। |