|
|
|
|
স্পিকারের পদ নিয়ে চাপের খেলায় ৩ দল
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৩১ ডিসেম্বর |
আস্থা ভোটে ভোটাভুটির আগেই স্পিকার নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠতে চলেছে দিল্লি বিধানসভা। প্রোটেম স্পিকারের সমস্যা মিটেছে। কিন্তু আগামী দিনে দিল্লি বিধানসভার স্পিকার কোন দল থেকে হবেন, তা নিয়েই জোর জল্পনা এখন রাজধানীতে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও প্রথম থেকেই অন্য দল ভাঙিয়ে সরকার গড়ার খেলায় নামতে চায়নি বিজেপি। সরকার গড়তে উদ্যোগী না হলেও স্পিকার নির্বাচনের দৌড়ে যে দল থাকছে ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বর্ষীয়ান বিধায়ক জগদীশ মুখি হলেন স্পিকার পদে বিজেপি-র প্রথম পছন্দ। অন্য দিকে কংগ্রেসের সমর্থনে সরকার গড়া আম আদমি পার্টি (আপ) জানে, তাদের সরকারের অস্তিত্ব কংগ্রেসের সমর্থনের উপরে নির্ভরশীল। তাই বিধানসভায় সুষ্ঠু ভাবে অধিবেশন চালাতে গেলে স্পিকারের ভূমিকা আগামী দিনে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সে কারণেই আপ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে আজ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, তাদের তরফে স্পিকার পদে প্রার্থী হবেন এম এল ধীর।
এই পরিস্থিতিতে স্পিকারের পদ ঘিরে টানাটানি অবশ্যম্ভাবী ধরেই নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু তার আগে প্রোটেম স্পিকারের পদটি নিয়েও আজ দিনভর টানাপোড়েন চলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে। আগামিকাল অধিবেশন শুরু হবে দিল্লি বিধানসভায়। শুরুর দিনে বিধায়কদের শপথবাক্য পাঠ করানোর দায়িত্বে থাকেন প্রোটেম স্পিকার। সাধারণত বিধানসভার সব থেকে বয়স্ক নেতা ওই ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেই অনুযায়ীই সরকার বিজেপি বিধায়ক জগদীশ মুখির নাম প্রস্তাব করে তাঁর বয়স ও অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি জানিয়ে দেয়, তাদের দলের কোনও বিধায়ক প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন না। এর পর আপ নেতৃত্ব ওই প্রস্তাব দেয় দিল্লির একমাত্র জেডিইউ বিধায়ক শোয়েব ইকবালকে। তাঁর দল সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন করলেও শোয়েব জানিয়ে দেন, তিনি প্রটেম স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন না। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে কংগ্রেস ও আপ নেতৃত্ব। সন্ধেয় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান, “কংগ্রেসের মতিন আহমেদ প্রোটেম স্পিকার হবেন।”
প্রোটেম স্পিকারের সমস্যা মিটলেও স্পিকার নির্বাচন নিয়ে যে দল সমস্যার মুখে পড়তে চলেছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন আম আদমি পার্টি নেতৃত্ব। এটা স্পষ্ট, বিধানসভায় তাদের বেকায়দায় ফেলতে সব ধরনের চেষ্টা চালাবে বিজেপি। আবার সরকারের সঙ্গে থাকলেও আপ-কে চাপে রাখার সুযোগ ছাড়বে না কংগ্রেসও। ঘরোয়া ভাবে কংগ্রেসের কিছু নেতা স্পষ্টই বলছেন, আপ-কে সমর্থন করা হলেও তাঁদের উপর চাপ রাখতে স্পিকার নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকুক দল। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দর কষাকষির রাস্তা খোলা থাকবে।
এই পরিস্থিতিতে আপ-এর এক নেতা আজ বলেন, “স্পিকার নির্বাচন নিয়ে এক চোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে বলেই মনে করছে দল। আমাদের প্রার্থী দিতেই হবে, কারণ সংখ্যালঘু দল হিসেবে সরকার চালাতে গেলে স্পিকারের সমর্থন পাওয়া খুব জরুরি। সরকার পক্ষ থেকে কেউ স্পিকার না হলে পদ পদে হোঁচট খাবে সরকার।” কিন্তু কেজরিওয়ালদের সমস্যা হল তাঁদের পছন্দের কাউকে স্পিকার করতে হলে কংগ্রেসের সমর্থন চাইতে হবে তাঁদের। অথচ আপ নেতৃত্ব প্রথম থেকেই বলে আসছেন, কংগ্রেস তাদের সমর্থন করছে, তাঁরা কংগ্রেসের সমর্থন চাননি। ফলে এখন স্পিকার প্রশ্নে কংগ্রেসের সমর্থন চাওয়াটাও তাঁদের পক্ষে অস্বস্তিকর। এতে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে আপ-কে। আপ-এর এই অস্বস্তির সুযোগ নিয়েই স্পিকার নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী দিতে চাইছে বিজেপি।
তবে আপ-এর দিক থেকে একটাই স্বস্তির বিষয়, তা হল কংগ্রেস-বিজেপি কোনও পক্ষই চায় না এই মুহূর্তে ফের বিধানসভা নির্বাচন হোক দিল্লিতে। বিশেষ করে কংগ্রেস। স্পিকার নির্বাচনকে ঘিরে বেশি তিক্ততা তৈরি হলে আপ নেতৃত্ব বিধানসভা ভেঙে দিয়ে ফের ভোটে চলে যেতে পারে। আর এই মুহূর্তে ফের ভোট হলে দিল্লি থেকে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যেতে পারে কংগ্রেস। তাদের এই বাধ্যবাধকতার কথা জানেন আপ নেতৃত্বও। সে কারণেই ধীরকে প্রার্থী করা হলে কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়া যাবে, এই আশায় বুক বাঁধছেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা। |
|
|
|
|
|