|
|
|
|
কথা রাখলেন অরবিন্দ, বিদ্যুৎ মাসুল অর্ধেক
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৩১ ডিসেম্বর |
বিনামূল্যে জলের পর আজ সস্তা হল বিদ্যুৎ। দিল্লির ঘূর্ণি পিচে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ঝোড়ো ব্যাটিং অব্যাহত।
আগামী ৩ জানুয়ারি দিল্লি বিধানসভায় আস্থা ভোট। সরকার থাকবে কি না, সেই অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়েও কেজরিওয়াল ফের বার্তা দিলেন যে, প্রতিশ্রুতি পালনে তাঁর দল বদ্ধপরিকর। গত কাল পরিবার পিছু মাসে ২০ কিলোলিটার জল বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণার পরে আজ বিদ্যুতের মাসুল এক ধাক্কায় অর্ধেক করার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টির সরকার। এর ফলে দিল্লির প্রায় ২৮ লক্ষ মানুষ নতুন বছরের শুরু থেকে অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ পাবেন। এর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে আজ দিল্লির তিনটি বেসরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে অডিট শুরুর সিদ্ধান্তও নিয়েছে দিল্লি সরকার। ওই সংস্থাগুলি দিল্লিবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ মাসুল আদায় করে বলে বহুদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন কেজরিওয়াল। ভোটের আগে এই অডিট করানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি।
কেউ কেউ মনে করছেন, জল ও বিদ্যুৎ নিয়ে মূল দু’টি প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করে পরপর মাস্টার স্ট্রোক দিলেন কেজরিওয়াল। এর পরে আস্থা ভোটে সরকার পড়ে গেলেও দিল্লিবাসীকে বোঝানো যাবে যে, প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পিছপা নয় আপ। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে দিল্লিতে পুনর্নির্বাচন হলেও ফায়দা তাদেরই হবে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শরীর ভাল নেই কেজরিওয়ালের। গলায় সংক্রমণ, জ্বর, পেট খারাপ। ফলে গত কাল দফতরে যেতে পারেননি। অথচ আস্থা ভোট ঘনিয়ে আসছে। তাই আজ আর বিশ্রাম না নিয়ে সকাল থেকেই কাজে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “দরকার হলে দু’দিন পরেই বিশ্রাম নেওয়া যাবে।”
গত কাল বিনামূল্যে জলের ঘোষণা হওয়ার পর স্বভাবতই আজ বিদ্যুতের দাম কমা নিয়ে আশায় ছিল দিল্লিবাসী। সন্ধেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের শেষে কেজরিওয়াল ঘোষণা করেন, “নতুন বছরের শুরু থেকে দিল্লিবাসী অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ পাবেন।” তবে ওই সুবিধে পাবেন শুধুমাত্র ঘরোয়া গ্রাহকেরা, যাঁরা ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ খরচ করবেন। সরকারি সূত্রের দাবি, ০-২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহাকারীদের আগে ইউনিট-পিছু গুনতে হত ৩ টাকা ৯০ পয়সা। তা কমে হচ্ছে ১ টাকা ৯৫ পয়সা। একই ভাবে ২০১-৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের আগে দিতে হত ইউনিট-পিছু ৫ টাকা ৮০ পয়সা। এখন দিতে হবে ২ টাকা ৯০ পয়সা। তবে যাঁরা ৪০০ ইউনিটের বেশি খরচ করবেন, তাঁদের জন্য কোনও ভর্তুকি দেবে না সরকার। প্রাথমিক ভাবে এই ব্যবস্থা আগামী তিন মাসের জন্য চালু থাকবে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির অডিট রিপোর্ট চলে আসবে বলে আশা করছেন আপ নেতৃত্ব। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ কর হবে।
বিনামূল্যে জল দেওয়া বা বিদ্যুতের মাসুল অর্ধেক করলে সরকারের রাজস্ব কমে যাবে বলে অভিযোগ তুলে গত কালই সরব হয়েছিল কংগ্রেস। বস্তুত আজ কেজরিওয়ালও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, বিদ্যুতের দাম অর্ধেক হওয়ায় প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব কমবে। তবে ভর্তুকির অল্প অংশই সরকারি কোষাগার থেকে খরচ হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, “সরকারকে এর জন্য ৬০ কোটি ভর্তুকি দিতে হবে। বাকি রইল ১৪০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির কাছ থেকে সরকার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা পাবে। ভর্তুকির বাকি টাকা তাদের কাছ থেকে সরাসরি কেটে নেওয়া হবে।”
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির অডিট নিয়ে অনেকের যদিও বক্তব্য ছিল, গোটা বিষয়টি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারাধীন। তাই সরকার ওই নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে পারবে না। প্রকৃত চিত্র বুঝতে আজ সকালে বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন কেজরিওয়াল। দেখা করেন ভারতের কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) শশীকান্ত শর্মার সঙ্গে। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে অডিটের নির্দেশ দিয়ে কেজরিওয়াল বলেন, “ওই ধরনের কোনও মামলাই হাইকোর্টে নেই। তাই অডিটের নির্দেশ দিতে কোনও অসুবিধে নেই।” তবে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে একটা সুযোগ দিয়েছে সরকার। কেন তাদের বিরুদ্ধে অডিট করানো হবে না, ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আগামিকাল পর্যন্ত সময় পেয়েছে তারা। যদিও আপ-এর একটি সূত্রের বক্তব্য, সংস্থাগুলি যে কারণই দেখাক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অডিট হবেই। কারণ দল মনে করে, সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিবাসীর কাছ থেকে বাড়তি মাসুল নিয়ে আসছে।
অতএব কেজরিওয়ালের স্কোরকার্ড এখন দুইয়ে দুই। আস্থা ভোটের আগে হাতে পাচ্ছেন আরও দু’টো দিন। এই দু’দিনে কি আরও চমক অপেক্ষা করছে? প্রত্যাশা বাড়ছে দিল্লিবাসীর। |
পুরনো খবর: বিনামূল্যে জল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রেখে খাতা খুললেন কেজরিওয়াল |
|
|
|
|
|