|
|
|
|
সীমান্ত আটকেও মানবিক থাকতে চায় দিল্লি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সীমান্ত সিল করে দিচ্ছে ভারত। আরও বিএসএফ মোতায়েন করে পাহারা জোরদার করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও নির্বাচনে অশান্তির জেরে বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীরা যদি এ পারে চলে আসতে বাধ্য হন, তাঁদের সঙ্গে মানবিক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সীমান্তরক্ষীদের। মান-সম্মান
|
কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। |
বাঁচাতে দেশ ছেড়ে আসা প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ‘পুশ ব্যাক’ না-করার নির্দেশও দিয়েছে দিল্লি। মঙ্গলবার নবান্নে এসে এ জন্য বিএসএফ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। এ দিন বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন তিনি। দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টার আলোচনা পর্বে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিশপ্রধান জিএমপি রেড্ডি এবং কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দা-কর্তারা। বৈঠকের শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে পুরো পরিস্থিতি তাঁকেও জানিয়ে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।
এ দিনই নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতের এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনও ইচ্ছে নেই। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় এক দেশের ঘটনাপ্রবাহ অন্য দেশেও প্রভাব ফেলে।” বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের উত্তাল পরিস্থিতির চাপ সীমান্তেও পড়বে। এক দিকে যেমন হিন্দু শরণার্থীরা সম্মান বাঁচাতে এ-পারে আসার চেষ্টা করবেন, তেমনই সেনা-পুলিশের ধরপাকড় থেকে বাঁচতে মৌলবাদী ও দুর্বৃত্তরাও সীমান্ত পারের চেষ্টা করবে। কিন্তু সব অনুপ্রবেশকারীই যে দুর্বৃত্ত নন, সে কথাই সীমান্তরক্ষীদের মনে করিয়ে দিচ্ছে দিল্লি।
এ দিন বৈঠক সেরে নবান্ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “উদ্ভূত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা হল। আলোচনা হয়েছে অন্যান্য বিষয়েও।” রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণ সবই আলোচনা হয়েছে। তবে মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশ পরিস্থিতি।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কী কথা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তা জানাতে চাননি। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। সে দেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, আগামী ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। কিন্তু সে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই ভোটে অংশ নিচ্ছে না। পশ্চিমি দেশগুলি এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ভারত একটি পৃথক অবস্থান নিয়েছে। নির্বাচন পর্বে এই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে বলে দেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি আগেই কেন্দ্রকে সতর্ক করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুলিশ ও সেনার তত্পরতার কারণে ওখানকার ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা এ পারে চলে এসে নানা নাশকতামূলক কাজকর্মেও জড়িয়ে যেতে পারে তারা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা নবান্নে এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, পাকিস্তানের মৌলানা মাসুদ আজহারের জামাত-উদ-দাওয়ার সদস্যরা এ দেশে নরেন্দ্র মোদীর উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। এই কাজে তারা বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনকে কাজে লাগাতে পারে। সেই কারণে জানুয়ারি শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতে কলকাতায় নরেন্দ্র মোদীর সফর কালে কঠোর নিরাপত্তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে বলেছে তারা। দেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির আশঙ্কা, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে অশান্তির সুযোগ নিতে পারে।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, ভারত বরাবরই হাসিনা সরকারের কাছে সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধদের স্বার্থ এবং প্রাণ-সম্পত্তি রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে চাপ দিয়ে আসছে। ২৩ অক্টোবর ঢাকায় শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ সারন এবং নয়াদিল্লিস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক করিম। সেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়। এ দিনের বৈঠকে সে প্রসঙ্গও ওঠে। গোয়েন্দা কর্তারা জানান, বাংলাদেশের পুলিশ, সেনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সংখ্যালঘুদের জীবন-সম্পত্তি রক্ষার্থে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট তত্পর রয়েছে। কিন্তু ভোটের পরে সে দেশে মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দিলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা মুশকিল হবে বলেই গোয়েন্দারা এ দিনের বৈঠকে সর্তক করেছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বেশ কিছু পদক্ষেপ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কী কী সেই ব্যবস্থা?
নির্বাচনের আগে থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। নজরদারি আরও জোরদার করার জন্য ইতিমধ্যেই সীমান্তে আরও দুই ব্যাটেলিয়ান বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন চেকপোস্টের পাহারাও বাড়ানো হচ্ছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে পুলিশ ও প্রশাসনকে বাড়তি নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল বাংলাদেশি শরণার্থীদের প্রতি মানবিক ব্যবহার করা। অশান্তির ফলে সংখ্যালঘুরা এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হলে সীমান্ত এলাকাতেই তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে, যাতে সময় সুযোগ বুঝে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া যায়। শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে ‘পুশব্যাক’ নীতি নেওয়া যে কেন্দ্রের কাম্য নয়, তা এ দিনের বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিয়ে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব। |
|
|
|
|
|