|
|
|
|
পরিস্থিতি অসহনীয়, তবে এখনই ইস্তফা দিচ্ছেন না মনমোহন
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৩১ ডিসেম্বর |
আপাতত পদত্যাগ করছেন না প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
পদত্যাগ করবেন, না করবেন-না, সে ব্যাপারে গত কয়েক দিন ধরে পরিবারের লোকেদের মতামত নিচ্ছিলেন মনমোহন। ৩ জানুয়ারি, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়া উচিত হবে কি না, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আজ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, মনমোহন ইস্তফা দিচ্ছেন না।
ইস্তফা দেওয়ার কথা কেন ভাবছিলেন মনমোহন? কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দলীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে ইদানীং প্রধানমন্ত্রীর দূরত্ব বাড়ছিল। এমনকী, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্যের বিষয়টিও সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসে যায়। মনমোহন যখন আমেরিকায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ঠিক আগে, রাহুল আচমকা দিল্লি প্রেস ক্লাবে এসে দাগি জনপ্রতিনিধিদের রক্ষাকবচ সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে মনমোহনের ঘনিষ্ঠ অনেকেই তখন তাঁকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দেন।
এর পর চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ভরাডুবি হলে কংগ্রেসের অনেক নেতাই ঠারেঠোরে মনমোহনকে দোষ দিতে শুরু করেন। বলা হয়, কেন্দ্রের ব্যর্থতা এবং নীতিপঙ্গুত্বই এই হারের জন্য দায়ী। লোকসভা ভোটে দলকে বাঁচাতে মনমোহনকে সরিয়ে রাহুলকে আনার দাবিও আরও জোরদার হয়। সংসদের সেন্ট্রাল হল থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কংগ্রেসের অনেক নেতাই বলতে শুরু করেন, নীল পাগড়িই এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এখন রাহুলকে এনে প্রশাসনকে নতুন চেহারা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসিয়ে ভোটে গেলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটে আর মোদী-ঝড়ে কংগ্রেস খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে।
কংগ্রেসের অন্দরে এই আলোচনার কথা মনমোহনেরও কানে আসছিল। গোটা পরিস্থিতিটা অসহনীয় হয়ে উঠছিল তাঁর পক্ষে। মনমোহনের নিকটাত্মীয়েরাও বলছিলেন, পরিস্থিতি আর মর্যাদাপূর্ণ থাকছে না। ফলে প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। মনমোহনের ঘনিষ্ঠ মহলও একই পরামর্শ দিয়েছে তাঁকে। তাঁদের মতে, দল সরিয়ে দিচ্ছে এমন অবস্থা তৈরি হওয়ার আগে সম্মান নিয়ে সরে যাওয়াই ভাল। তবু সব দিক খতিয়ে দেখে এখনই ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী।
তা হলে ৩ তারিখের সাংবাদিক বৈঠকে কী বলবেন তিনি? বিশেষ করে তাঁর ইস্তফা নিয়ে জল্পনার পরে সে দিন ওই প্রসঙ্গ যে উঠবে, তা যখন এক প্রকার নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, গত দশ বছরে তাঁর সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরবেন মনমোহন। জানাবেন, কংগ্রেস কী কী বিষয় সামনে রেখে ভোটে যাবে। পাশাপাশি, এটাও জানিয়ে দিতে পারেন যে, এটাই তাঁর শেষ ইনিংস। ঘটনা হল, আগে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রিত্বের সম্ভাবনা সরাসরি খারিজ না-করে জল্পনা জিইয়ে রাখা মনমোহন ইদানীং কিন্তু আর ক্ষমতায় না-থাকার কথাই বলেছেন। সম্প্রতি জাপান সফর থেকে দেশে ফেরার পথে বিমানে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, লোকসভা ভোটের পরে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের জন্য কাজ করতে তিনি প্রস্তুত।
তবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের কথায়, “প্রকৃত পক্ষে কী চিত্রনাট্য তৈরি হয়ে রয়েছে, তা কেবল তিন জনই জানেন। সনিয়া, রাহুল এবং মনমোহন। আশা করা যায়, ৩ তারিখ সাংবাদিক বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী আরও এক বার সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে কথা বলবেন।” তাঁর মতে, এখন দলের নেতা-মন্ত্রীরা যা বলছেন, তা তাঁদের অভিপ্রায় মাত্র।
যেমন, গত কালই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাহুলের নাম এখনই ঘোষণা করে দেওয়া হোক। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভোট ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। সেটা মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। চিদম্বরমের মতের শরিক কংগ্রেস নেতারা বলছেন, রাহুলকে এখন সরকারের দায়িত্ব দিলে জনমানসে এই বার্তা দেওয়া যাবে যে, কঠিন সময়ে চ্যালেঞ্জ নিতে তিনি পিছপা হন না। যে সিদ্ধান্তহীনতা মনমোহন সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তা-ও উড়িয়ে দেওয়া যাবে। তা থেকেও বড় কথা হল, চার রাজ্যে ভোটে হারের পরে মুষড়ে পড়া নেতা-কর্মীদের নতুন করে চাঙ্গা করে তোলা সম্ভব হবে। লোকসভা ভোটের আগে সেটাই সবচেয়ে জরুরি কাজ।
কিন্তু জয়রাম রমেশের মতো রাহুল-শিবিরের কয়েক জন নেতা আবার বলছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাহুলের নাম এখনই ঘোষণা করে দিলে লোকসভা ভোট মার্কিন মুলুকের মতো ‘প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্মে’ পর্যবসিত হবে। অর্থাত্, সরাসরি রাহুল-মোদী লড়াই। বিজেপি সেটাই চাইছে। তাদের পাতা ফাঁদে কংগ্রেস খামোখা পা দেবে কেন? তা ছাড়া, এখন রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করা মানে এটা মেনে নেওয়া যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন ব্যর্থ হয়েছেন। সেটা ভোটারদের কাছে মোটেই ভাল বার্তা নিয়ে যাবে না। দলের এই অংশের নেতাদের মতে, ১৭ জানুয়ারি এআইসিসি অধিবেশনে বরং রাহুলকে সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়া হোক। তাতে তাঁর রাজনৈতিক উচ্চতা যেমন বাড়বে, তেমনই ভোটে লড়ার জন্য কর্মীদের চাঙ্গা করাও সম্ভব হবে।
এই পরিস্থিতিতে সকলেই এখন তাকিয়ে রয়েছেন শুক্রবার সকালের দিকে। তার আগে আজ দেশবাসীর জন্য নতুন বছরের শুভেচ্ছাবার্তায় প্রথামতো সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকা দেননি প্রধানমন্ত্রী। সাদামাটা বিবৃতিতে বলেছেন, “নতুন বছর প্রত্যেককে আত্মসমীক্ষা করে ত্রুটি শোধরানোর সুযোগ করে দেয়। সেই সঙ্গে সুযোগ করে দেয় নতুন লক্ষ্য স্থির করার। এটা নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রত্যয় দেখানোর সময়।” |
পুরনো খবর: দুর্নীতি দমনের মুখ হতে মরিয়া রাহুল |
|
|
|
|
|