|
|
|
|
অর্ডিন্যান্স জারি করার পরামর্শ |
দুর্নীতি দমনের মুখ হতে মরিয়া রাহুল |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি
৩০ ডিসেম্বর |
সরকারের ভুল পদক্ষেপ রোখার জেদ দেখিয়েছেন এর আগে। দুনীতি মোকাবিলায় এ বার কার্যত জেহাদের বার্তা দিতে চান রাহুল গাঁধী। সে বার দাগি সাংসদদের বাঁচাতে সরকারের আনা অর্ডিন্যান্স তথা অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলার কথা বলেছিলেন কংগ্রেস সহসভাপতি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বিদেশ থেকে ফেরার পরে, নাটকীয় ভাবে সেই অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার করতে হয় সরকারকে। এ বার কিন্তু রাহুলই অস্ত্র করতে চান অর্ডিন্যান্সকে। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন ও দুর্নীতি মোকাবিলায় বকেয়া ৬টি বিল পাশ করানোর কথা ভাবছিল সরকার। কিন্তু দলীয় সূত্রের খবর, দুর্নীতি মোকাবিলার বিল নিয়ে এক ধাক্কায় অর্ডিন্যান্স জারি করে দিতে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছেন রাহুল।
তবে তা করার আগে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে বিলগুলি পাশ করানোর একটা শেষ চেষ্টা করলে রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা যাবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হচ্ছে সরকারের শীর্ষকর্তাদের। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার পরিবর্তে রাহুলের পরামর্শ মতো অর্ডিন্যন্স জারির পথেও হাঁটতে পারে সরকার। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে বিবেচনা শুরু করে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট সচিবালয়।
দুর্নীতি মোকাবিলায় কে কার চেয়ে এগিয়ে তা নিয়ে কংগ্রেস বিজেপি-র কাজিয়া চলছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু আম আদমি পার্টির সাম্প্রতিক উত্থান দুর্নীতি দমনের প্রসঙ্গটিকে আম ভারতবাসীর আলোচনার কেন্দ্রে এনে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদের বার্তা দিতে কৌশলে আরও একটি ওস্তাদের চাল দিতে চান রাহুল।
সংসদে লোকপাল বিল পাশের সময়েই রাহুলকে তার কৃতিত্ব দেওয়ার চিত্রনাট্য তৈরি করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সে সময়েই এক ধাপ এগিয়ে রাহুল বলেছিলেন, “শুধু লোকপাল আইনেই সব দুর্নীতি রুখে দেওয়া যাবে, এমনটা নয়। এর জন্য একটা সামগ্রিক কাঠামো প্রয়োজন। কংগ্রেস সেই প্রক্রিয়া অনেক আগেই শুরু করেছে। তথ্যের অধিকার আইন পাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাতিয়ার দিয়েছে মানুষকে। এ বার সংসদের অধিবেশন দীর্ঘায়িত করে বাকি বিলগুলিও পাশ করা হোক।” এই মুহূর্তে দুর্নীতি মোকাবিলা সংক্রান্ত যে ৬টি বিল আটকে আছে সংসদে, সেগুলি হল,
• নির্দিষ্ট সময়ে নাগরিকদের অভিযোগের সুরাহা সংক্রান্ত বিল,
• দুর্নীতি ফাঁস করা সংক্রান্ত ‘হুইসল ব্লোয়ার’ বিল,
• বিচার ব্যবস্থার দায়বদ্ধতা বিল,
• সরকারি কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আনা সংক্রান্ত বিল,
• বিদেশি নাগরিক ও সংস্থার কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া রোধের বিল, এবং
• দুর্নীতি দমন আইন সংশোধন বিল।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রাহুলের প্রস্তাব মতো এই বিলগুলি পাশ করাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথাই ভেবে রেখেছিল সরকার। যে কারণে এখনও সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ইতি না টেনে তা কেবল মুলতবি করে জিইয়ে রাখা হয়েছে। রাহুল শিবিরের আশঙ্কা, বিশেষ অধিবেশন ডাকলেও লোকসভা ভোটের মুখে বিরোধীরা কোনও না কোনও ছুতোয় সভা পণ্ড করে দিতে পারে। তা ছাড়া বিলগুলি পাশের ব্যাপারে কৃতিত্বের ভাগ চাইতে পারে বিজেপি-ও। ঠিক যে ভাবে লোকপাল বিল পাশ হওয়ার জন্য কৃতিত্ব দাবি করতে শুরু করেছেন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজরা। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, বাজেট অধিবেশনের আগেই অর্ডিন্যান্সগুলি জারি করা হলে সেই কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে রাহুলকে। এর পরেও বাজেট অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট বিল পাশ রুখে দিলে তার রাজনৈতিক দায় বর্তাবে বিরোধীদের উপরে। ভোটের মুখে সেটা তাদের পক্ষে কঠিন হবে। তবু বিল পাশ না হলে ফের অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে।
সরকারকে ভাবাচ্ছে অন্য একটি বিষয়ও। সংসদকে এড়িয়ে নানা সময় অর্ডিন্যান্স জারি করার জন্য ইউপিএ সরকারকে ‘অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি’ আখ্যা দেন অনেকে। ফের তা করা হলে বিরোধীদের আক্রমণ বাড়বে আরও। তাই দলের একাংশ মনে করছেন, বিশেষ অধিবেশন ডেকে প্রথমে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য বিল ও দুর্নীতি দমন সংক্রান্ত বিল পাশের চেষ্টা করাই নিরাপদ। তাতে বিল পাশ না হলে তখন অর্ডিন্যান্স আনা যাবে। সমালোচকদেরও জবাব দেওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া যাবে।
ওই ৬টি বিল পাশের জন্য রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন আগামী ১৫ জানুয়ারি অনশনে বসবে। লোকপাল বিল পাশের জন্য রাহুলকে ধন্যবাদ জানাতে যন্তরমন্তরে আজ এক কর্মসূচি নিয়েছিল তারা। রাহুলের অর্ডিন্যান্স জারির পরামর্শ বা দলের শাখা সংগঠনগুলির এই সব কর্মসূচি এগুলির মূল লক্ষ্য একটাই, রাহুলকে দুর্নীতি দমনের মুখ হিসেবে তুলে ধরা। সন্দেহ নেই, রাহুলই কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চলেছেন। সম্ভবত ১৭ জানুয়ারি কংগ্রেসের অধিবেশন মঞ্চ থেকে তা ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তার আগেই হয়তো মনমোহনও জানিয়ে দেবেন, এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ। এই অবস্থায় লোকসভা ভোটের আগে রাহুল তাঁর একটি নিজস্ব ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করতে চাইছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে অরবিন্দ কেজরিওয়াল যেমন পোক্ত একটি ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন, তেমনটাই চাইছেন রাহুলও।
এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার এক কংগ্রেস সদস্য আজ বলেন, মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও ইউপিএ সরকার তথা কংগ্রেসের সব থেকে বদনাম হয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে। সেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার বোঝা লাঘবেরই চেষ্টা চলছে এখন। রাহুল চাইছেন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা কায়েমের জন্য তাঁর দর্শন ও পথকে সামনে রেখে ভোটে যেতে। বস্তুত সেই একই কারণে আদর্শ কাণ্ড নিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার ব্যাপারে সম্প্রতি প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেছিলেন তিনি। যাঁর অর্থ, দৃঢ় বার্তা দিতে তিনি দলের নেতাদেরও রেয়াত করতে রাজি নন। দলীয় সূত্রের খবর, রাহুলের দাবি মতোই আগামী বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্র মন্ত্রিসভা আদর্শ কাণ্ড নিয়ে রিপোর্ট পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
তবে দুর্নীতি দমনের মুখ হতে রাহুল দৃঢ়তার বার্তা দিতে চাইলেও, বিরোধী শিবিরের মুখ তাতে বন্ধ হচ্ছে না। দুর্নীতি মোকাবিলার বকেয়া বিল পাশ করাতে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে বা অর্ডিন্যান্স জারি করলে তারাও প্রশ্ন তুলবে, এত দিন কেন শীতঘুমে ছিল সরকার? এবং রাহুল গাঁধী? |
|
|
|
|
|