গলায় সংক্রমণ। ১০২ ডিগ্রি জ্বর। সঙ্গে পেট খারাপ। পরিস্থিতি এমনই যে স্যালাইন দিতে হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও যেতে পারেননি সচিবালয়ে। ট্যুইটারে লিখেছেন, “ঈশ্বর, খুব ভুল সময়ে অসুস্থ করে দিলে!”
অসুস্থ হয়েও অবশ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করতে ভুলছেন না অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শপথ গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জল নিয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করলেন দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী। বলা যায় প্রতিশ্রুতি পালনের খাতা খুললেন। এ দিন বাড়িতে বসেই দিল্লি জল পর্ষদের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিলেন, নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই পরিবার পিছু মাসে ২০ কিলোলিটার করে জল দেওয়া হবে। ভোটে আম আদমি পার্টির প্রতিশ্রুতি ছিল, দৈনিক ৭০০ লিটার জল। সেই হিসেবে মাসে ২০ কিলোলিটার করে জল মানে দিনে প্রায় ৬৬৬ লিটার। মুখ্যমন্ত্রীর কৌশাম্বির বাড়ি থেকে বৈঠক সেরে বেরিয়ে দিল্লি জল পর্ষদের নতুন সিইও বিজয় কুমারের ঘোষণা, “যে সব বাড়িতে মিটার রয়েছে, তারা বিনামূল্যে মাসে ২০ কিলোলিটার করে জল পাবে। জল সেস বা নিকাশি সেস-এর মতো মাসুলও বসানো হবে না।” যদি কেউ ২০ কিলোলিটারের বেশি জল খরচ করেন, তাঁকে অবশ্য জলের পুরো মাসুল দিতে হবে। আর ট্যুইটারে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, “যে কোনও দায়িত্বশীল সরকারের কাজ নাগরিকদের লাইফলাইন, জল সরবরাহ করা।”
আজকের এই ঘোষণার পরে স্বাভাবিক ভাবেই আপ-সরকারের কাছে জনতার প্রত্যাশার পারদ চড়েছে। অরবিন্দের আর একটি বড় প্রতিশ্রুতি ছিল, বিদ্যুতের মাসুল কমানো হবে। আগামিকাল এ নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকের পরে এ নিয়ে ঘোষণা হয় কি না, এখন সে দিকে তাকিয়ে রাজধানীর জনতা।
আপাতত জল নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করে দিল্লির একটা অংশের জনতার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন অরবিন্দ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কি দিল্লির জল-সঙ্কট আদৌ মিটবে? এ ভাবে বিনা পয়সায় জল দিতে গিয়ে কোষাগারের উপরে যে চাপ পড়বে, তা কত দিন সামাল দিতে পারবে অরবিন্দের সরকার?
ঘটনা হল, দিল্লিতে বর্তমানে যে পরিমাণ জল সরবরাহ করা হয়, তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট কম বলে অভিযোগ দিল্লিবাসীর। জোগান বাড়ানোর জন্য আগের কোনও সরকারই সে ভাবে চেষ্টা করেনি বলে বহু বার অভিযোগও করেছেন দিল্লির বাসিন্দারা। জনতার মন বুঝেই ভোটে অরবিন্দের প্রতিশ্রুতি ছিল, বিনামূল্যে পরিবারপিছু দৈনিক ৭০০ লিটার জল। সূত্রের খবর, জল বোর্ডের সদ্য প্রাক্তন সিইও দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়-সহ বোর্ডের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই ঘোষণার বাস্তবতা নিয়ে। বিপুল ভর্তুকির বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সে সবে কান দেয়নি নতুন সরকার। উল্টে দেবশ্রী মুখোপাধ্যায়কেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেই নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত। জল বোর্ডের একাধিক কর্তার বক্তব্য, এত দিন ছিল চাহিদা বেশি, জোগান কম। এ বারে পুরো উল্টো ছবি! এই বিপুল পরিমাণ জল সরবরাহ করা হলে দিল্লির মতো শুখা এলাকাতেও জল নষ্টের প্রবণতা বাড়বে বলে আশঙ্কা তাঁদের। পরিবেশ সংগঠনগুলিও জল নষ্টের আশঙ্কা নিয়ে অরবিন্দকে চিঠি দিয়েছে।
কিন্তু অরবিন্দের সরকার আপাতত প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যস্ত। রবিবার সন্ধ্যায় বিজয় কুমারকে জল পর্ষদের দায়িত্বে আনেন অরবিন্দ। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর জল-ঘোষণা। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথম তিন মাস জলের গোটা খরচটাই বইবে দিল্লি জল পর্ষদ। এ জন্য খরচ হবে বাড়তি প্রায় ৪০ কোটি টাকা। তিন মাস পরেও এই ব্যবস্থা বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও অরবিন্দ জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত মাত্র তিন মাসের জন্য নয়। দিল্লি থেকে কংগ্রেসের সাংসদ সন্দীপ দীক্ষিতের প্রশ্ন, “জল ও বিদ্যুতের মাসুল কমিয়ে দিলে সরকারের রাজস্ব আয় কমবে। তা হলে স্কুল-হাসপাতাল ও বাকি উন্নয়নের কাজ চলবে কী করে?” তাঁর যুক্তি, দৈনিক ৭০০ লিটার জল আসলে সংখ্যার চমক। যে সব বাড়িতে জলের মিটার তো দূর, পাইপে জলই আসে না, তাদের কী হবে? একই সঙ্গে দিল্লির বহু এলাকায়, বিশেষ করে বেআইনি ঝুপড়িগুলিতে জলের মিটার তো দূর, বহু ক্ষেত্রে জলের পাইপই নেই। তাদের কী হবে? বিজেপি নেতা বিজেন্দ্র গুপ্তরও একই প্রশ্ন, “১১ লক্ষ পরিবার দিল্লিতে জলই পান না। এদের কী হবে? এরা কি জলের পরিবর্তে ক্ষতিপূরণ পাবে?”
আপ নেতৃত্ব অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি কোনও জবাব দিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয় এবং সেটা তাঁরা করে দেখাবেন। আসলে আপ নেতৃত্ব এখন দিল্লি বিধানসভার সাফল্যকে পুঁজি করে লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির বাইরেও ভাল ফল করার অঙ্ক কষছে। তারা জানে যে, রাজধানীতে কাজ করে দেখাতে পারলেই দিল্লির বাইরে সাফল্য পাওয়া সহজ হবে। জলের পর এ বার তাই তাদের নজরে বিদ্যুতের মাসুল। তার পরে ধাপে ধাপে আরও প্রতিশ্রুতি পালনের পালা। আপ দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক মুখেই বেড়েছে রান্নার প্রাকৃতিক গ্যাস ও অটোর জ্বালানি গ্যাসের দাম। গ্যাসের দাম না কমালে অটোর ভাড়া বাড়াতে হবে বলে ইতিমধ্যেই দাবি তুলতে শুরু করেছেন অটোচালকরা।
প্রথম প্রতিশ্রুতি পালন হয়েছে। বাকিদের কী হবে? দিন গুনছে দিল্লির আম আদমি।
|