এ বার শুধুই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা।
আর কী-ই বা করতে পারেন তাঁরা? প্রশাসনের তদারকিতে সোমবার ত্রাণশিবিরের আশ্রয়টুকুও হারিয়েছেন মুজফ্ফরনগরের গোষ্ঠী-সংঘর্ষে আক্রান্ত দেড়শো পরিবার। কার্যত সহায়সম্বলহীন অবস্থায় রাস্তায় নামতে হয়েছে তাঁদের। তাই তাঁদের এখন চিন্তা, “আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব, কী করব?”
তার অবশ্য কোনও উত্তর দিতে পারেনি অখিলেশ-প্রশাসন। যদিও গত কালই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমরা চাই মানুষ বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু কাউকে জোর করে বের করে দিতে চাই না।” মুজফ্ফরনগরের লয় ত্রাণশিবিরের ওই দেড়শো পরিবারের কথার সঙ্গে
অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর দাবির সঙ্গতি নেই। তাঁদের অভিযোগ, কোনও কিছু না জানিয়েই ত্রাণশিবিরের দেড়শো তাঁবু খুলে নেওয়া হয়। যে এলাকায় তাঁবু টাঙানো ছিল, তার মাটিও খুঁড়ে দেওয়া হয়। এমনকী, সেই এলাকাতেই পঞ্চায়েত প্রধান এবং মহকুমা শাসকের গাড়ি রেখে দেওয়া হয়। তার পর থেকে খোলা আকাশের নীচে সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা। এর পর কী হবে, কেউ জানে না।
তবে ওই দেড়শো পরিবারের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। রাহুল গাঁধী থেকে লালু প্রসাদ প্রত্যেকেই শরণার্থীদের শোচনীয় অবস্থার ব্যাপারে সরকারি উদাসীনতার কথা বারবার বলেছেন। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, সরকার গোষ্ঠী-সংঘর্ষে আক্রান্তদের বাড়ি ফেরানোর জন্য উপযুক্ত চেষ্টা করছে না। প্রত্যাশিত ভাবেই তা মানতে নারাজ প্রশাসন। গত কাল শামলির মালকপুর ত্রাণশিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাগপতের পুলিশ সুপার সুনীল কুমার। সেখানে আশ্রয় নেওয়া বাগপতের বাসিন্দাদের নিশ্চিন্তে ঘরে ফেরার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার পরেও তাঁর দাবি, “কয়েক জন মানলেও বাকিরা ফিরতে চাইছেন না। আমরা নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছি।” ঘরছাড়াদের ফেরানোর চেষ্টার পাশাপাশি গোষ্ঠী-সংঘর্ষে অভিযুক্তদের ধরতেও সরকার যে তৎপর, সেটা বোঝাতে মুজফ্ফরনগরের স্পেশ্যাল পুলিশ সুপার এইচ এন সিংহ জানান, ইতিমধ্যেই ২৪৫ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কিন্তু তার পরেও সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিশেষত কেন্দ্রের আজকের বয়ানের পর সে সমালোচনা আরও বেড়েছে। কেন্দ্রের দাবি, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত চারটি চিঠি উত্তরপ্রদেশ সরকারকে পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ত্রাণশিবিরে ঠিক কত জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার কারণ কী এবং শিশুমৃত্যু থামাতে উত্তরপ্রদেশ-সরকার ঠিক কী করছে। কিন্তু একের পর এক চিঠি যাওয়ার পরও কোনও উত্তর আসেনি। এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বয়ানে, “আজকে আমরা চতুর্থ চিঠিটি পাঠিয়েছি। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার কোনও প্রশ্নের জবাব দেয়নি।”
আর তাতেই আরও বেড়েছে সমালোচনা। ত্রাণশিবিরের শোচনীয় অবস্থা নিয়ে ‘উদাসীন’ অখিলেশ গত কাল চোদ্দো দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করায় এমনিতেই সমালোচনা বেড়েছিল। কেন্দ্রের এ দিনের বয়ান আর রাতারাতি দেড়শো পরিবারের আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার ঘটনা সামনে আসার পর অখিলেশ-প্রশাসন কী করে, সেটাই দেখার।
|