জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোমা সরিয়ে নায়ক রেলের ২ ট্র্যাকম্যান |
বাপি মজুমদার • আজমনগর (বিহার) |
রাত ১০টা থেকে শুরু হয়েছিল লাইন পরীক্ষা করার কাজ। সকাল ৬টা হলেই ডিউটি শেষ। সারারাত জেগে ক্লান্ত হয়ে স্টেশন লাগোয়া এক কামরার ঘরে ফিরছিলেন দুই ট্র্যাকম্যান। তাঁরা হলেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের আজমনগর রোড স্টেশনের রেলকর্মী জীবনপ্রসাদ সিংহ ও তাঁর সহকর্মী মহেশ শাহ। আচমকা চোখে পড়ে মুকুরিয়া হল্ট ও আজমনগর রোড স্টেশনের মাঝে শালমারা সেতুর সামনে দুই লাইনের মাঝখানে পড়ে রয়েছে দু’টি বোমা।
মহেশবাবুর মোবাইল ফোন নেই। জীবনবাবুর কাছে থাকলেও তাতে চার্জ ছিল না। ফলে স্টেশনে গিয়ে খবর দিতে গেলে সময় নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া ততক্ষণে কোনও ট্রেনও চলে আসতে পারত। তাই বিপদের ঝুঁকি না নিয়ে নিজেরাই বাঁশ দিয়ে বোমাগুলি সরিয়ে দেন তাঁরা। সেতু পেরিয়ে তাঁদের চোখে পড়ে আরও দু’টি বোমা। সেগুলিও সরাতে গেলেই বোমা দু’টি ফেটে যায়। তাঁদের অবশ্য কিছু হয়নি। বিস্ফোরণের পর অবশ্য দু’জন আর দেরি করেননি। ৫০০ মিটার দূরে থাকা স্টেশনে দৌড়ে গিয়ে ঘটনার খবরও জানান। জীবন বিপন্ন করে এভাবে বোমা সরিয়ে নাশকতার ছক ভেস্তে দিয়ে দিনের শেষে ‘নায়কের’ সম্মান পাচ্ছেন জীবনপ্রসাদ সিংহ ও মহেশ শাহ। জীবনবাবু বলেন, “কিছু একটা করতে হবে বলায় মহেশও রাজি হয়ে যায়। দুজনেই ভাবি, বোমা ফেটে মরলে আমরা দু’জন মরব। কিন্ত ট্রেনে দুর্ঘটনা ঘটলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই সাতপাঁচ না ভেবে বাঁশ দিয়ে বোমা সরানো শুরু করি।” |
|
দুই ট্র্যাকম্যান মহেশ শাহ (বাঁ দিকে) ও জীবনপ্রসাদ সিংহ।—নিজস্ব চিত্র। |
খানিক বাদেই ওই লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেনের। এই ঘটনার পরে রেল কর্তৃপক্ষ তো বটেই বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াডের কর্মীরাও দু’জনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম অরুণ কুমার শর্মা বলেন, “বোমাগুলি কতটা শক্তিশালী ছিল তা ওঁদের জানার কথা নয়। তারপরও যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ওঁরা যা করেছেন তাতে আমরা গর্বিত।” বিহারের পটনা স্পেশাল ব্রাঞ্চের বম্ব ডিজপোজাল স্কোয়াডের আধিকারিক অভয় কুমার সিংহ তো বলেই দিলেন, “আমরা আর কী করেছি! খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে বোমা দু’টি নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছি। কিন্তু ওই দুই ট্র্যাকম্যান যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার তুলনা হয় না। কী হতে পারে তা না ভেবে ওরা লাইন থেকে বোমা যেভাবে সরানোর কাজ করেছেন, তাতে ওঁদের জীবন বিপন্ন হতে পারত।” |
|
বিহারের আজমনগরে রেল লাইনে বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার ঘটনার পরে তল্লাশি। ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
কয়েকদিনের মত সোমবারও ঘন কুয়াশা ছিল। তার মধ্যেও বোমাগুলি তাঁদের নজয় এড়ায়নি। কী উদ্দেশ্যে সেগুলি রাখা হয়েছে সেগুলিও বুঝে যান। ওই সময় আপ লাইন দিয়ে যে একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার কথা তা তাঁদের অজানা ছিল না। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তাঁরা। বিহারের নওগাছিয়ার বাসিন্দা জীবনবাবু ১৩ বছর ধরে ওই স্টেশনে কর্মরত। বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা মহেশবাবু রয়েছেন ৬ বছর। দুই ট্র্যাকম্যানের সাহসের কথা পাড়ায় পৌঁছতেই খুশি প্রতিবেশী, আজমনগর স্টেশনের রেলকর্মীরাও। আজমনগরের স্টেশন ম্যানেজার রাজদেব রামও বলেন, “বোমাগুলি দেখে ওঁরা পালিয়ে যেতে পারতেন। বা আমাদের জানিয়েই কর্তব্য সারতে পারতেন। তা না করে যাত্রীদের বিপদের কথা ভেবে যা করার করেছেন।” |
|