|
|
|
|
রেললাইনে বোমা উদ্ধার, ব্যাহত ট্রেন চলাচল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বিহারের আজমনগরে রেল লাইনে বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় সোমবার সকাল থেকে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ দিন সকাল ৭টা থেকে কাটিহার ডিভিশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে অন্তত ১৫টি ট্রেন। ঘটনাস্থলে প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানোর পর ট্রেন চলাচল শুরুর অনুমতি দেয় রেল কর্তৃপক্ষ।
দীর্ঘক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ভোগান্তি শুরু হয় যাত্রীদের। এ দিন বেলা ১২টা ১০ মিনিট থেকে ফের ট্রেন চলাচল শুরু হলেও, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে লেগে যায় আরও প্রায় চার ঘণ্টা। প্রায় ৯ ঘণ্টার ধকলে অসুস্থও হয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকেই। উত্তর পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুগত লাহিড়ী বলেন, “লাইনে তল্লাশি চালানোর পরে নিশ্চিত হওয়ার পরেই ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়।” নিরাপত্তার কারণেই ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে রেল সূত্রের খবর।
কলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়িগামী দার্জিলিং মেলকে সোমবার সকালে কুমেদপুর স্টেশনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। অনান্য স্টেশনে দাঁড়িয়ে যায় কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, কলকাতা-রাধিকাপুর এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস, মহানন্দা এক্সপ্রেস, ক্যাপিটাল এক্সপ্রেস, কাটিহার-রাধিকাপুর এক্সপ্রেস, রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলি। অসমগামী অবোধ অসম এক্সপ্রেস, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, গরিব রথ এক্সপ্রেস, রাঁচি-কামাক্ষা, পুরী-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস, মালদহ-কোচবিহার ডিএমইউই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অস্বাভাবিক দেরিতে চলেছে। এ ছাড়াও কয়েকটি মালগাড়িকেও আটকে দেওয়া হয়েছিল বলে রেল সূত্রের খবর।
রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, আপ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসকে আজমনগর স্টেশনে, কলকাতা-রাধিকাপুর এক্সপ্রেসকে খুরিয়াল, আপ পদাতিক এক্সপ্রেসকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় ভালুকা রোড স্টেশনে। ক্যাপিটাল এক্সপ্রেসকে কাটিহার, কাটিহার-রাধিকাপুর প্যাসেঞ্জারকে মুকুরিয়া, রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জারকে কাচনা, ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেসকে বারসই, অবধ-অসম এক্সপ্রেসকে ডালখোলা, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস কিসানগঞ্জ স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে। মালদহে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় আপ পুরী-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসকে, হরিশ্চন্দ্রপুরে আপ গরিব রথ, কাটিহারে মহানন্দা এক্সপ্রেসকে এবং সামসিতে আটকে থাকে আপ মালদহ-কুচবিহার ডিএমইউ ও সামসিতে রাঁচি কামাক্ষা এক্সপ্রেস।
আটকে থাকা ট্রেনগুলির বেশিরভাগেরই সকালের আগেই আজমনগর এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার কথা। এ দিন বিস্ফোরক উদ্ধারের জেরে সব ট্রেন-ই গড়পরতা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। জল এবং খাবারের অভাবে নাকাল হন যাত্রীরা। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন স্টেশনে কয়েক ঘন্টা আটকে থাকলেও রেলের তরফে কোনও সাহায্য করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। নিউ জলপাইগুড়ি যাত্রী সংগঠনের সম্পাদক দীপক মহান্তি বলেন, “ট্রেনে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় বিকল্প ব্যবস্থা রাখা উচিৎ ছিল রেল কর্তৃপক্ষের।”
আজমনগর রোড স্টেশনে আটকে থাকা আপ কাঞ্চনকন্যার যাত্রী শ্যামল রায় বলেন, “আজমনগরে পৌঁছাতেই ট্রেন থেমে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেনের জল ফুরিয়ে যায়। স্টেশনে খাবারও পাইনি। যে দুর্ভোগে পড়লাম, তা কখনও ভুলব না।” কুমেদপুরে দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকে দার্জিলিং মেল নিউ জলপাইগুড়িতে ঢোকে বিকেল চারটের সময়। এক যাত্রী বুবাই সরকার বলেন, “আমার সামনে এক অসুস্থ বৃদ্ধা জ্বরে ছটপট করছিল। কিন্তু চিকিৎসক বা কোনও সাহায্য পাইনি। খুব অসহায় লাগছিল।”
কলকাতা থেকে রাধিকাপুরগামী রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ট্রেন এদিন সকাল ৬টার বদলে দুপুর দেড়টায় রায়গঞ্জ ও ২ টায় রাধিকাপুরে পৌঁছোয়। ভোর সাড়ে ৫টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাধিকাপুরগামী ট্রেনটিকে বিহারের খুড়িয়াল স্টেশনে দাঁড় করিয়ে রাখা হলেও রেল কর্তৃপক্ষ খাবার ও পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা না করায় যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। |
|
|
|
|
|