|
|
|
|
ত্রাণ ভুলে অখিলেশ ব্যস্ত রাজ্যের কার্নিভালে
সংবাদ সংস্থা • মুজফ্ফরনগর
২৯ ডিসেম্বর |
ঘরবাড়ি ছেড়ে স্রেফ প্রাণ বাঁচাতেই ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। তবু সদ্যোজাত সন্তানকে বাঁচাতে পারলেন না রুকসার-ইজমানুলহক। মুজফ্ফরনগরের গোষ্ঠী সংঘর্ষে আক্রান্ত ওই দম্পতির দাবি, শামলীর যে ত্রাণশিবিরে তাঁরা রয়েছেন, তাতে রুকসারের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকাতেই এই পরিণতি। অখিলেশ-সরকার অবশ্য এখনও নিরুত্তাপ। বিরোধীদের আরও কটাক্ষ, মুজফ্ফরনগরের ত্রাণশিবিরের যখন এ রকম অবস্থা, তখনই ‘কার্নিভাল’ নিয়ে ব্যস্ত অখিলেশ-প্রশাসন।
রবিবার উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া জেলার সাইফাই গ্রামে চোদ্দো দিন ব্যাপী কার্নিভালের উদ্বোধন করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। হাজির ছিলেন সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদবও। এ নিয়ে বিরোধীদের তোপ, মুজফ্ফরনগরের গোষ্ঠী সংঘর্ষের পর তিন মাস কেটে গেলেও ত্রাণশিবির পরিদর্শনে এসে উঠতে পারেননি মুলায়ম। অথচ নিজের গ্রামে কার্নিভালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। বিষয়টি যে আম নাগরিকের মনে বিরূপ মনোভাব তৈরি করতে পারে, তা বুঝতে পেরে এ দিন অখিলেশও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তৈরি হয়ে এসেছিলেন। প্রথমেই জানান, এই কার্নিভাল নতুন কিছু নয়। সমাজবাদী-পার্টির দশকপ্রাচীন সংস্কৃতির অঙ্গ এটি। তবে একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে হাজির সংবাদমাধ্যমের প্রতি তাঁর খোঁচা, “আমি জানি আপনারা এখানে অনুষ্ঠান দেখতে আসেননি। আপনারা আসলে, টেলিভিশনের পর্দার এক দিকে এই অনুষ্ঠানের ছবির পাশাপাশি মুজফ্ফরনগর ত্রাণ শিবিরের দুর্দশার ছবি তুলে ধরতে এসেছেন।”
কিন্তু সংবাদমাধ্যমের উপর দায় চাপিয়ে যে সরকারের গাফিলতি ঢাকা যাবে না, তা-ও জানেন অখিলেশ। সম্প্রতি জানা গিয়েছিল, ত্রাণশিবিরের শোচনীয় অবস্থা আর অসহনীয় ঠান্ডায় গোষ্ঠী-সংঘর্ষে আক্রান্ত পরিবারগুলির অন্তত ৩৪ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকারকে। এমনকী, রবিবার ত্রাণশিবির পরিদর্শনে আসা আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ যাদবও বলেন, “দুর্গতদের যতটা সাহায্য করা উচিত ছিল, সরকার ততটা সাহায্য করেনি।” কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার এখনও সাহায্যের খতিয়ান দিয়ে চলেছেন।
তাঁরা জানান, গোষ্ঠী-সংঘর্ষে আক্রান্তদের পুনর্বাসনের কাজে ইতিমধ্যেই ৯৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। দাবি শুনে সমালোচকদের একাংশের প্রশ্ন, চোদ্দো দিনের কার্নিভালের জন্য কত টাকা ব্যয় করল সরকার? বিশেষত, এ দিনের অনুষ্ঠানে যে রকম তারকা-সমাহার হয়েছিল, তার পরে এ প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এতেই শেষ নয়। এ দিনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতদের ঠান্ডায় যাতে ন্যূনতম অসুবিধা না হয়, তা নিশ্চিত করতে ‘হিটারের’ বন্দোবস্ত করেছিল অখিলেশ-প্রশাসন। অথচ মুজফ্ফরননগর এবং শামলীর ত্রাণশিবিরে ঠান্ডার সঙ্গে যুঝতে উপযুক্ত সংখ্যক কম্বল-হিটারের বন্দোবস্ত করতে পারেনি সরকার। আরও আছে। অভ্যাগতদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে যাতে দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়, সে জন্য এ দিন উপযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্স-চিকিৎসক-প্যারামেডিকের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেই রাজ্যেরই ত্রাণশিবিরে অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার-ন্যূনতম পরিষেবার ব্যবস্থা নেই।
সেই পরিকাঠামোর অভাবকেই কাঠগড়ায় তুলছেন রুকসার-ইজমানুলহক। গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পর থেকে এই দম্পতির ঠিকানা শামলীর কান্ধলা ত্রাণশিবির। বৃহস্পতিবার রাতে রুকসারের গর্ভযন্ত্রণা শুরু হলে তাঁকে স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই মৃত সন্তানের জন্ম দেন রুকসার। কিন্তু পরিবারের দাবি, ত্রাণশিবিরে সময়মতো দরকারি সাহায্য না মেলাতেই সন্তানের মৃত্যু হয়। তার পর থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন রুকসারের পরিবার। এ নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সুপার রমেশ চন্দ্রের নির্লিপ্ত প্রতিক্রিয়া, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|