শেষ পর্যন্ত বেহাল ট্রামলাইন মেরামতির কাজে হাত লাগাল সিটিসি।
গত ২১ নভেম্বর রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে ট্রামলাইনের প্রায় ৬ ফুট অংশ বিপজ্জনক ভাবে বেরিয়ে থাকায় গুরুতর আহত হন এক মোটরসাইকেল আরোহী। ঝুঁকি না নিয়ে কর্তৃপক্ষ ওই রুটে ট্রাম চলাচলই বন্ধ করে দেন। সিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলাঞ্জন শান্ডিল্য বলেন, “সরকার অর্থ বরাদ্দ করেছে। শীঘ্রই ওই অংশে ট্রামলাইন কংক্রিট করা শুরু হবে।”
পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সকে (এইচআরবিসি) শীঘ্র এই কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধনরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রয়েড স্ট্রিট থেকে লেনিন সরণি পর্যন্ত প্রায় ২ কিমি অংশের লাইন কংক্রিট করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সপ্তাহ দুই বাদে এই কাজ শুরু হবে। প্রস্তুতি চলছে। কাজ শেষ হতে লাগবে প্রায় ৯ মাস। খরচ হবে ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।”
সিটিসি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে ময়দান অঞ্চলে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্ণিত প্রায় ১৫০ মিটার ট্রামলাইন প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। নীলাঞ্জনবাবু বলেন, “নিরাপত্তার স্বার্থে শহরের অন্তত তিন জায়গায় পুরনো লাইন প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছে। প্রতি পর্যায়ে খরচ হবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।” আলাপনবাবু বলেন, “অর্থাভাব থাকলেও পরিবহণে উন্নয়ন ও জনস্বার্থে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
২০১১ সালের শুরুতে শোষবার ট্রামলাইন কংক্রিট করার কাজ হয়েছিল। শহরের বিভিন্ন অংশে ৩৭ কিলোমিটার কংক্রিটের করা গিয়েছে। যে সব অংশে কংক্রিট করা হয়নি, তা দেখভালের জন্য ২০০৯ পর্যন্ত ফি বছর বরাদ্দ হত তিন কোটি টাকা। ২০১০ থেকে এই বরাদ্দ বন্ধ ছিল। সূর্য সেন স্ট্রিট, এলিয়ট রোড, রফি আহমেদ কিদোয়াই স্ট্রিট, রাজা রামমোহন সরণির ট্রামলাইনের উপর দিয়ে ক্রমাগত হরেক গাড়ি চলছে। ঘর্ষণে উঠে যাচ্ছে লাইনের নানা অংশ। এ বার এই খাতে অর্থ বরাদ্দ করল রাজ্য।
পরিবহণ দফতরের দাবি, গত আর্থিক বছরে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে ট্রাম ও ট্র্যাক মেরামতির জন্য। চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে এখন পর্যন্ত বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। যদিও সংস্থা সূত্রের খবর, এ বছরের টাকা ট্রামের ভোল বদলের কাজে একেবারেই ব্যবহার করা হয়নি। বন্ধ হয়ে থাকা হাজরা-ধর্মতলা ট্রামলাইন পুজোর আগে চালুর জন্য এর সিংহভাগ বরাদ্দ হয়েছে। ভূগর্ভস্থ নিকাশির কাজের জন্য এই অংশের ট্রাম বন্ধ ছিল প্রায় ৮ বছর।
‘ট্রাম ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের’ অন্যতম সম্পাদক সুবীর বসু বলেন, “গোটা পরিস্থিতির জন্য দায়ী পরিকল্পনার অসঙ্গতি। ক্রমেই অবস্থার অবনতি হচ্ছে।” পরিবহণ কর্তারা দাবি করছেন, রাজ্যে কোষাগারের যা হাল, তাতে নিগমগুলির জন্য বেশি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ সম্ভব নয়। বারবার বলা সত্ত্বেও সিটিসি আর্থিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের দাবি, “বাম আমলে নিগমে বহু ভুয়ো কর্মী ছিল। আমরা আসার পর কড়াকড়িতে এ রকম অনেককে বাছাই করে বসিয়ে দেওয়া গিয়েছে। এখনও উদ্বৃত্ত কর্মী যথেষ্ট সংখ্যক রয়েছে।”
|