কোর্টের রায়, ৩৫ বছর পরে পেনশন
৫ বছর ধরে সরকারি দফতরের দোরে-দোরে ঘুরেও মেলেনি মৃত স্বাধীনতা সংগ্রামী স্বামীর পেনশন। সুরাহা চেয়ে শেষে গত জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কেষ্টপুরের করুণা দাস। তাঁর আইনজীবী বদ্রীনারায়ণ অধিকারী জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ১৭ জানুয়ারি এ নিয়ে মন্ত্রকের কাছে রিপোর্টও চেয়েছে আদালত।
করুণাদেবী জানান, তাঁর স্বামী নারায়ণ দাস ১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলার যশোহরের লোহাগারা ডাকঘরে আগুন লাগানোর অভিযোগে এক বছর জেলও খেটেছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর কাছ থেকে ‘তাম্রপত্র’ পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে মারা যান নারায়ণবাবু। তার পর থেকেই তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে পড়ে যান করুণাদেবী।
করুণা দাস। —নিজস্ব চিত্র।
কেষ্টপুরের এক চিলতে টালির চালের বাড়িতে বসে ৮০ বছরের বৃদ্ধা করুণাদেবী বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার সময়ে আমার বয়স ছিল ৪৫। সংসার চালাতে সেলাইয়ের কাজ করেছি। বেশির ভাগ দিনই পেট ভরে খাওয়া জুটত না।” তিনি জানান, অভাবের জ্বালাতে দুই ছেলে বহু দিন আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ের পর এখন ছোট ছেলে সুভাষ ও তাঁর পরিবারকে নিয়েই থাকেন তিনি।
করুণাদেবীর আইনজীবী বদ্রীনারায়ণ অধিকারী জানান, নারায়ণবাবু ৬ বছর স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন পেয়েছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে স্বামীর পেনশন পাওয়ার জন্য করুণাদেবী রাজ্যের অর্থ দফতরের ‘পলিটিক্যাল সাফারার পেনশন’ (পিএসপি) বিভাগে আবেদন করেন। রাজ্য সেই আবেদন পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ দফতরে। কিন্তু নারায়ণবাবু ও করুণাদেবীর বিয়ের প্রমাণপত্র না থাকায়, তা ফেরত পাঠায় কেন্দ্র। রাজ্য তৎকালীন অবিভক্ত ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে ফের কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠায়। ওই রিপোর্টে করুণাদেবীকে নারায়ণবাবুর বৈধ স্ত্রী হিসেবে বলা হয়েছিল বলেই আইনজীবীর দাবি। বদ্রীনারায়ণবাবুর অভিযোগ, ওই রিপোর্ট পাঠানোর পরে তিন দশক কেটে গেলেও পেনশন পাননি করুণাদেবী।
তিন দশক পরে নানা টালবাহানার পর শেষে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। তাঁর আইনজীবী বলেন, “২০ ডিসেম্বর বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণবাবুর পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (নম্বর ১১০৪৫) চালু করে ১৭ জানুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে।”
তা হলে কবে মিলবে পেনশন?
এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য সরাসরি উত্তর এড়িয়েছে। তবে মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মন্ত্রক সূত্রের খবর, পেনশনের টাকা অনুমোদন হওয়ার পরে একটি পাশ বইয়ের মাধ্যমে পেনশন দেওয়া হয়। এটাকেই পিপিও বলে। নারায়ণবাবুর পিপিও বইটি স্থগিত হয়ে গিয়েছে। সেটি পুনরায় চালু করে দিলেই সমস্যা মিটে যাবে। এই সামান্য কাজ করতে এত সময় লাগল কেন, তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।
হাইকোর্টের রায়ে আশার আলো দেখলেও স্বস্তি পাচ্ছে না দাস পরিবার। করুণাদেবীর কথায়, “সারা জীবন অনেক কষ্ট সয়েছি। তাই পেনশন হাতে না পেলে বিশ্বাস করতেই ভয় হচ্ছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.