২০০৫ থেকে ২০১৩। টানা আট বছরেও চালু হল না নবদ্বীপের ব্লাডব্যাঙ্ক। নবদ্বীপ এবং পড়শি জেলা বর্ধমানের কয়েক লক্ষ মানুষ চিকিৎসার ভরসাস্থল নবদ্বীপ হাসপাতাল। অথচ সেই হাসপাতাল নিজেই ভুগছে রক্তাল্পতায়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ১২৫ শয্যার এই হাসপাতালে সব সময়ই দু’শো জন ভর্তি থাকেন। এক বিছানায় একাধিক রোগীকে থাকতে হয়। এমনকী, নবদ্বীপ-পূর্বস্থলী অঞ্চলে দুর্ঘটনায় জখমদের প্রথমেই আনা হয় এই হাসপাতালে। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় কুড়ি ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে কোনও ব্লাডব্যাঙ্ক না থাকায় অসুস্থ বা আহত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করে অন্যত্র ‘রেফার’ করা হয়। কোনও রোগীর হঠাৎ রক্ত লাগলে তাঁর পরিজনদের ছুটতে হয় বাইশ কিলোমিটার দূরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন রক্তের কার্ড। অন্যথায় ভরসা দালাল। প্রতি ইউনিট রক্তের জন্য কমপক্ষে ৫০০ টাকা গুনতে হয়।
নবদ্বীপ হাসপাতালে কেন ব্লাডব্যাঙ্ক চালু করা যাচ্ছে না? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দিন কয়েক আগে নবদ্বীপ হাসপাতালে এসেছিলেন রাজ্যের মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সুব্রত মৈত্র, স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব ওঙ্কার সিংহ মিনা-সহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে চলে হাসপাতালের হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা। ছিলেন পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা, উপ পুরপ্রধান তুষার ভট্টাচার্য সহ পুরসভার অনেক কাউন্সিলার। অথচ ছিলেন না হাসপাতাল সুপার। তাঁর বদলে ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপার আশিসরঞ্জন কুঁয়ার।
কেন নবদ্বীপ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি? জবাবে আশিসরঞ্জনবাবু জানান, ২০০৫ সালের ২১ জুন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কল্যাণীর বন্ধ হয়ে যাওয়া নেতাজি সুভাষ স্যানেটোরিয়ামের ব্লাডব্যাঙ্কের যন্ত্রপাতি দিয়ে নবদ্বীপে ব্লাডব্যাঙ্ক চালু হবে। সেই মত নবদ্বীপ হাসপাতালের ‘আইসোলেশন’ ওয়ার্ডের দোতলায় পাঁচটি ঘর নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের পরিকাঠামোও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে নীচে সংক্রামক ওয়ার্ড থাকার কারণ দেখিয়ে চূড়ান্ত অনুমতি দিতে আপত্তি করে স্বাস্থ্য দফতর।
ব্লাডব্যাঙ্ক চালু না হওয়া প্রসঙ্গে সুব্রত মৈত্র বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতির ফান্ড-সহ বেশ কিছু জায়গা থেকে এই কাজের জন্য পর্যাপ্ত টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ব্লাডব্যাঙ্কের ব্যাপারে আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। আগামী মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি।” রাজ্যের মন্ত্রী তথা নদিয়া জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “নবদ্বীপ হাসপাতালের জন্য আলাদা ‘আইসোলেশন’ ওয়ার্ড গড়া হয়েছে যাতে কোনও সমস্যা না হয়। দ্রুত ব্লাডব্যাঙ্ক চালু হবে।” নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ বাবু বলেন,“আশা করছি আগামী এপ্রিলেই ব্লাডব্যাঙ্ক চালু হবে।” |