দারিদ্র্যকে হারিয়ে দৌড়
নিজস্ব সংবাদদাতা • চুঁচুড়া |
অভাবকে উপেক্ষা করে অবিরাম দৌড়ে চলেছেন সংগ্রাম।
চুঁচুড়ার শান্তিপল্লির বাসিন্দা সংগ্রাম মল্লিক। চলতি মাসেই ২৯ তম রাজ্য মাস্টার অ্যাথলেটিকসে দৌড় প্রতিযোগিতায় ১০ হাজার মিটারে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ৫ হাজার মিটারে তাঁর স্থান দ্বিতীয়।
স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার। কুরিয়ার সার্ভিসে তাঁর ছোটখাট একটা চাকরি টেনে নিয়ে চলেছে সংসারের যাবতীয় দায়দায়িত্ব। ১৯৭৮ সাল থেকে দৌড় শুরু করেছিলেন সংগ্রাম। প্রথমে জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় নামেন। ১৯৮৪ সালে ৮০০ মিটার ও ১৫০০ মিটার ম্যারাথনে জেলা স্তরে প্রথম হন। ’৮৭ সালে রাজ্যের হয়ে প্রথম তেহট্ট থেকে কৃষ্ণনগর স্টেডিয়াম পর্যন্ত ৪২ কিমি ম্যারাথন দৌড়ে তৃতীয় স্থান দখল করেন। |
দৌড়বিদ সংগ্রাম। ছবি: তাপস ঘোষ। |
এরপর আর থামেনি তাঁর দৌড়। খুব অল্পদিনের মধ্যে সংগ্রাম রাজ্য থেকে জাতীয় স্তরে পৌঁছে যান। ১৯৯১ সালে ইন্দিরা মেমোরিয়াল ম্যারাথন দৌড়ে ইলাহাবাদে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৯৬ সালে পুণেতে আর্ন্তজাতিক ম্যারাথন দৌড়ে রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন সংগ্রাম। ১৯৯৭ সালে গয়ায় ম্যারাথন দৌড়ে রাজ্যের হয়ে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। আবার সিকিমে রাজ্যের হয়ে ম্যারাথন দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে সন্মানের ঝুলি বাড়াতে থাকেন সংগ্রামবাবু। নেতাজী জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ম্যারাথন দৌড়ে মণিপুরের মৈনাঙ থেকে কলকাতা হয়ে চুঁচুড়া পর্যন্ত ২৩০০ কিমি রাস্তা ২৯ দিনে পাড়ি দেন তিনি। পুষ্টিকর খাবার কপালে না জুটলেও দৌড় বন্ধ করেননি সংগ্রাম মল্লিক। ৪৫ বছর বয়সে দৌড়কে ভালবেসে একটা চাকরি জোটাতে না পারলেও প্রতিদিন সকালে অনুশীলন করতে ভোলেন না সংগ্রামবাবু। তাঁর অভিযোগ পূর্বতন বাম সরকারের আমলে সরকারের হয়ে নানা প্রচারমূলক দৌড়ে যোগ দিয়েছেন। সন্ত্রাসের জন্য দৌড়, নদীর জন্য দৌড়, সর্বশিক্ষার জন্য দৌড়। শুধুই দৌড়েছেন তিনি। দৌড়ে দৌড়ে রাজ্যের মুখ উজ্জ্বল করলেও নিজের জন্য কিছুই করতে পারেননি। জুটেছে শুধুই প্রতিশ্রুতি।
অভাবের সংসারে বহু কষ্ট সহ্য করেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সংগ্রাম। |
|