|
|
|
|
বাতানুকূল যন্ত্র থেকেই কি আগুন, তদন্তে রেল বোর্ড
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অন্ধ্রপ্রদেশে রেলের কামরায় আগুনের তদন্তে নেমে উঠে আসছে রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির দিকটাই। শনিবার ভোরে অন্ধ্রের অনন্তপুরে বেঙ্গালুরু-নান্দেড় এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় আগুন লাগে। ঝলসে মৃত্যু হয় ২৬ জন যাত্রীর। আহত হন অন্তত ১৩ জন। এই ঘটনার পরে রেল প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিল, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছিল কামরায়। রবিবার রেল সূত্রের খবর, শর্ট সার্কিট নয়, বাতানুকূল যন্ত্র থেকেই আগুন লেগেছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, শীতকালে বাতানুকূল যন্ত্রের ‘ব্লোয়ার’ চালানো থাকে। এই ব্লোয়ারে একটা হিটার থাকে। তা দিয়েই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করানো হয়। রেলের একটি অংশের বক্তব্য, ক্রমাগত ব্লোয়ার চলতে থাকার ফলে এক সময় যন্ত্রটি ক্রমাগত গরম হতে থাকে। তা থেকেই শর্ট সার্কিট হয়। ঘটনাচক্রে, ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে দুন এক্সপ্রেসেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, ওই ঘটনার তদন্তে নেমে জানা গিয়েছিল ক্রমাগত ব্লোয়ার চলতে থাকার ফলেই গরম হয়েছিল যন্ত্রটি। তা থেকেই আগুন ছড়িয়েছিল।
যদিও উন্নত ধরনের বাতানুকূল যন্ত্রে এমন ঘটনা কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, এখন বাতানুকূল যন্ত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর যন্ত্রটি চালু অথবা বন্ধ হয়। অর্থাৎ একটানা চলতে চলতে যন্ত্রটি গরম হয়ে উঠলে তা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। কিছু ক্ষণ পর যন্ত্রটি ঠান্ডা হলে ফের নিজে থেকেই চালু হয় তা। বর্তমানে গৃহস্থালি কাজে রেফ্রিজারেটরেও এমন ব্যবস্থা থাকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “যন্ত্রের ভিতরে একটি সুইচ থাকে। সেটিই তাপমাত্রা বাড়লে-কমলে প্রয়োজন মতো যন্ত্রটিকে চালু অথবা বন্ধ করে।” তিনি জানান, ওই সুইচটি বিগড়ে গেলে যন্ত্রটি নিজে থেকে চালু-বন্ধ হবে না। সে ক্ষেত্রে বিপদ ঘটতে পারে। “এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, তা অবশ্য না খতিয়ে দেখে বলা সম্ভব নয়।”মন্তব্য দেবাশিসবাবুর।
রেল সূত্রের অবশ্য বক্তব্য, বাতানুকূল যন্ত্রে থার্মোস্ট্যাট (বিশেষ যন্ত্রাংশ যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ব্লোয়ার চালু বা বন্ধ করে) থাকলেও অনেক সময় তা নিজে-নিজে কাজ করে না। সে ক্ষেত্রে কামরায় থাকা এসি অ্যাটেন্ডেন্টরা তাপমাত্রা অনুযায়ী বাতানুকূল যন্ত্র চালু বা বন্ধ করেন। এ ক্ষেত্রে এসি অ্যাটেন্ডান্ট কামরায় ছিলেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছেন রেল-কর্তারা।
রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দু’টি বাতানুকূল কামরায় এক জন করে এসি অ্যাটেন্ডান্ট ও প্রতি কামরাপিছু এক জন করে কোচ অ্যাটেন্ডান্ট থাকার কথা। কোচ অ্যাটেন্ডান্টদের ঠিকাদার সংস্থা মারফত নিয়োগ করা হলেও এসি অ্যাটেন্ডান্টরা রেলের নিজস্ব কমী হন। রেলের কর্তারা জানান, রেলের কর্মী সংখ্যা কম হওয়ায় কোচ অ্যাটেন্ডান্টদের দিয়েই এসি অ্যাটেন্ডান্টের কাজ করানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, কোচ অ্যাটেন্ডান্টেরা বাতানুকূল যন্ত্রের বিষয়ে পটু নন। ফলে অপটু হাত থেকে বিপদ ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন তদন্তকারীরা।
বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন রেলের মেরামতির দিকটি নিয়েও। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, বাতানুকূল যন্ত্রের ভিতরে প্রচুর তার থাকে। সেগুলির গায়ে তাপ-নিরোধক পদার্থের আবরণ থাকে। ওই আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে শর্ট সার্কিট ঘটতে পারে বলেই তিনি মনে করেন। ওই বিশেষজ্ঞের কথায়, “ওই তারগুলি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের না করলে বিপদ অসম্ভব নয়।”
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, এ দিনই রেল দুর্ঘটনা নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খাড়্গে। সেই বৈঠকে উঠে এসেছিল রেলের কামরায় স্মোক অ্যালার্ম লাগানোর বিষয়টি। রেলের কর্তারা জানান, ট্রেনের কামরায় স্মোক অ্যালার্ম লাগানোর বিষয়টি এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসে কয়েকটি লাগানো হয়েছে। এ সব কথাই রেল-কর্তারা মন্ত্রীকে জানিয়েছেন। রেলের এক সূত্র জানান, বাতানুকূল যন্ত্রের ত্রুটির পাশাপাশি এই ঘটনার পিছনে নাশকতা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের একটি দলও তদন্তের কাজ শুরু করেছে। ১৩ সদস্যের ওই দলটি এ দিন অভিশপ্ত ওই কামরাটি পরীক্ষা করে দেখে। কী ভাবে ওই কামরায় আগুন লাগল, তা জানতে প্রয়োজনীয় কিছু নমুনাও এ দিন সংগ্রহ করেন বিশেষজ্ঞেরা। অন্ধ্র পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যাত্রীদের পরিচয় জানার জন্য প্রতিটি দেহেরই ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। |
পুরনো খবর: ভোরে এসি কামরায় আগুন, পুড়ে মৃত ২৬ |
|
|
|
|
|