শহরের প্রথম সারির হোটেলগুলির নিরাপত্তা যে কতটা ঢিলেঢালা, তা ফের মালুম হল। খাস কলকাতায় দু-দু’টি পাঁচতারা হোটেলের দিনের পর দিন ভুয়ো পরিচয়ে কাটিয়ে তা দেখিয়ে দিলেন শহরেরই এক যুবক। পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলের বিল না-মিটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠার পরে বিকাশ বেরি নামে ওই যুবককে রবিবার সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শহরের বড়সড় হোটেলগুলির অতিথি-তালিকা যাচাই করায় ফাঁকফোকরের চেহারাটাও এই ঘটনার পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ঠিক কী ভাবে দু-দু’টি হোটেলের আধিকারিকদের বোকা বানালেন বিকাশ? পুলিশ জানায়, প্রথমে পার্ক স্ট্রিটের একটি পাঁচতারা হোটেলে দিন পনেরো থাকেন তিনি। কর্পোরেট অতিথির পরিচয় দিয়ে দিব্যি খানাপিনা চলছিল। তবে যত দিন থাকার কথা বলে তিনি ঘর ‘বুক’ করেছিলেন, তত দিন থাকেননি। এর পরে সেক্টর ফাইভের একটি হোটেলে গিয়ে ওঠেন বিকাশ। সেখানেও পরিচয় ভাঁড়িয়ে মসৃণ ভাবেই দিন কাটছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ওই হোটেলের ঘরেই শেষ পর্যন্ত তাঁর কোমরে দড়ি পড়ল।
প্রশ্ন উঠেছে, নামী-দামি হোটেলের লোহার বাসরে ছিদ্রটা কী ভাবে তৈরি করা গেল? পুলিশি তদন্তে প্রকাশ, ছিদ্র বলতে স্রেফ এক কর্পোরেট সংস্থার নামে একটি ভুয়ো ই-মেল। পুলিশ জানায়, মাস খানেক আগে পার্ক স্ট্রিটের ওই হোটেলে সেই ই-মেল আসে। তাতে লেখা ছিল, সংস্থার কর্তা বিকাশ বেরি ৬ ডিসেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই হোটেলে থাকবেন। এর পরেই বিকাশের জন্য একটি ঘর ‘বুক’ করা হয়। নির্দিষ্ট দিনেই হোটেলে হাজির হন বিকাশ। এবং থাকতে শুরু করেন। তাঁকে দেখে এবং তাঁর চলনে-বলনে ঘুণাক্ষরেও কারও কোনও সন্দেহ হয়নি।
অবশেষে বিকাশ হঠাৎ উধাও হওয়ার পরে হোটেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। শনিবার পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২১ ডিসেম্বর থেকে ‘উধাও’ হয়ে যান বিকাশ। বিল হয়েছিল আড়াই লক্ষ টাকা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিকাশ তাঁর অফিসের যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, সেখানে গিয়ে দেখা যায় রয়েছে স্রেফ ফাঁকা মাঠ। কিন্তু হোটেলে বিকাশ যে মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন, সেটিই শেষমেশ তাঁকে ধরিয়ে দেয়। বিকাশের মোবাইল নম্বরের ‘কল’ জরিপ করেই বোঝা যায়, বিকাশ কোথায় রয়েছেন। অভিযোগ মেলার এক দিনের মধ্যেই বিকাশের অবস্থান চিহ্নিত করে সেক্টর ফাইভের হোটেলে গিয়ে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের বাসিন্দা বিকাশ হোটেল ম্যানেজমেন্টের ছাত্র ছিলেন। ফলে হোটেলের ঘাঁতঘোঁত ভালই জানা ছিল তাঁর। এক জন সাধারণ প্রতারকের এই দৌরাত্ম্যের পরে হোটেলগুলির আরও সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করে পুলিশ। পার্ক স্ট্রিটের হোটেলটির তরফে এই ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা না-হলেও পুলিশি তৎপরতায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন হোটেলের মুখপাত্র। আর সল্টলেকের হোটেলটির জি এম কেনেথ স্কট মেনে নিয়েছেন অতিথিদের পরিচয় জানতে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। তিনি বলেন, “এই ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নেব।” |