‘সোলার সিটি’ হওয়ার পথে কার্যত অনেকটা এগিয়ে গেল নিউ টাউন। হিডকো সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ টাউনকে সোলার সিটি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অপ্রচলিত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্ট অনুমোদন করেছে ওই মন্ত্রক। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)-র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকদের দিয়ে আমরা এই প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরি করেছিলাম। দিল্লিতে সেই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। সেটি অনুমোদিত হয়েছে। ফলে আর কোনও বাধা রইল না। এ বার দরপত্র ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার পরেই নিউ টাউনকে সোলার সিটি হিসেবে তৈরি করার কাজ শুরু হবে।” |
রং-ঝিলমিল। সন্ধ্যার আলোয় মায়াবী ইকো পার্ক। রবিবার। ছবি: শৌভিক দে। |
হিডকো সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় বড় সৌর প্যানেল বসাতে গেলে অনেক জমির প্রয়োজন। কিন্তু হিডকো সৌর প্যানেল বসানোর জন্য কোনও জমি নষ্ট করছে না। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিকল্পিত উপনগরী নিউ টাউনে জমির সদ্ব্যবহারের কথা চিন্তা করা হচ্ছে প্রথম থেকেই। সে কারণে সৌর প্যানেল বসানোর জন্য একটি কৃত্রিম খালকে বেছে নেওয়া হয়েছে। হিডকো সূত্রে খবর, নিউ টাউনের ইকো পার্কের পিছনে ওই কৃত্রিম খাল তৈরি করা হয়েছে। সেই খালের উপরে সৌর প্যানেলগুলি বসানো হবে। সৌর প্যানেল থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ সরাসরি চলে যাবে নিউ টাউনের ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অফিসের গ্রিডে। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, এই সৌর প্যানেল থেকে ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হবে। হিডকোর দাবি, যেহেতু এই বিদ্যুৎ সৌর প্রযুক্তিতে তৈরি হয়ে সরাসরি ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসে চলে যাবে, তাই এর থেকে তারা কিছুটা ছাড়ও পাবে। দেবাশিসবাবু বলেন, “এর ফলে আমাদের বিদ্যুতের বিলে কিছুটা সাশ্রয় হবে। সেই সাশ্রয় থেকে আমরা আবার শহরের সৌর্ন্দযায়নে মনোনিবেশ করতে পারব।”
কলকাতার লাগোয়া নতুন এই উপনগরীতে যেমন সৌর্ন্দযায়ন হচ্ছে, পাশাপাশি এই উপনগরীকে যতটা সম্ভব পরিবেশ-বান্ধব করে তোলা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে পরিবেশ-বান্ধব ইকো পার্ক। দেবাশিসবাবু বলেন, “আমরা নিউ টাউনকে সোলার সিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রের অপ্রচলিত ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি মন্ত্রকের কাছে আবেদন করেছিলাম। কোনও শহরকে সোলার সিটি আখ্যা পেতে হলে পাঁচ বছরের মধ্যে সেই শহরে বিদ্যুতের মোট খরচের দশ শতাংশ কমাতে হয়। কী ভাবে নিউ টাউনকে সোলার সিটি হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে, সে ব্যাপারে বেশ কিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা।”
উল্লেখ্য, নিউ টাউনের আবাসন ও অফিসগুলিতে সৌরশক্তি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোয় ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে হিডকো। বিভিন্ন অফিসে ‘রুফ টপ সোলার প্যানেল’ বসানোর জন্য তারা আবেদনও করেছে। এ ছাড়াও, সোলার ওয়াটার হিটার থেকে শুরু করে ভাল মানের বিদ্যুৎ সামগ্রী ব্যবহারের জন্য বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। হিডকোর দাবি, এর ফলে বিদ্যুতের খরচ বেশ কিছুটা কমবে। হিডকোর ইঞ্জিনিয়ারেরা জানিয়েছেন, ভাল মানের বিদ্যুৎ সামগ্রী কিনলে প্রথমে খরচ হয় একটু বেশি। কিন্তু পরবর্তীকালে বিদ্যুতের বিল কম আসে। এসি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিনের ক্ষেত্রে দেখা যায় ফাইভ স্টার যুক্ত বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দাম একটু বেশি হয় ঠিকই। কিন্তু পরবর্তীকালে বিদ্যুতের বিলে বেশ কিছুটা সাশ্রয় হওয়ায় আখেরে লাভ হয় ক্রেতাদেরই। |