বিরোধীদের ‘ঢাকা চলো’ কর্মসূচি রুখতে নিরাপত্তাবাহিনীর পাশাপাশি দলীয় কর্মীদেরও পথে নামাল শাসক আওয়ামি লিগ। ফলে, উত্তপ্ত হয়ে উঠল ঢাকা। দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন দু’জন। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছে বিরোধীরা। ফলে, আগামী কয়েক দিনে বড় গোলমালের আশঙ্কায় ভুগছে ঢাকা।
৫ জানুয়ারির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইস্তফা চেয়েছিল বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার বিএনপি-সহ বিরোধী দলগুলি। দেশের দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল তারা। হাসিনা সরকার সেই দাবি না মানায় শুরু হয় বিরোধ।
বেশ কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ ও হিংসায় জড়িয়েছেন বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামির মতো দলগুলির কর্মীরা। আজ গণতন্ত্র রক্ষা করতে ঢাকা চলো কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিরোধীরা। বিভিন্ন সরকারি দফতর অবরোধ করে ৫ জানুয়ারির ভোট বানচাল করাই উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি, জামাত ও অন্য বিরোধীদের। সেই কর্মসূচি রুখতে যে কড়া পদক্ষেপ করা হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল হাসিনা সরকার। |
গুলশনের বাড়িতে উত্তেজিত খালেদা। রবিবার বিকেলে এপি-র ছবি। |
আজ ঢাকাগামী বাস, ফেরি ও ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করে রাজধানীকে কার্যত বাকি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে হাসিনা সরকার। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রায় ১ হাজার বিরোধী সমর্থককে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে গোলমাল ঠেকানো যায়নি।
মিছিলের শেষে ঢাকার নয়া পল্টন এলাকায় সভা করার কথা ছিল বিরোধীদের। আজ সকাল থেকেই এলাকার দখল নেয় নিরাপত্তাবাহিনী। কয়েক দিন ধরেই গুলশন এলাকায় খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘিরে ছিল পুলিশ। আজ সেই বেষ্টনী জোরদার করা হয়।
ঢাকার মালিবাগে দুপুর বারোটা নাগাদ জামাতে ইসলামি সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশের। পুলিশের দাবি, মিছিল থেকে বোমা ছোড়েন জামাত কর্মীরা। ফলে ‘শূন্যে’ গুলি চালায় পুলিশ। ওই ঘটনায় মনসুর আলি নামে এক যুবক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
ক্রমশ হিংসা ছড়িয়ে পড়ে শহরের অন্যান্য প্রান্তেও। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ কমলাপুর স্টেশনে তল্লাশি চালাচ্ছিল রেল পুলিশের ওসি আব্দুল মজিদের নেতৃত্বাধীন বাহিনী। তখনই ঘটে বিস্ফোরণ। মজিদ জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করার সময়েই এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন রেল পুলিশের কনস্টেবল আবুল কাশেম। আহত হয় ওই দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তি।
গোলমাল হয় সুপ্রিম কোর্ট চত্বরেও। সকাল থেকেই সেখানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বিরোধী দলের সমর্থক আইনজীবীরা। সকালে তাঁরা একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করলে জলকামান ও শব্দ গ্রেনেড ব্যবহার করে সেই চেষ্টা ভন্ডুল করে দেয় পুলিশ। দুপুর নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের গেট খুলে বিরোধী সমর্থকদের উপরে চড়াও হন আওয়ামি লিগ কর্মীরা। তাঁদের হামলায় তিন বিরোধী সমর্থক আহত হয়েছেন। বাকি দেশেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহিতে এক জামাতে ইসলামি নেতার বাড়িতে রাখা বোমা ফেটে তাঁর ১০ বছরের ছেলে ও ৫ বছরের ভাইপো আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গুলশনে খালেদা জিয়ার বাড়ি কয়েক দিন ধরেই ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। আজ সেই নিরাপত্তা বেষ্টনীতে যোগ দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন। বিকেলে নয়া পল্টনে সভায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন খালেদা। তাঁকে বাধা দেন মহিলা পুলিশরা। তাঁদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় খালেদার। হাসিনার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। এক মহিলা পুলিশকে খালেদা বলেন, “তোমার বাড়ি কি গোপালগঞ্জে? গোপালগঞ্জের নামই বদলে দেব। গোপালগঞ্জ বলে কিছু থাকবে না।”
পরে খালেদা বলেন, “এই সরকার অবৈধ, অগণতান্ত্রিক। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এই সরকার সব কিছু করছে।” বাড়ি থেকে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় বিএনপি নেত্রী মানুষকে নয়া পল্টনে দলের সদর দফতরের সামনে জড়ো হতে বলেন। সেই সদর দফতরের সামনেও ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা। ওই এলাকা থেকে বেশ কিছু বিএনপি নেতা-নেত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খালেদার উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী।
সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাবে বিএনপি-র ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৮ বিরোধী দলের জোট ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্না কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।” ক্লাব থেকে বেরোনোর সময়েই তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়।
হাসিনা সরকারের বক্তব্য, বিরোধীদের গোলমাল পাকানোর ছক ভন্ডুল করে দেওয়া হয়েছে। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্য, “গত মে মাসে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের মতো আজ ঢাকায় ব্যাপক তাণ্ডব করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপি-জামাতের।” হাসিনা সরকার জানায়, ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে কড়া নিরাপত্তা থাকবে। তবে জরুরি অবস্থা জারির পরিকল্পনা নেই। |
পুরনো খবর: খালেদার বার্তা |