শুধু মন্দিরে দেব-দেবীর গয়না চুরিই নয়, দুষ্কৃতীদের নিশানায় এ বার স্কুলের কম্পিউটার। গত দেড় মাসের মধ্যে কালনা মহকুমার বিভিন্ন স্কুল থেকে খোয়া গিয়েছে প্রায় ৪০টি কম্পিউটার। অথচ কোনও ক্ষেত্রেই চিহ্নিত করা যায়নি অপরাধীদের। উদ্বিগ্ন স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে পড়ুয়া। পুলিশ দাবি করেছে, এই সমস্ত চুরির ঘটনায় একটি বড় চক্রের হাত রয়েছে। দ্রুত অপরাধীদের খুঁজে বের করার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
মহকুমার পাঁচ ব্লকের বেশির ভাগ স্কুলেই রয়েছে কম্পিউটার। সর্বশিক্ষা মিশন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, ভোকেশনাল দফতর থেকে আসে কম্পিউটারগুলি। কম্পিউটার ছাড়াও স্কুলগুলিতে রয়েছে প্রোজেক্টার, ওয়েবক্যামের মতো নানা দামি যন্ত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশির ভাগ স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। রাতে থাকে না নিরাপত্তা কর্মী। আবার বেশ কিছু স্কুলের আশপাশে নেই জনবসতি। ফলে দুষ্কৃতীদের কাছে ওই সমস্ত স্কুলে ঢুকে কম্পিউটার চুরি করা খুবই সামান্য ব্যাপার।
স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, চলতি বছরের অগস্ট মাস থেকে স্কুলে কম্পিউটার চুরি বেড়েছে। গত ৪ অগস্ট রাতে কালনা ১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের খড়িলাল উচ্চবিদ্যালয়ে চুরি যায় একটি কম্পিউটার। স্কুল কর্তৃপক্ষ থানায় অভিযোগও দায়ের করে। এ মাসের ১১ তারিখ রাতে কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের হাটগাছা উচ্চবিদ্যালয় থেকে খোয়া যায় ৯টি কম্পিউটার। কালনা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। ২৪ নভেম্বর রাতে পিপলন শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দির থেকে চুরি হয় ১০টি কম্পিউটার। ২৮ ডিসেম্বর সকালে কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাহাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের কম্পিউটার কক্ষ থেকে খোয়া যায় ১০টি কম্পিউটার এবং একটি প্রোজেক্টার যন্ত্র। বিষয়টি স্কুলে জানান প্রধান শিক্ষক। ওই দিনই পাথরঘাটা উচ্চবিদ্যালয়ের গেটের তালা ভেঙে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। চুরি করে পালায় ১২টি কম্পিউটার, একটি প্রোজেক্টার এবং প্রিন্টার যন্ত্র। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। এই সমস্ত চুরির ঘটনার এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ধরা পড়েনি কেউ। রবিবার মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “শুধু কালনা মহকুমা নয়। বর্ধমান জেলা এবং আশপাশের অন্য জেলার স্কুলগুলিতেও কম্পিউটার চুরি হচ্ছে। এর পিছনে একটি চক্র রয়েছে। চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।”
পুলিশের অনুমান, রাতে পাহারা ও আশপাশে জনবসতি না থাকায়, স্কুলে ঢুকে চুরি করা সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ ছাড়া কম্পিউটারের ভাল বাজার থাকায় চোরাই মাল বিক্রি করতেও সমস্যা হচ্ছে না চোরেদের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বেসরকারি সংস্থা বহু স্কুলেই কম্পিউটার শেখানোর দায়িত্বে রয়েছে। ওই সংস্থার ব্যাপারে খোঁজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া চোরাই মাল কোথায় বিক্রি করা হচ্ছে, সে ব্যাপারেও খোঁজ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ দিকে, কম সময়ের মধ্যে এত সংখ্যক কম্পিউটার চুরি হওয়া নিয়ে চিন্তায় শিক্ষকেরা। সিমলন অন্নপূর্ণা কালী বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক দেবনাথ শিকদার জানান, সর্বশিক্ষা মিশন থেকে পাওয়া ৫টি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে পাওয়া ১০টি এবং ভোকেশনাল দফতর থেকে পাওয়া ৮টি কম্পিউটার রয়েছে স্কুলে। এ ছাড়াও স্কুলের কেনা দু’টি কম্পিউটার রয়েছে। রয়েছে ওয়েবক্যাম, প্রোজেক্টারও। অথচ নেই রাত পাহারার ব্যবস্থা। এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় তিনি ও অন্য শিক্ষকেরা। কালনার মহারাজা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষের কথায়, “স্কুলে এই মূহূর্তে কম্পিউটারের সংখ্যা ৩০। যার দাম ৬ লক্ষ টাকারও বেশি। রাতে একজন পাহারাদার রয়েছে।” যে সমস্ত স্কুলে রাত পাহারার ব্যবস্থা নেই, সেখানে কী ভাবে সুরক্ষিত থাকবে কম্পিউটার, উঠছে প্রশ্ন। |