খেতমজুরদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত পক্ষপাতদুষ্ট তালিকা তৈরি করেছে, এই অভিযোগে শিল্পতালুকের রাস্তা তৈরিতে বাধা দিলেন কিছু গ্রামবাসী। বর্ধমানের পানাগড় শিল্পতালুকে রবিবার সকালে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে যান বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, “বিশদে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ করা হবে।”
কাঁকসা ও আউশগ্রামের মোট চারটি মৌজায় প্রায় ১,৪৫৮ একর জমিতে গড়ে উঠছে পানাগড় শিল্পতালুক। ২০০৯ থেকে সেখানে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। দু’টি সংস্থা কারখানা গড়া শুরুও করেছে। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রে খবর, ইন্ডিয়ান অয়েল, মারুতি-সহ আরও ১২টি সংস্থা বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে শিল্পতালুকের ভিতরে সংযোগকারী ৯ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি নিয়ে।
রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, ওই রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণ করে জমি মালিক, খেতমজুর, বর্গাদার মিলিয়ে প্রায় চার হাজার মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কাজও কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু কিছু অংশে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যায় পুরো রাস্তা তৈরি করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল, খেতমজুরদের ক্ষতিপূরণ বাবদ একশো দিনের কাজের ২৫০ দিনের মজুরি দিয়ে দেওয়া হবে। এর পরেই আউশগ্রামের কোটা ও চণ্ডীপুর মৌজার ১,০৩৪ জন নিজেদের খেতমজুর দাবি করে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝে নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায় খেতমজুরদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া। জেলা প্রশাসন নতুন করে প্রাপক-তালিকা চায়। কোটা পঞ্চায়েতে সদ্য ক্ষমতায় আসা তৃণমূলের বোর্ড ৩৭৪ জনকে খেতমজুর হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসনের কাছে তালিকা পাঠায়। সেই অনুযায়ী, ফের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়। মাথাপিছু ৩৭ হাজার টাকা করে ২৪০ জন ইতিমধ্যে চেক নিয়েছেন বলেও প্রশাসনের দাবি।
কিন্তু এ দিন রাস্তা তৈরিতে নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থা কাঁকসার মাধবমাঠে সাইট অফিস তৈরি করতে গেলে গোলমাল বাধে। কোটা থেকে বেশ কিছু বাসিন্দা গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কাঁকসারও কয়েক জন যোগ দেন। তাঁদের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের তৈরি করা তালিকা থেকে অনেক প্রকৃত খেতমজুরের নাম বাদ গিয়েছে। আবার খেতমজুর না হলেও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নাম থেকে গিয়েছে কিছু জনের। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই নিজেদের তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে পরিচয় দেন। তাঁদের অভিযোগ, “দলের নেতারাই আমাদের বঞ্চিত করে নিজেদের কাছের লোকেদের পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।” সাইট অফিস গড়ার জন্য সাফ করে এক পাশে সরিয়ে রাখা আগাছায় আগুন লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি দেখে ওই ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দেন। বহু চেষ্টা করেও এ দিন কোটা পঞ্চায়েতের প্রধান সুচিত্রা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তালিকা তৈরিতে পক্ষপাতের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সম্পাদক তথা কাঁকসার জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী জানান, শিল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা খেতমজুরদের বুঝিয়ে রাস্তা তৈরির ব্যবস্থা করা হবে। |