শহরে সভা করতে এসে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পার্টি অফিস ভাঙচুর, বিরোধী দলের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রবিবার পাল্টা সভা করতে এসে বাম আমলে বর্ধমান জুড়ে সিপিএমের সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়।
এ দিন বর্ধমানের আলমগঞ্জ গোডাউন মাঠে তৃণমূলের সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই জেলার নানা প্রান্ত থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আসতে শুরু করেন। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, আশি হাজারেরও বেশি লোক শহরে জমায়েত হন। তবে ওই মাঠে ৬৫ হাজারের বেশি লোক ধরে না বলে পুলিশের দাবি। মাঠে ঢুকতে ভিড়ে ধাক্কাধাক্কিও হয়। অনেকে মাঠে পৌঁছতে না পেরে মিছিল করে ফিরে যান। পুলিশ সুপার বলেন, “একটা সময় এত লোক সভাস্থলে ঢুকতে শুরু করে যে আমাদের মোতায়েন পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হয়।” জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকেই দলের কর্মীরা এসেছিলেন বলে তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন। সভায় এসে দলের অনেক নেতা মঞ্চে না উঠলেও মুকুলবাবু তাঁদের পরে ডেকে নেন। |
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, এই সভা ৫ জানুয়ারি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এগিয়ে আনা হয়। গত মঙ্গলবার আলমগঞ্জের হারাধনপল্লির মাঠে সিপিএমের সভায় বুদ্ধবাবু যে সব অভিযোগ করে গিয়েছেন, তার জবাব দিতেই সভা এগিয়ে আনা, মেনে নিয়েছেন মুকুলবাবু। সে দিন বুদ্ধবাবু অভিযোগ করেছিলেন, বর্ধমানে ধানচাষ কমছে। তাঁদের আমলে এই জেলায় বেশ কিছু কল-কারাখানা তৈরির উদ্যোগ হলেও এখন তা আর বাস্তবায়িত হয়নি।
মুকুলবাবু এ দিন বলেন, “আগের সরকার দু’লক্ষ তিন হাজার কোটি টাকা দেনা রেখে গিয়েছে। তার সুদ দিতে হচ্ছে ২১০০০ কোটি টাকা। রাস্তাঘাট করব কী করে? তবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দমানো যায়নি। তিনি রাজ্যের উন্নয়ন ঘটিয়ে চলেছেন। বর্ধমানের শতকরা ৯৫ ভাগ চাষি কিষান ক্রেডিট কার্ড হাতে পেয়ে গিয়েছেন। ফলে তাঁদের আর মহাজনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, “বুদ্ধবাবুরা বলছেন, তাঁদের কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে। কোন মুখে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন? মাত্র চার বছর আগে আমরা কি বিকেল ৪টের পরে সভা করতে পারতাম? খণ্ডঘোষ-রায়নার বিস্তীর্ণ এলাকায় ভোটের সময়ে এজেন্ট বসাতে পারতাম না। আগে পুরভোটে কবে আমাদের বুথে বসতে দেওয়া হত? এ বার মিথ্যা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পুরভোটে প্রার্থী তুলে নিলেন ওঁরা। আসল ভয় ছিল, ০-৩৫ ফলে হারবেন।” তিনি যোগ করেন, “ওঁরা শিল্পের কথা বলছেন? ওঁদের আমলেই তো রাজ্যে চুয়ান্ন হাজার কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মমতা যে ভাবে পাহাড়কে শান্ত করেছেন, জঙ্গলমহলকে মূল স্রোতে ফিরিয়েছেন, তাঁর মতো করে কেউ তা করতে পারেননি। আর তাতেই রাগ হয়ে যাচ্ছে বুদ্ধদেববাবুদের।” চোখে ঝাপসা দেখছেন বলে বুদ্ধবাবুরা উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না বলেও এ দিন মন্তব্য করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনূল হকের পাল্টা দাবি, “আসলে ওঁরাই চোখে ঝাপসা দেখছেন, তাই কী ভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন, দেখতে পাচ্ছেন না। ওদেরই মুখ্যমন্ত্রী মার্কশিট প্রকাশ করেছেন।” এ দিন তৃণমূলের সভায় ভিন্ জেলা থেকে লোক আনা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। |