সন্ধ্যা নামলেই বাসস্ট্যান্ড দুষ্কৃতীজের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ তুলেছে পরিবহণ কর্মীদের আইএনটিইউসি এবং সিটুর সংগঠন। কয়েক মাস ধরে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে বলেও তাদের দাবি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি চেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের চিঠিও পাঠিয়েছে আইএনটিইউসি। পুলিশের আশ্বাস, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
আসানসোল দক্ষিণ থানা ও পুলিশ কমিশনারের কাছে কিছু দিন আগে পাঠানো চিঠিতে আইএনটিইউসি-র পরিবহণ কর্মী সংগঠনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, দিন-দুপুরে বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের পকেটমার হচ্ছে আকছার। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। অথৈ জলে পড়ছেন দূরদুরান্ত থেকে আসা মানুষজন। এখানেই শেষ নয়। সন্ধ্যা নামলেই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। বাসস্ট্যান্ডের আনাচে-কানাচে মদ্যপান-জুয়ার আসর বসে যায়। এমনকী, যৌনকর্মীদেরও আনাগোনাও চলে বলে অভিযোগ। ওই সংগঠনের অভিযোগ, যে কোনও উত্সবের মুখে এই ধরনের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। দূরদুরান্তের এলাকা থেকে মানুষজন আসানসোলের কেনাকাটার জন্য আসেন। শহরের সঙ্গে বিশেষ পরিচিতি না থাকা এই সব যাত্রীদের কাছে মোটা টাকা ও নানা মূল্যবান জিনিসপত্র থাকায় তাদের বেছে নেয় দুষ্কৃতীরা। |
আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড।—নিজস্ব চিত্র। |
আইএনটিইউসি-র পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্ত জানান, কয়েক মাস আগে এই বাসস্ট্যান্ড থেকে পরিবহণ কর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে উদ্ধার করেন। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁর চিত্কার শুনে বাসের চালক ও খালাসিরা ছুটে আসেন। দুষ্কৃতীদের ধরতে না পারলেও তারা পালিয়ে যাওয়ার সময়ে চিনতে পারেন বাসকর্মীরা। আসানসোল দক্ষিণ থানায় সংগঠনের তরফে লিখিত অভিযোগও করা হয়। সঞ্জয়বাবু বলেন, “এর পরেও আমরা পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা দেখতে পাইনি। এমনকী, ওই ঘটনার পরেও দুষ্কৃতীরা সমানে দৌরাত্ম্য চালিয়ে যাচ্ছে।” একই অভিযোগ সিটু অনুমোদিত বাসকর্মী সংগঠনের আসানসোল শাখার সম্পাদক হেমন্ত সরকারের।
তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় এত বেশি থাকে যে বিক্ষিপ্ত ভাবে যাত্রীরা কিছু বলতে পারেন না। আবার দূর থেকে আসা সাধারণ যাত্রীরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত না থাকায় প্রতিবাদও গড়ে ওঠে না। হেমন্তবাবু বলেন, “এই অবস্থায় আমরা দুই পরিবহণ কর্মী সংগঠন পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” তাঁর আরও অভিযোগ, বছর দুই আগেও আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের এই দশা ছিল না। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে।
বাসস্ট্যান্ডের ভিতরে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যের খবর পুলিশের কাছে আসার পরে পুলিশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ করেছে বলে জানান পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার। তিনি বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের ভিতরে ও বাইরে পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকের পুলিশ থাকছে। অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হচ্ছে।” |