আজও মেয়েরা গান শুনে প্রেম নিবেদন করে

‘সবকো মালুম হ্যায় ম্যয় শরাবি নহি, ফিরভি কোই পিলায়ে তো ম্যয় কেয়া করুঁ...’ এই লাইনটা কি আপনার ব্যক্তিগত জীবনেও প্রযোজ্য?

আমি কিন্তু সে রকম ভাবে মদ্যপান করি না। আই অ্যাম আ সোশ্যাল ড্রিঙ্কার। ওই মাঝেমধ্যে আর কী!

আজও আপনার মুখে ‘নশা’ শব্দটা শুনেই তো লোকের উন্মাদনা চরমে...
(হাসি) তবে ‘নশা’ মানেই কিন্তু মদ্যপান নয়। যদি আমি ফার্সি ভাষাটা দেখি, তা হলে ‘নশা’ শব্দটা সেখানে প্রতীকী ভাবে ব্যবহার করা হয়। কখনওই তার আক্ষরিক অর্থটা ধরাই হয় না। ওমর খৈয়ামকে দেখুন। ওঁর দর্শনটাই তো একটা ‘বার’-য়ের সিম্বল দিয়ে বোঝানো হয়েছে। তাই যখন ‘নশা’ শব্দটা শায়েরিতে ব্যবহার করা হয়, তখন তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু আফসোস, সাধারণ মানুষ সেটা বুঝতে পারেন না। ভাবেন আমি বোধহয় শুধু মাত্র মদ্যপানের কথা গেয়ে বেড়াচ্ছি।

তা হলে স্টেজে যখন আপনি এই ‘নশা’ নিয়ে গান ধরেন, আর দেখেন যে দর্শক ‘ওয়াহ্ ওয়াহ্’ করছে একটা সরল মানে করে নিয়ে, তখন কি ভেতরে ভেতরে হাসতে থাকেন?
হ্যা। এটা আমার কাছে ছোট একটা জোক-য়ের মতো। ধরুন এই গজলটা
শরাব চিজ অ্যায়সি হ্যায়
না ছোড়ি যায়ে
ইয়ে মেরি ইয়ার কী জ্যয়সি হ্যায়।

যখন এটা গাই, অনেকেই ভাবেন আমি বলছি ‘শরাব’ বন্ধুর মতো। কিন্তু তাঁরা বোঝেন না যে উর্দুতে ঈশ্বরকে ‘ইয়ার’ বলে সম্বোধন করা হয়। তাই এই লাইনগুলোতে ভক্তির কথা বলা হচ্ছে। যদি এই গজলটা আমি আলিগড়ে গাই, ওখানে অনেক উর্দু স্কলার রয়েছেন, যাঁরা অন্তর্নিহিত অর্থটা বুঝবেন। বাকিরা এই স্বাদটা পান না।
ছবি: কৌশিক সরকার।
এ রকম আরও ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা হয়ে থাকে নাকি?
আলবাত হয়। এই ধরুন গাইলাম
‘এক তরফ উসকা ঘর
এক তরফ মায়েকাদা
ম্যায় কঁহা যায়ু
হোতা নহি ফয়সালা’

লোকে ভাবেন ‘উসকা ঘর’ মানে বোধহয় আমি বলছি প্রেমিকের বাড়ি। কিন্তু ‘উসকা ঘর’ মানে হল ঈশ্বরের বাড়ি। মানুষ তো মোক্ষ খুঁজে বেড়ায়। তাই প্রশ্ন হচ্ছে কোন সে মাদকতা, যা মানুষকে মোক্ষ থেকে বঞ্চিত করছে? কলকাতায় ‘ডিকেএস’ ক্লাবের মতো জায়গায় গান গাইলে তবু এমন শ্রোতা পাই, যাঁরা এই সব বোঝেন। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে এ সবের কোনও মানে থাকে না। রাত ৮টা বাজল, আর হুড়মুড় করে দর্শক বারের দিকে ছুটল!

এ রকম হলে কী করেন?
তখন আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই। গানটা আমি এমন ভাবে গাই যাতে শ্রোতারা শুনতে বাধ্য হন।

এত রোম্যান্টিক গজল গেয়ে চলেছেন, জানতে ইচ্ছে করে পঙ্কজ উধাস আসলে কতটা রোম্যান্টিক?
এটা তো নিশ্চিত যে রোম্যান্টিক না হলে আমি এ সব গাইতে পারতাম না। আমাদের গান এমন যে সেটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। ‘অ্যাহেসাস’ ব্যাপারটা খুবই বড়। উর্দু শব্দগুলোকে শুধু অনুবাদ করেই গজলকে ভাল লাগা যায় না। যখন এত শায়রি নিয়ে চর্চা করি তখন এটা স্বীকার করতে অসুবিধে নেই যে রোম্যান্স ব্যাপারটা চিরকালই থেকে গিয়েছে আমার জীবনে। তবে সেটার সঙ্গে ‘অ্যাফেয়ার’কে গুলিয়ে ফেলা যায় না।

আপনার চোখে এক রোম্যান্টিক সন্ধ্যা কেমন হলে ভাল হয়?
নিভৃতে বসে সামান্য আলাপচারিতা। মৃদু একটা গজল চলবে...

নিজের গাওয়া?
‘সেন্টিমেন্টাল’ অ্যালবামেই আমার গাওয়া একটা গজল বেশ মানাবে সেখানে। গজলের নাম ‘বহত খুবসুরত’। না হলে আমার পুরনো একটা অ্যালবাম থেকে ‘অভি ঘর না জানা’ গানটা।

অনেকে বলে থাকেন যে প্রেমে আঘাত না খেলে গানের মধ্যে করুণ রসটা ফুটে ওঠে না। আপনার ক্ষেত্রেও কি সে কথা খাটে?
কলেজে পড়াকালীন আমিও যে প্রেমে আঘাত খাইনি তা নয়। জীবনে হতাশা এসেছে। তবে সেগুলো অতিক্রম করার চেষ্টাই সব সময় করে গিয়েছি।

এমন কোনও গজল রয়েছে যেটা গাইতে গাইতে আপনার পুরনো সব স্মৃতি মনে পড়ে যায়? ধরুন যখন ‘জিস দিন সে জুদা ওহ হমসে হুয়ে’ গানটা গেয়ে থাকেন তখন কি কিছু মনে পড়ে যায়?
পেশাদার গায়ক হয়ে ওঠার আগেই আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল। প্রথম অ্যালবামের সময় থেকেই আমরা মেলামেশা করতে শুরু করি। তবে আজও যখন ‘পত্থর সুলগ রহে থে’ গজলটা গাই, তখন নিজের সংগ্রামের কথা মনে পড়ে যায়।

কী শিখেছি

আমাকে বলেছিলেন ‘পহেলওয়ানি’ করতে।
শিখেছি প্রথমে দর্শকের হৃদয়ে (মস্তিষ্ক নয়)
পৌঁছতে হবে গান দিয়ে
মেহদি হাসান

গায়কির ওপর কী নিয়ন্ত্রণ!
ওঁর মতো রেয়াজ করে গান
পেশ করতে চাই
গুলাম আলি

গায়কিতে খুব বেশি বৈচিত্র না থাকলেও এমন ভাবে গাইতেন,
যেন আত্মাকে ছুঁয়ে যেত। নিজেও সেটা করতে চাই
জগজিৎ সিংহ
মহিলা ফ্যানেরা কি আজও এমন কিছু করে যা আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে?
হ্যা।ঁ কত বিচিত্র সব ব্যাপার করে বসে। বাড়ি পর্যন্ত চলে আসে। প্রেম নিবেদন করার কী হিড়িক! পরিবারের সকলের সামনে সেটা বেশ এমব্যারাসিং। তবে আমি কনসার্ট আর ব্যক্তিগত জীবনকে মেলাতে দিই না। তাই যা কিছুই করুক না কেন, আমি ব্যবহার দিয়েই আমার নির্লিপ্ততা বুঝিয়ে দিই।

বয়স হলে অনেক শিল্পীর গলা খারাপ হয়ে যায়। তখন তাঁদের কনসার্ট শুনতে গেলে হতাশ লাগে। মনে হয় পুরনো অ্যালবামটাই শোনা ভাল...
ঠিক। আমি নাম করতে চাই না। তবে অন্তত চার-পাঁচ জন শিল্পীর ক্ষেত্রে আমারও একই রকম মনে হয়েছে। তখন খুব দুঃখ হয়।

এত বছর পরেও নিজের গলাটা ধরে রেখেছেন কী করে?
প্যাশন। মনে হয় সারা বিশ্বে নিজের গান ছড়িয়ে দিই। স্টেজে যখন গান গাইতে বসি তখন দুটো গানের পরেই আমি একটা ট্রান্সের মধ্যে চলে যাই। কোথায় বসে গাইছি সেটাও মাথায় থাকে না। নিয়মিত রেওয়াজ করতে হয়। ভোকাল কর্ডের এক্সারসাইজ। ডিসিপ্লিন। নিজের গলাকে যাতে ‘অ্যাবিউজ’ না করা হয়। বোঝা দরকার বিনোদনের জন্য কোন গানটা কী ভাবে পরিবেশন করলে ভাল লাগবে।

সম্প্রতি আপনি সোনু নিগমকে কিশোরকুমারের সঙ্গে তুলনা করেছেন...
হ্যা। সোনু খুব প্রতিভাবান। ও আর আমি মিলে ইন্ডিয়ান সিঙ্গারস রাইটস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটা সংস্থা তৈরি করেছি। আজকাল সিনেমার ক্রেডিট লাইনে, রেডিয়ো জকির মুখে গায়কদের নাম উল্লেখ করা হয় না। কপিরাইট আইন বদলেছে। কিন্তু রয়্যালটি নিয়ে আজও প্রচুর ঝামেলা রয়েছে। সোনু আর সুনিধি চৌহানের মতো গায়কদের দিয়ে রেকর্ড কোম্পানিরা বেআইনি চুক্তি সই করিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। ওরা সই না করতে চাইলে ওদের গলা ডাব হয়ে যাচ্ছে! ন্যায্য রয়্যালটি দিতে চাইছে না।

এক সময় বলেছিলেন যে দর্শক ‘অ্যাম্বিয়েন্স মিউজিক’ শোনেন। কিছু চললেই হল। এখন কি তা পাল্টাচ্ছে?
আমার ধারণা, ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত শ্রোতারা আমাদের ধরনের গানের থেকে সরে গিয়েছিলেন। গত তিন বছরে একটু পাল্টেছে। শ্রোতা হয়তো আগেও ছিল। কিন্তু স্টেডি সাপ্লাই ছিল না। এখন আবার নন-ফিল্ম মিউজিকে কাজ শুরু হয়েছে। এক সময় জগজিৎ সিংহকেও দেখেছি কনসার্টের শেষে পঞ্জাবি গান গাইতে। কারণ লোকে তাই চাইত। আশির দশকে লোকে দোকানে গিয়ে আমার সিডি আর লং প্লেয়িং ডিস্ক খুঁজে বেড়াত। এখন ইন্টারনেটের যুগ। তাই দোকানে আর ভিড় হবে কেন? তবে আমি আশাবাদী। ক’মাস আগে ‘সেন্টিমেন্টাল’ নামে একটা অ্যালবাম রিলিজ হয়েছে। তার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটা ব্যবহার করেছি। ইচ্ছে একটা ‘ডেডিকেটেড গজল চ্যানেল’ তৈরি করার। টেলিভিশন আর রেডিয়োতে তো ফিল্মের গান ছাড়া কিছুই বাজানো হয় না। তাই একটা ভার্চুয়াল মিউজিক চ্যানেল তৈরি করার চেষ্টা করছি যেখানে ২৪x৭ শুধু গজলের ভিডিয়োই দেখানো হবে।

এত গজল গেয়েছেন। নিজের সব থেকে প্রিয় কোনটা?
‘দিওয়ারোঁ সে মিলকর রোনা’। দ্যাটস মাই অল টাইম ফেবারিট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.