বাইশ গজের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হাজার খুঁজলেও এক টুকরো সবুজের চিহ্নমাত্র নেই। পুরোটাই লাল মাটি। ম্যাচের প্রথম বল পড়তে আরও বাকি আটচল্লিশ ঘণ্টা কিন্তু জায়গায় জায়গায় এখনই ধুলো উড়ছে। বিস্তর ফাটল।
উইকেট নাকি দেখে মনে হচ্ছে ধানক্ষেত। গ্রামের কোনও লাল মাটির রাস্তার সঙ্গে নাকি কোনও তফাত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
কেউ বিশ্বাস করবে, খোঁয়াড় নয়, এটা চিপকের উইকেট?
কেউ বিশ্বাস করবে, এটা বোর্ড প্রেসিডেন্ট নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ঘরের মাঠের পিচ?
কেউ বিশ্বাস করবে, আগামী সোমবার থেকে এই পিচে রঞ্জি ট্রফির গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হবে? হবে বাংলা বনাম তামিলনাড়ু?
বাংলা শিবির আতঙ্কিত। ক্ষুব্ধ। উইকেট নিয়ে ক্রিকেটারদের কেউ সরকারি ভাবে মুখ খুলছেন না। কিন্তু চিপক উইকেটের নানাবিধ নামকরণ এখনই হয়ে যাচ্ছে।
আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড উইকেট!
ধানখেত!
টু ইন ওয়ান উইকেট।
বাংলা কোচ অশোক মলহোত্র পিচ দেখে কিছুটা অসন্তুষ্ট, কিন্তু একই সঙ্গে জানিয়ে দিচ্ছেন এমন উইকেটের চ্যালেঞ্জ নিতে তাঁর টিম তৈরি। চেন্নাই থেকে ফোনে বলে দিলেন, “আমার আন্দাজ ছিল যে উইকেট এমন হতে পারে। ছ’পয়েন্টের ম্যাচ। দু’টো স্ট্রিপ দেখলাম। একটায় আগের ম্যাচটা তামিলনাড়ু খেলেছে। অন্যটা নিয়ে কিছু না বলাই ভাল। জানি না কোনটা দেবে।” একটু থেমে ফের যোগ করেন, “ঠিক আছে। ওরা যা পারে করুক। আমরাও দেখব কী করা যায়।”
ঘটনা হচ্ছে, বাংলা এবং তামিলনাড়ু দু’টো টিমেরই রঞ্জিতে এখন সম-অবস্থান। সাত ম্যাচে আঠারো। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে ম্যাচ জিততেই হবে, এমন পরিস্থিতি। বাংলা শিবির ধরেও রেখেছিল, টার্নার হবে। কিন্তু এ জিনিস বোঝা যায়নি। প্রশ্ন উঠছে, ম্যাচটা কত দিনে শেষ হবে? দু’দিনের মধ্যে? নাকি আড়াই? |
যে পিচ তৈরি রাখছেন রামনরা।—নিজস্ব চিত্র। |
যা খবর, তাতে তামিলনাড়ু ম্যাচে বাংলার একমাত্র পেসার হিসেবে শুধু অশোক দিন্দা থাকছেন। অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলারের কাজটা করে দেবেন। বাকি সব স্পিনার। চার তো বটেই, সম্ভব হলে নাকি পাঁচ! সৌরাশিস লাহিড়ী, অর্ণব নন্দী, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় (ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি যাঁকে এই ম্যাচে স্পিনটাও করতে হবে) এবং বাঁ হাতি স্পিনার ইরেশ সাক্সেনা খেলছেন। ‘এসওএস’ করে শনিবার রাতেই উড়িয়ে আনা হল আর এক বাঁ হাতি স্পিনার জিতেন্দ্র সাহুকে। সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে, সন্দীপন দাসের কুঁচকিতে লেগেছে। তাই তাঁর জায়গায় জিতেন্দ্র। কিন্তু আসল কারণটা হচ্ছে, চিপক-উইকেট।
এবং এমন উইকেটের পিছনে কেউ কেউ ডব্লিউ ভি রামনের মস্তিষ্কও দেখছেন।
এমনিতেই শনিবার প্র্যাকটিসে গিয়ে অদ্ভুত একটা ব্যাপার আবিষ্কার করে বাংলা। দেখে, তাদের যে দু’টো প্র্যাকটিস উইকেট দেওয়া হয়েছে তার চরিত্র সম্পূর্ণ আলাদা তামিলনাড়ুর প্র্যাকটিস পিচের থেকে। বাংলার প্র্যাকটিস উইকেটে বল ভাল ব্যাটে এসেছে। কিন্তু তামিলনাড়ু প্র্যাকটিস উইকেট ততটাই খারাপ ছিল, যতটা ম্যাচ পিচ হতে পারে। বল যখন-তখন লাফিয়ে মুখের কাছে এসেছে। বলা হচ্ছে, বাংলার প্রাক্তন কোচ রামন জানেন যে, স্পিন বোলিংই বাংলার কমজোর ডিপাটর্মেন্ট। যা তাঁর টিমের শক্তি। তাই নাকি এমন উইকেটের বন্দোবস্ত। উইকেট নিয়ে যাবতীয় ব্যাপারস্যাপার রামনের নির্দেশেই হয়েছে। আর চিপক কিউরেটর? তাঁকে শনিবার খুঁজেও নাকি মাঠে পাওয়া যায়নি।
সব দেখেশুনে বাংলা কোচের আর এক অনুভূতি হচ্ছে। অশোক মলহোত্র বললেন, “দেখবেন, চিপক শেষ পর্যন্ত তামিলনাড়ুর কাছেই ব্যাকফায়ার করবে। করবেই!” |