|
|
|
|
নতুন বছর থেকেই শুরু ‘হোম স্টে’, থাকছে ‘ট্রেকিং’-এর ব্যবস্থাও |
পর্যটনে হাল ফেরাতে চায় টোটোপাড়া
নিলয় দাস • টোটোপাড়া |
বছর শেষে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়েই পর্যটকদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। আর পর্যটন শিল্পের হাত ধরেই আর্থিক সচ্ছলতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে টোটোপাড়ায়। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে তৈরি পর্যটকদের রাত্রিবাসের পরিকাঠামো। আর রয়েছে টোটো গ্রামে হোম স্টে, ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থাও। নতুন বছরের শুরুতেই তা খুলে দেওয়া হবে পর্যটকদের জন্য।
ডুয়ার্সের জলদাপাড়া জঙ্গল সংলগ্ন মাদারিহাট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে টোটোপাড়ায় পৌঁছতে তিতি, বাংরি, হাউড়ি ও সুকতির মত পাহাড়ি ঝোরা পেরোতে হয়। এর কোনওটিতেই সেতু নেই। রাস্তার হাল করুণ। সে সব টপকে পর্যটকরা এত দিন টোটোপাড়ায় পৌঁছলেও রাত কাটানোর ব্যবস্থা ছিল না। পর্যটকদের ঘোরানোর বন্দোবস্তও না থাকায় টোটোপাড়া সে ভাবে পর্যটন মানচিত্রেও ঠাঁই পায়নি। সেই সমস্যা মেটাতে রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের অর্থে তৈরি হয়েছে দু’শয্যা বিশিষ্ট দু’টি ঘর। নতুন ঘরের সঙ্গে লাগোয়া আগেই তৈরি আরও দু’টি কাঠের ঘরে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। টোটো জনজাতির বাসিন্দাদের চারটি বাড়িতেও পর্যটকদের থাকার ঘর তৈরি হচ্ছে। যারা হেঁটে পাহাড়ে যেতে পারবেন না, তাঁদের জন্য দু’টি ঘোড়া রাখার পরিকল্পনাও প্রশাসন নিয়েছে। |
|
অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে তৈরি পর্যটকদের থাকায় জায়গা। |
টোটো কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের টোটোপাড়া ক্যাম্প সম্পাদক অশোক টোটো জানান, ১ জানুয়ারি থেকেই পর্যটকেরা টোটোপাড়ায় এই সমস্ত সুবিধা পাবেন। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের প্রকল্প আধিকারিক সুজন দত্তের কথায়, “শীঘ্র জেলা-সহ পর্যটন দফতর এবং আমাদের ওয়েবসাইটে পর্যটকদের জন্য টোটোপাড়ায় থাকা ও ঘোরার বিষয়ে প্যাকেজের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। সেখানকার আয়ের টাকা টোটো সম্প্রদায়ের লোকজনকে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।”
টোটোপাড়া যাওয়ার রাস্তাঘাট কিছুটা পাকা করা হলেও অনেকটা পথই বেহাল। বর্ষাকালে কিছুটা সময় নদী, ঝোরায় জল বেড়ে টোটোরা কার্যত গ্রামে বন্দি হয়ে পড়েন। সেই সমস্যা কাটাতে ঝোরাগুলির উপরে সেতু তৈরি হবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও সুজনবাবু অবশ্য জানান, ইতিমধ্যে টোটোপাড়ার রাস্তা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে টাকার আবেদন করা হয়েছে। সে টাকা মঞ্জুর হলে দুর্ভোগ মিটবে।
থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে পায়ে চলার পথও। সেই পথে ট্রেক করে পর্যটকেরা উঠে যাবেন পাহাড়ে। সেখান থেকে ঝর্ণা, কমলা লেবুর বাগান, তোর্সা নদী ও ভুটানের ফুন্টসিলিং শহর দেখা যাবে। পাহাড় ও জঙ্গলে মোড়া রাস্তা পেরিয়ে নরগাইতি পৌঁছলে দেখা মিলবে প্রাচীন মন্দিরের। পর্যটকদের ঘোরানো, আপ্যায়ন ও খাওয়ার বিষয়ে যাতে খামতি না থাকে সে জন্য এক জন টোটো কিশোরী-সহ আট জন যুবককে মাদারিহাটের পর্যটন দফতরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মী, অনিল, সোনে, মহাদেব, জিনা, যোগেশরা জানাচ্ছেন পর্যটকদের আপ্যায়নে তাঁরা তৈরি। পর্যটন দফতরের অধীনে ফুড প্রসেসিং-এর প্রশিক্ষণরত অনিল গত বছর মাধ্যমিক পাশ করেছে। বাকিরাও কেউ মাধ্যমিক পাশ, কেউ মাঝপথেই পড়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অনিল বলেন, “চাকরি-বাকরির হাল ভাল নয়। চার জনের সংসার। বাবার জমি খুব অল্প। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর পর্যটকদের থেকে আয় করা টাকায় সংসারে সুবিধা হবে।” |
|
পর্যটকেরা থাকতে পারবেন টোটোদের কুটিরেও। |
টোটোপাড়া পর্যটকের কাছে তুলে ধরার জন্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক জন পর্যটন সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়। একটি পর্যটন সংস্থার কর্তা সম্রাট সান্যালের কথায়, “টোটোপাড়া নিয়ে যে সরকার উদ্যোগী হয়েছে তাতে আমরা খুশি। এত দিন সেখানে থাকার ব্যবস্থা ও ঘুরিয়ে দেখানোর কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এ বার তা হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের টোটোপাড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।” টোটোপাড়ার লোকজনের মূল জীবিকা চাষাবাদ। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পরিবার আলাদা হবার কারণে জমির পরিমাণ কমে আসায় আর্থিক ভাবে বেশির ভাগ টোটোই অসচ্ছল। বিকল্প আয়ের উৎসও তাঁরা সে ভাবে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এ বার তার টোটো কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের টোটোপাড়া ক্যাম্পের সম্পাদক অশোক টোটোর কথায়, “এখানে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হলে আমাদের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। প্রত্যক্ষ ভাবে ১০টি পরিবার উপকৃত হবেন। তার সঙ্গে সমগ্র টোটোপাড়ার মানুষই পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।”
|
ছবি: রাজকুমার মোদক। |
|
|
|
|
|