|
|
|
|
বড়ো জঙ্গিদের থেকেই কি আইইডি তালিম
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
অসমের বড়ো জঙ্গিদের কাছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি ও ব্যবহারের তালিম নেওয়া চলছিল বছর তিনেক। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, জলপাইগুড়িতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কেএলও জঙ্গিরা দেখাল, তারাও এখন আইইডি তৈরি এবং ব্যবহারে দড়।
রাজ্য গোয়েন্দা শাখা (ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ)-র দাবি, গত এক দশকে উত্তরবঙ্গে আইইডি বিস্ফোরণের যে সব ঘটনায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলিতে কেএলও জড়িত থাকলেও, আইইডি তৈরি, তা বসানো এবং ‘টাইমার ডিভাইস’ দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানোসব-ই করেছে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বড়োল্যান্ড (এনডিএফবি) জঙ্গিরা।
যেমন, ২০০৬-এর নভেম্বরে বেলাকোবা স্টেশনে ডাউন হলদিবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়ি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের কামরায় বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও ৫০ জন জখম হওয়ার ঘটনায় এনডিএফবি-র তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার গোপাল রাভা ওরফে জগদীশ এবং আদিসন সাংমা নামে এক জন এনডিএফবি ক্যাডারকে ধরা হয়। তদন্তে জানা যায়, কেএলও জঙ্গিরা কেবল বড়ো জঙ্গিদের সঙ্গে থেকে তাদের এলাকা চিনতে সাহায্য করেছিল। আবার ২০০৯-এর মার্চে আলিপুরদুয়ার শহরে সাইকেলে রাখা বোমা বিস্ফোরণে দু’জন নিহত হন। সেখানেও তদন্তে বড়ো জঙ্গিদের হাত-ই খুঁজে পান গোয়েন্দারা।
কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে জলপাইগুড়ি শহরের অদূরে যে আইইডি-র বিস্ফোরণে পাঁচ জন নিহত হলেন, সেটি তৈরি, বসানো এবং তাতে টাইমার ‘ফিট’ করাসবই নিজের হাতে কেএলও জঙ্গিরা করেছে বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এ বছরের ২৯ অগস্ট আলিপুরদুয়ারে স্টিলের ক্যানের মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় বিস্ফোরক ঠেসে ও স্প্লিন্টার হিসেবে প্রচুর বল বিয়ারিং তাতে রেখে আইইডি তৈরি করার পর সেটি একটি ব্যাগের মধ্যে ভরে সাইকেলে ঝুলিয়ে দিয়েছিল কেএলও জঙ্গিরা। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করেই ওই আইইডি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে নিহত হন সিআইডি-র বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের এক জন কনস্টেবল। তদন্তকারীদের দাবি, আলিপুরদুয়ার ও বজরাপাড়া সেতুর আইডি দু’টি প্রায় একই রকম শক্তিশালী। কিন্তু বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হওয়ায় গোয়েন্দারা মনে করছেন, আইইডি তৈরি এবং ব্যবহারে ‘সাবালক’ হয়েছে কেএলও।
আইবি-র এক কর্তা শুক্রবার বলেন, “২০১১ থেকে এনডিএফবি-র কট্টরপন্থী রঞ্জন দইমারি গোষ্ঠীর কাছে আইইডি তৈরি ও ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে কেএলও জঙ্গিরা। মায়ানমারে ওই বড়ো জঙ্গিরা কেএলও-র অন্তত পাঁচটি ব্যাচকে আইইডি-র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এক-একটি ব্যাচে সদস্যের সংখ্যা জনা পঞ্চাশ।”
আইইডি ব্যবহার করে নাশকতার এই ধরন কিন্তু কেএলও-র প্রথম দিককার হামলার কায়দা থেকে অনেকটাই আলাদা। নব্বইয়ের দশকের শেষে কেএলও জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে হত্যা করত, বন্দুক দেখিয়ে অপহরণ করত ব্যবসায়ীদের। জলপাইগুড়ির কাজুলিবস্তিতে ২০০২-এ কেএলও-র ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে সিআরপি-র ছয় জওয়ান জখম হলেও এই ধরনের ঘটনা নগণ্য। বরং, ধূপগুড়িতে সিপিএম পার্টি অফিসে ঢুকে গুলি চালিয়ে সিপিএম কর্মীদের হত্যা করার মতো ঘটনাতেই কেএলও-র নাম জড়িয়েছে বেশি। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আগের দফায় কেএলও মূলত আলফা-র লেঠেল বাহিনী হিসেবেই কাজ করেছে। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা আলফারই বৈশিষ্ট্য। এমনকী, ২০০২-এর অগস্টে ধূপগুড়িতে ওই সিপিএম পার্টি অফিসে এ কে-৪৭ নিয়ে হামলা ছিল আলফা-কেএলও যৌথ অপারেশন।” তাঁর দাবি, “মূলত আলফা-ই আইইডি তৈরির বিস্ফোরক কেএলও-কে সরবরাহ করছে, কিন্তু আইইডি-র এই প্রশিক্ষণ কেএলও পেয়েছে এনডিএফবি-র কাছে।”
বড়ো জঙ্গিরা কেএলও-কে সাহায্য করছে কেন? জলপাইগুড়ি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বড়ো জঙ্গিরা কেএলও-র কাছ থেকে এর বিনিময়ে টাকা পাচ্ছে। তা ছাড়া, জলপাইগুড়ি জেলায় বড়ো জঙ্গিরা ঘাঁটি গাড়তে চায়। কারণ জলপাইগুড়ি জেলাতেই বড়ো উপজাতির প্রায় এক লক্ষ বাসিন্দা আছেন। সে জন্য তাদেরও কেএলও-কে প্রয়োজন।” |
|
|
|
|
|