থানায় অভিযোগ জানানোর ঝক্কি কমাতে খুলল সহায়তা কেন্দ্র
থানায় ঢুকতেই ধেয়ে এল প্রশ্ন— কী চাই? থানায় ঢুকতেই এমনিতেই ইতস্তত করছিল কলেজ পড়ুয়া মেয়েটি। প্রশ্ন শুনে তাঁর পা থমকে গেল। থানার বারান্দায় টেবিল সাজিয়ে বসে রয়েছেন দুই মহিলা কনস্টেবল। মুখে হাল্কা হাসি। পুলিশের মুখে হাসি দেখে ভরসা পেয়ে তিনি জানালেন, তাঁর মোবাইল ফোন হারিয়েছে। একটা অভিযোগ জানাতে এসেছেন। ওই মহিলা কনস্টেবলরাই এগিয়ে এসে কী ভাবে তাঁকে অভিযোগ পত্র লিখতে হবে, কোথায় জমা দেবেন, গড়গড় করে সব বুঝিয়ে দিলেন।
থানাগুলিতে অভিযোগ জানাতে গিয়ে লোকজনকে আর যাতে হয়রান না হতে হয়, সে জন্য এমনই সহায়তা কেন্দ্র চালু হল পুরুলিয়া জেলায়। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, পুরুলিয়ার ২১টি থানা ও একটি তদন্ত কেন্দ্রে শুক্রবার থেকে অনেকটা ‘হেল্প ডেস্ক’-র ধাঁচে এই ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে। ওই কাজ সামলাবেন দুই জন করে মহিলা কনস্টেবল।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “নানা প্রয়োজনে মানুষজন থানায় আসেন। কিন্তু তাঁদের সমস্যা অনুযায়ী কোথায়, কী ভাবে অভিযোগ জানাতে হবে, তা নিয়ে অনেকে বিপাকে পড়েন। তাঁদের সাহায্য করার জন্যই জেলার সব থানা ও একটি তদন্ত কেন্দ্রে সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, এই পরিকল্পনার পিছনে রয়েছেন ডিআইজি (পশ্চিমাঞ্চল) অজয় নন্দ।
শুক্রবার রঘুনাথপুর থানায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
বস্তুত থানায় গিয়ে মানুষজনকে হয়রান হতে হয় বলে দীর্ঘ সময় ধরে এই অভিযোগ শোনা যায়। বিশেষ করে দূর থেকে আসা গ্রামাঞ্চলের মানুষদের থানায় এসে সামান্য কারণে ফিরে যেতে হয় বলেও অভিযোগ হামেশাই ওঠে। নতুন এই ব্যবস্থায় এই ধরনের সমস্যা কাটবে বলেই আশা করছে পুলিশ মহল।
কী ভাবে সাহায্য করছেন মহিলা কনস্টেবলরা?. কোথাও তাঁরা থানার দরজার সামনে চেয়ারে বসে থাকছেন। কোথাও বা বারান্দায় থাকছেন। থানায় আসা ব্যক্তিদের কাছে তাঁরা প্রথমে কেন তাঁরা থানায় এসেছেন তা জানতে চাইছেন। তার পর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে কী করতে হবে জানিয়ে দিচ্ছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, থানায় একজন করেই ‘ডিউটি অফিসার’ থাকেন। স্বাভাবিক ভাবেই তার উপরে কাজের চাপ থাকে। এ দিকে নানা কাজে থানায় আসা মানুষজনের সব প্রশ্নের জবাবও অনেক সময় তাঁর পক্ষে দেওয়ার ফুরসৎ থাকে না। এ জন্য মানুষজনকে থানায় অনেকক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়। আবার থানার বরান্দায় মোতায়েন থাকা সেন্ট্রিদের থানার লকআপে থাকা ধৃতদের উপর নজর রাখার দায়িত্ব থাকে। ফলে তাঁদের পক্ষেও সব সময়ে বিশদে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার সম্ভব হয় না। তাই সাধারণ মানুশের সুবিধার্থে ওই সহায়তা কেন্দ্র চালু করার কথা ভাবা হয়।
জেলা পুলিশের এক কর্তার বলেন, “হয়তো কোনও মামলার ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারের কাছে কিছু জানতে এসেছেন কোন ব্যক্তি। কিন্তু সেই অফিসার জরুরি কাজে থানার বাইরে রয়েছেন। সহায়তা কেন্দ্রর কর্মীরাই ওই ব্যক্তিকে জানিয়ে দেবেন, ওই অফিসারকে কখন পাওয়া যাবে।” তিনি জানান, এ ছাড়া মহিলাদের উপরে অপরাধের ঘটনা ঘটলে অভিযোগ জানাতে মহিলারা থানায় এসে পুরুষ পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে বিশদে কথা বলতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে এই মহিলা কনস্টেবলদের কাছে সহজেই তাঁরা সমস্যার কথা জানাতে পারবেন।”
মোবাইলের সিম কার্ড হারিয়ে স্বামী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রঘুনাথপুর থানায় এসেছিলেন মেটালা গ্রামের বধূ সরস্বতী মুখোপাধ্যায়। তাঁর অভিজ্ঞতা, “থানায় ঢুকতেই কেমন লাগছিল। কিন্তু এখানকার মহিলা কনস্টেবলরা খুব ভাল ব্যবহার করলেন।” এসপি জানান, মানুষের সুবিধার্থে পুলিশের ভূমিকা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্থানগুলিতে পর্যটকদের সাহায্য করার জন্য বিশেষ সহায়তা কেন্দ্রও শুরু করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.