মৌসুনি দ্বীপের নোনাজমিতে বাড়ছে বিশেষ প্রজাতির ধান
ন্ধকারের মধ্যে যেন এক চিলতে আলো!
শীতের রোদে বিস্তীর্ণ চাষজমিতে এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে সাদা নুনের প্রলেপ। অনেক এলাকাতেই এখনও বন্ধ চাষাবাদ। ২০০৯ সালের আয়লার ঝড়ে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষজমিতে নোনাজল ঢুকে যে সর্বনাশ হয়েছে, তা থেকে কবে মুক্তি মিলবে? ভেবে রাতের ঘুম উবেছে বহু চাষিরই। তাঁদের সেই দুশ্চিন্তা লাঘব করতে ইতিমধ্যে সাগর ব্লকের মৌসুনি দ্বীপের কয়েকটি এলাকাকে বেছে নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে বিশেষ প্রজাতির ধান চাষ শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে। যে ধান লবণাক্ত জমিতেও সহজে বেড়ে উঠছে।
জার্মান সরকারের আর্থিক সাহায্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিমলকিঙ্কর চাঁদের তত্ত্বাবধানে ওই কাজ চলছে। গবেষকদের দাবি, বছর তিনেক নানা সমীক্ষার পর নোনামাটিতে প্রায় ছ’প্রজাতির ধান চাষ খুব ভাল হচ্ছে। যেমন, নোনাশাল, তালমুগুর, নোনাবখরা, লালঘেটু, সাদাঘেটু, হ্যামিলটন জাতীয় ধান নোনা সহনশীল। ফসলও খুব ভাল হচ্ছে। ওই দ্বীপের কৃষকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি কর্মশালা করা হয়েছে। কৃষকরাও ওই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সেখানে গিয়েও দেখা গেল, খেত ভরেছে সবুজ ধানে।
বিমলকিঙ্করবাবুর দাবি, “বিশেষ কয়েকটি প্রজাতির ধান চাষে আয়লা কবলিত ওই এলাকায় সাফল্য মিলেছে। সুন্দরবনের অন্য এলাকাতেও কৃষকদের নিয়ে কর্মশালা হবে। নোনাজমিতে ওই জাতীয় ধান চাষ করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে।”
আয়লার দাপটে সুন্দরবনের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল নোনাজলে। পুকুরের মাছ আর জমির ধান-সব্জি কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। অধিকাংশ চাষজমিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই জমি থেকে নোনাজল তাড়াতাড়ি বের করা সম্ভব হয়নি। প্রায় চার বছর পরেও চাষজমি থেকে এখনও নুনের প্রভাব পুরোপুরি কাটেনি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা। গত তিন বছরে নানা সময়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে সমীক্ষা করা হয়েছে। ওই নুনের প্রভাব কাটাতে এখনও বছর তিনেক অতিবৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।
কিন্তু এর মধ্যেও কী ভাবে ওই সব এলাকায় চাষ শুরু করা যায়, সে বিষয়ে তিন বছর ধরে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষণা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। চাষের জন্য তাঁরা বেছে নেন বঙ্গোপসাগর লাগোয়া মৌসুনী দ্বীপ। কারণ, নানা সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্রের জল ঢুকে পড়ায় ওই দ্বীপে প্রায়ই ফসল নষ্ট হয়। সে কথা জেনেই গবেষকদের তরফে নানা প্রজাতির ধানচারা পোঁতা হয় সেখানে। কিছু প্রজাতির ধান একেবারেই বাড়েনি। যে সব চারা বাড়ে, সেই ধানেরই চাষ শুরু হয়। ইতিমধ্যে কয়েক ধাপ পেরিয়ে এসেছেন গবেষকরা। এখন তাঁরা কিছুটা দিশা পেয়েছেন বলে মনে করছেন। নোনাজমিতে কয়েকটি প্রজাতির ধানের ফলনও ভাল হওয়ায় একটি নিশ্চিত পরিকল্পনা রূপায়ণ করা গিয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
নতুন প্রজাতির ধান চাষ করে ওই দ্বীপের বেশ কিছু চাষি ইতিমধ্যেই উপকৃত হয়েছেন। গঙ্গাপল্লির বাসিন্দা মোস্তাফা খান নামে এক চাষি বলেন, “আমি ওই কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলাম। সেখানকার কথা শুনে আমার প্রায় ছ’বিঘা জমিতে লালঘেটু ধান চাষ করেছি। ফলন ভালই হয়েছে। আমাকে দেখে আরও কয়েক জন একই চাষ করে লাভবান হয়েছে।” একই বক্তব্য কুসুমতলার রাজকৃষ্ণ দাস-সহ অনেকেরই।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.