পুলিশের ঘুম চুরি করে চোরেরা ফুর্তিতেই
শীত পড়তেই একের পর এক চুরির ঘটনায় তটস্থ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। কখনও গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে দুষ্কৃতীরা। কোথাও এটিএম ভাঙছে। কোথাও আবার রাতের অন্ধকারে দোকান থেকে খোয়া যাচ্ছে জিনিসপত্র, টাকা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা অধরা থেকে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দারা।
গত মঙ্গলবারই গভীর রাতে ব্যারাকপুরের বিড়লা গেট সুকান্ত পল্লির বাসিন্দা দীপালি ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে খোওয়া যায় একটা গোটা আলমারি। দীপালিদেবী সেই রাতে বাড়িতে ছিলেন না। দুষ্কৃতীরা দরজার তালা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে। কিন্তু আলমারির তালা ভাঙতে না পেরে শেষ পর্যন্ত সেটি একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে যায়। পরে সেই আলমারিটি তোলা হয়। সেই ঘটনায় এখনও কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ।
দীপালিদেবী বলেন, “মনে হয় স্থানীয় কেউ ওই ঘটনায় যুক্ত। তারা জানত, আমি ওই রাতে বাড়িতে থাকব না। পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে পারছে না কেন বুঝতে পারছি না।” ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা-প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘এলাকার কেউ এই চুরির সঙ্গে যুক্ত কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ছোটখাটো চুরি তো নিত্যদিন লেগেই রয়েছে। গত ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে নৈহাটির ক্যানিংহাম রোডের একটি সোনার দোকানের পিছনের দরজা ভেঙে ঢুকে দুষ্কৃতীরা শোকেস এবং ভল্ট ভেঙে সব গয়না ও সোনার বাট নিয়ে যায় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন দোকান-মালিক রামেশ্বর পাল। দোকানের সিসি টিভিটিও দুষ্কৃতীরা ভেঙে দেয়। সেই ঘটনাতেও পুলিশ এখনও কাউকে ধরতে পারেনি। তবে, তদন্তকারীদের দাবি, ওই সোনার দোকানে চুরির সময় আশপাশের দোকানে ঘুমিয়ে থাকা লোকেদের কেউ কেউ শব্দ শুনলেও এগিয়ে দেখেননি। ওই এলাকায় সে দিন রাত-পাহারায় থাকা তিন পাহারাদারকে পুলিশ জেরা করছে।
গত ১০ ডিসেম্বর হালিশহরের হুকুমচাঁদ জুটমিলের কাছের একটি অলঙ্কারের দোকানে লুঠের পরে পালানোর সময়ে এলাকার তিন বাসিন্দাকে গুলি করে এবং ছুরি মেরে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তার দু’দিন পরে বীজপুরের বড় জোনপুরে এক বিমাকর্মীর বাড়িতে চুরি হয়। ওই দিনই খড়দহের একটি এটিএম ভেঙেও টাকা হাতানোর চেষ্টা হয়। তার দু’দিন আগে ব্যারাকপুরে ছোট কাঁঠালিয়ায় মিন্টু সিংহরায়ের বাড়ির মন্দিরে চুরি হয়। তার পরে দুষ্কৃতীরা দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢুকলে নিজের বন্দুক থেকে গুলি ছোড়েন মিন্টুবাবু। দুষ্কৃতীরা বাধার মুখে পড়ে পালায়।
বারবার এই ধরনের ঘটনা রুখতে বেশ কিছু দিন আগেই ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের পক্ষ থেকে বিশেষ বাহিনী তৈরি করা হয়। কিন্তু তাতে যে কোনও ফল হয়নি ক্রমাগত বেড়ে চলা চুরির ঘটনাই তার প্রমাণ বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজ্য সরকার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলকে পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় এনেছে। কিন্তু চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই তো বন্ধ হচ্ছেই না। শীতের মরসুমে তা বরং আরও বেড়ে গিয়েছে।
তদন্তকারীদের অনুমান, একটি বড় দলই ওই সব চুরিতে যুক্ত। দলের একাংশ অপরাধ সংগঠিত করে লাগোয়া হুগলি বা নদিয়া জেলায় গা ঢাকা দিচ্ছে। কিছু দিন পরে একই ভাবে দুষ্কর্ম করছে ওই দলের আর একটি অংশ। ফলে, সহজে তাদের নাগাল মিলছে না। তদন্তকারীরা আশ্বাস দিয়েছেন, শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরে পড়বে।

ব্যারাকপুর-বৃত্তান্ত
২৪ ডিসেম্বর: ব্যারাকপুরের সুকান্ত পল্লির বাড়িতে চুরি।
১৪ ডিসেম্বর: ক্যানিংহাম রোডে সোনার দোকানে চুরি।
১২ ডিসেম্বর: বীজপুরের বড় জোনপুরে বাড়িতে চুরি।
১০ ডিসেম্বর: হালিশহরে সোনার দোকানে চুরি। একই রাতে
খড়দহের একটি ব্যাঙ্কের এটিএমেও হানা দেয় দুষ্কৃতীরা।
৮ ডিসেম্বর: ব্যারাকপুরের ছোট কাঁঠালিয়ায় মন্দিরে চুরি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.