|
|
|
|
একশো দিনের কাজে দ্বাদশ পশ্চিম, অসন্তুষ্ট কমিশনার
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুরের পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। অগ্রগতির দিক থেকে রাজ্যের ১৯টি জেলার মধ্যে লালগড়ের জেলার স্থান ১২তে। এই পরিস্থিতিতে পর্যালোচনা বৈঠকে এসে নিজের অসন্তোষ গোপন করলেন না একশো দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার। সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিওদের নিয়ে শুক্রবার মেদিনীপুরে এক পর্যালোচনা বৈঠক হয়। অন্দরের খবর, বৈঠকে এক বিডিও’র উদ্দেশে কমিশনার এমনটাও মন্তব্য করেন, “পলিটিক্যাল লোক হলে বলতাম আপনার পদত্যাগ করা উচিত। আমি সরকারি লোক বলে বলতে পারছি না।” বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব সৌরভ দাস। তিনিও কাজে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেন।
শুক্রবার মেদিনীপুরের প্রদ্যোত্ স্মৃতি সদনে পর্যালোচনা বৈঠকে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা হলেও সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায় একশো দিনের প্রকল্পই। প্রতিটি ব্লক ধরে আলোচনা হয়। আধিকারিকেরা জানতে চান, ব্লকের কী পরিস্থিতি, কেন কাজ এগোচ্ছে না? উত্তর দেন বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। কয়েকজন জেলা পরিষদ সদস্যও কিছু সমস্যার কথা জানান। খারাপ পরিস্থিতির জন্য অনেকেই পঞ্চায়েত ভোটের দিকে আঙুল তোলেন। তবে, এই বক্তব্যের সঙ্গে যে একমত নন, তা বুঝিয়ে কমিশনার বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আর কতদিন চলবে? শুধু নির্বাচন বলে দায় এড়ানো যাবে না। সবকিছুর একটা সীমা থাকে। এ ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। |
জেলা পরিষদ হলে চলছে বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র। |
ডিসেম্বর শেষ হতে চলল। চলতি আর্থিক বছর শেষ হতে আর তিন মাস বাকি। এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন আধিকারিকেরা। অবশ্য, শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, গোটা রাজ্যে কমবেশি এক পরিস্থিতি। চলতি আর্থিক বছরে রাজ্যে ২২ কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। সেখানে এখনও পর্যন্ত শ্রমদিবস সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে ৭ কোটি। বৈঠকে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রতিটি ব্লকের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। দেখা যায়, মেদিনীপুর সদর ব্লকে লক্ষ্যমাত্রার ২৯ শতাংশ পূরণ হয়েছে, খড়্গপুর ১-এ ১৭ শতাংশ, খড়্গপুর ২-এ ১৫ শতাংশ, দাঁতন ২-এ ১৫ শতাংশ, নারায়ণগড়ে ৩৭ শতাংশ, পিংলায় ১৬ শতাংশ, মোহনপুরে ২০ শতাংশ, সবংয়ে ১৭ শতাংশ।
কেন খারাপ পরিস্থিতি, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেউ রাজনৈতিক, কেউ আবার প্রশাসনিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এক বিডিও যেমন বলেন, “আমার ব্লকের দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে রাজনৈতিক সমস্যার জন্য কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতিকে জানিয়েছি।” অন্য দিকে, তৃণমূলের এক জেলা পরিষদ সদস্যা আবার বিডিওর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন। ওই জেলা পরিষদ সদস্যা বলেন, “বিডিও নতুন এসেছেন। উনি সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেন না। ফলে, আমরা জেলা পরিষদ সদস্যরা কিছু জানতে পারি না। এমনকী, অনেক কিছু পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিও জানতে পারেন না।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহও বিডিওদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা জেলা পরিষদ সদস্যদেরও বৈঠকে ডাকবেন। আলোচনা করবেন। এটা আমার অনুরোধ। আগে আমার কাছেও কয়েকজন একই অভিযোগ করেছেন।” এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব বুঝিয়ে দেন, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। কোথাও সমস্যা হলে সমস্যাগুলো চিহ্ণিত করে জনপ্রতিনিধিদের জানাতে হবে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
বৈঠক শেষে কমিশনার বলেন, “একশো দিনের প্রকল্পে এ জেলার কী অবস্থা, তা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছি। পশ্চিম মেদিনীপুরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তা-ও যতটা এগোনোর কথা এগোনো যায়নি। এখন পুরুলিয়াও এ জেলার থেকে এগিয়ে। এটা ঠিক, পরিস্থিতি যা তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। তবে চেষ্টা চলছে। জেলাকে কাজে গতি আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা রাজ্য থেকে সমস্ত সহযোগিতা করব।”
পর্যালোচনা বৈঠক হল। এ বার কাজের কতটুকু অগ্রগতি হয়, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|