শিল্পশহরে সাজছে ছুটির ঠিকানা সানসেট পয়েন্ট
অমিতকর মহাপাত্র • হলদিয়া |
শিল্প শহরের ধোঁয়া-ধুলো-দূষণ পেরিয়ে এক ঝলক টাটকা বাতাস। কলকল করে বয়ে চলা হলদি নদী। আর নদীর চরে শীতের দুপুরে এলিয়ে পড়া আলসে রোদ্দুর। নদীতীরের কৃত্রিম ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা দেখতে পারেন আবার স্রেফ মাছ ধরেও কাটিয়ে দিতে পারেন একটা বেলা। কিংবা বাড়ির সকলে মিলে পিকনিক। হলদিয়া শহরের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন একঘেয়ে জীবনের মাঝে একটু আনন্দ দিতে বছর দশেক আগে বন দফতর ও পুরসভার যৌথ উদ্যোগে বনবিষ্ণুপুরে হলদি নদীর ধারে গড়ে তোলা হয়েছিল ‘সানসেট ভিউ পয়েন্ট’। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেখানে কমছে পর্যটকের সংখ্যা। বিষয়টি নজরে আসায় সম্প্রতি তৃণমূল পরিচালিত হলদিয়া পুর-কর্তৃপক্ষ হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। পর্যটকদের সুবিধায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। হলদিয়ার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “ওই ভিউ পয়েন্টের বাড়িটি সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া হলদি নদীর সঙ্গে যুক্ত ছোট খালের উপর সাঁকোও তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন উত্সবের দিনে ওই স্থানে আসা পর্যটকদের সহায়তার জন্য ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবকও রাখা হয়েছে।” |
সেজে উঠছে বনবিষ্ণুপুরের ভিউ পয়েন্ট। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
আশির দশক থেকে হলদিয়ায় একাধিক কল-কারখানা গড়ে ওঠায় পরিবেশে দূষণের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হলদি নদীর পাড় বরাবর ব্যাপক হারে বনসৃজন করা হয়। ২০০৩ সালে বনদফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে হলদিয়া পুরসভা ২২ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বনবিষ্ণুপুরে নদীতীরে সূর্যাস্ত দেখার জন্য একটি কংক্রিটের উঁচু কাঠামো গড়ে তোলে। করা হয় বিদ্যুত্, পানীয় জল ও শৌচাগারের। মোরামের রাস্তাও হয়। পরবর্তীকালে ওই এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে বনবিষ্ণুপুর ও রায়রাঞাচকে হলদি নদীর তীর বরাবর প্রায় আড়াই কিলোমিটার জায়গায় ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়। শহরের মধ্যে নদী, ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের এমন মেলবন্ধন বিরল। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রায় সারাবছরই এখানে পর্যটকরা আসেন। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের মরসুমে ভিড় আরও বাড়ে।
যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গত কয়েকবছর ধরে অবশ্য এই এলাকার জৌলুস কমছে। হলদি নদীর পাড়ে লাগানো ম্যানগ্রোভ গাছগুলির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এখন আর ভিউ পয়েন্ট থেকে ভাল ভাবে সূর্যাস্ত দেখা যায় না। হলদি নদীও আগের অবস্থান থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে সরে গিয়েছে। ফলে নদীর জোয়ারের জল এখন আর ভিউ পয়েন্টের কাছে আসে না। এই অবস্থায় বনবিষ্ণুপুরে পর্যটকদের আসা কমেছে অনেকটাই। এলাকার প্রাক্তন সাংসদ ওই অঞ্চলে ডিয়ার পার্ক তৈরির কথা ভেবেছিলেন। তবে সেই পার্ক আজও গড়ে ওঠেনি।
পুরপ্রধান জানান, ওই এলাকার পর্যটকদের বিশ্রাম নেওয়া ও রাত্রিবাসের জন্য কটেজ তৈরির পরিকল্পনা আছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বন আধিকারিক নিতাই সাহা বলেন, “পুরসভা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে অবশ্যই বন দফতর তা কাযর্কর করতে পদক্ষেপ করবে।”
প্রস্তাব-ভাবনাচিন্তাগুলি বাস্তবায়িত হলে সত্যিই খুশি হবে শহরবাসী। শিল্পশহরে ছুটির দিনে ‘আউটিং’এর জায়গা যে হাতে গোণা এখনও। |
|