|
|
|
|
সাত সাগর পেরিয়ে এ বার টিভি-পর্দায় ‘জলকন্যা’ বুলা
কৃশানু ভট্টাচার্য • কলকাতা |
সাত সাগর সাঁতরে পার হয়ে এসে ‘জলকন্যা’ এ বার সাঁতারু কোচের ভূমিকায়। বাস্তবে নয়, ক্যামেরার সামনে। সোনি আট চ্যানেলের ‘সিআইডি’ সিরিজের একটি নতুন কাহিনির মূল চরিত্রে সাঁতারু বুলা চৌধুরী। কোনটা সহজ? সাঁতার কাটা না অভিনয়? এই নতুন পরীক্ষার পারবেন সাঁতারের মতোই অনায়াসে উতরে যেতে?
“সাঁতার কাটা আমার কাছে জলভাত। কিন্তু সুইমিং ট্রেনার হিসেবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে হবে, সংলাপ বলতে হবে শুনে প্রথমে রাজি হচ্ছিলাম না,” বলছিলেন বুলা।
তা হলে কেন শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন? ‘সিআইডি’ সিরিজের নতুন কাহিনি ‘সুইমিং পুল রহস্য’ শোনার পরেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন। “স্টোরিটা খুব থ্রিলিং। সাঁতার নিয়েই। ভাবলাম, দেখাই যাক। চ্যালেঞ্জ নিতে কেন ভয় পাব? শেষে রাজি-ই হয়ে গেলাম,” বলার সময় বুলার মুখে হাসি।
‘সিআইডি’-র টিআরপি ওঠানোর জন্যই কি বুলা চৌধুরীকে বেছে নিয়েছেন? “না না একেবারেই তা নয়। টিআরপি-র প্রশ্ন পরে। চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই আমরা সবার আগে বেছে নিয়েছি বুলা চৌধুরীর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিপ্রাপ্ত সাঁতারুকে,” বললেন চ্যানেল কর্তা তুষার শাহ।
‘সিআইডি’ সিরিজের কাহিনি ‘সুইমিং পুল রহস্য’-এ বিখ্যাত সাঁতারু কোচ রোহিণী চৌধুরীর ভূমিকায় বুলা। আন্তর্জাতিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় নিজের প্রিয় ছাত্র সুমনকে তৈরি করার কাজে ব্যস্ত থাকে রোহিণী। কিন্তু এক রাতে জলের মধ্যে পাওয়া যায় সুমনের মৃতদেহ। পুলিশ সন্দেহ করে রোহিণীকে। শুরু হয় তদন্ত।
মোতি নন্দীর ‘কোনি’র কি কোনও প্রভাব আছে এই রহস্য কাহিনিতে? “কোনও মিল নেই”, জানালেন পরিচালক গোপাল চত্রবর্তী। তাঁর মতে, ‘কোনি’র গল্প ‘ইমোশনাল’। আর এই কাহিনি হল ‘ফুল অব সাসপেন্স।’
|
বুলা নন, ইনি ‘রোহিণী’ চৌধুরী। ক্যামেরার সামনে নতুন ভূমিকায়। —নিজস্ব চিত্র। |
“স্টোরিটা খুব থ্রিলিং। সাঁতার নিয়েই। ভাবলাম, দেখাই যাক। চ্যালেঞ্জ নিতে
কেন ভয় পাব? শেষে রাজি-ই হয়ে গেলাম...” —বুলা চৌধুরী |
|
বুলার মত ভিন্ন। “গুরু-শিষ্যের চিরকালীন মানবিক সম্পর্ক নিয়ে লেখা হয়েছিল ‘কোনি’র গল্প।” আর ‘সিআইডি’র এই কাহিনিতে সাঁতার পুল তোলপাড় হয়েছে সাঁতারুর খুন নিয়ে। এসেছে পুলিশ, শুরু হয়েছে তদন্ত। ‘‘তবে ‘কোনি’ আমার খুব প্রিয় উপন্যাস।”
হিন্দি ‘সিআইডি’ সিরিজ বুলার খুব প্রিয়। “প্রতিটি গল্পই খুব থ্রিলিং। এখানেও তা-ই,”, জানালেন বুলা। “কাহিনির প্রতিটি মোড়ে মোড়ে আছে রহস্যের নানা স্তর। আর সাঁতারের শেষটা যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, শেষেই হার-জিত, এখানেও তা-ই। সোমবার ৩০ ডিসেম্বর যখন সোনি আট-এ ‘সুইমিং পুল রহস্য’ সম্প্রচারিত হবে, তখন কাহিনির শেষ না-দেখে উঠে যেতে পারবেন না দর্শকরা,” দাবি করলেন বুলা।
কেমন অভিনয় করেছেন ‘জলকন্যা’ বুলা? “বুলা তো আর ন্যাচারাল অভিনেতা নন। কিন্তু ক্যামেরার সামনে কখনও তাঁকে নার্ভাস হতে দেখিনি। বেশ ভালই অভিনয় করেছেন,” ফোনে জানালেন পরিচালক গোপাল চক্রবর্তী।
ক্যামেরার সামনে বুলা এই প্রথম দাঁড়ালেন, এমন নয়। তাঁর কথায়, “দেশ-বিদেশে অসংখ্য বার জল থেকে উঠে পদক নিয়ে দাঁড়িয়েছি ক্যামেরার সামনে। বলেছি নিজের অনুভূতির কথা।”
কিন্তু এ বার আলাদা অনুভূতি। বুলা স্বীকার করলেন, জীবনে কখনও অভিনয় করেননি। এই প্রথম করলেন। তা-ও আবার মূল চরিত্রে। তবে অসুবিধা হয়নি। কারণ শৈশব থেকেই সাঁতারের কোচকে দেখে আসছেন। তিনি কী করেন, কী করতে পারেন, সে সম্পর্কে তাঁর পরিষ্কার ধারণা আছে। ‘কোনি’ও অনেক বার দেখেছেন। ‘ফাইট কোনি, ফাইট’ সংলাপ বলা কোচের কোনও প্রভাব কি পড়েছে আপনার অভিনয়ে? “কী যে বলেন! সৌমিত্রদার সঙ্গে আমার কোনও তুলনা হয় নাকি? উনি কত বড় অভিনেতা,” বলছেন বুলা। তাঁর দাবি, তিনি জলের লাইনে আছেন। মুখস্থ বিদ্যায় নেই। “ভয় ছিল, সংলাপ ঠিকঠাক বলতে পারব তো! সাঁতারু কোচের ভূমিকায় বাকিটা সহজেই করে ফেলেছি।” সাত সাগর পেরিয়ে এসেও নিরহঙ্কার বুলা।
ভবিষ্যতে কি অভিনয়ের অফার এলে বিবেচনা করবেন? বুলার স্পষ্ট কথা, “জল যে-দিকে গড়ায়, সেই দিকে আমিও গড়াই। অফার এলে দেখা যাবে।” কিন্তু তাঁর লক্ষ্য অভিনয় করা নয়। ‘সুইমিং অ্যাকাডেমি’ করার জন্য মুখিয়ে আছেন। “জায়গা পাচ্ছি না। সাত সাগর পেরিয়ে আসার পরেও”, তাঁর কণ্ঠে বিষণ্ণতা। কলকাতার বাইরে অফার আছে। কিন্তু তাঁর মন সায় দেয় না। এ দিকে বয়সও হয়ে যাচ্ছে। “কবে করতে পারব জানি না”, তাঁর কণ্ঠে উদ্বেগ।
মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন? সাত সাগরের তরঙ্গে ভয়ডরহীন যে-মেয়ে অনায়াসে ভেসে বেড়িয়েছেন, কেন তিনি দিদির কাছে নিজের অভিলাষ জানানোর দোলাচল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি? “সাহস করে উঠতে পারিনি”, বুলার পরিষ্কার স্বীকারোক্তি। |
|
|
|
|
|