ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা-চুবকার পর এ বার মেদিনীপুরের চাঁদড়া এবং শালবনির দেউলকুণ্ডাতে ব্যাপক তাণ্ডব চালাল হাতির দল। ঘরবাড়ি ভেঙেছে। প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হাতির হানায় মারা গিয়েছে গবাদি পশুও। দলমার ১৩০টি হাতির দল দু’ভাগে ভাগ হয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। ফলে, বন দফতরের কর্তাদের চিন্তা আরও বেড়েছে। উদ্বেগে রয়েছেন স্থানীয় মানুষজনও। শুক্রবার রাত পর্যন্ত বড় দলটি গোদাপিয়াশালের জঙ্গলে ছিল। এখন তারা গোয়ালতোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বন দফতরের কর্মীরা অবশ্য দলটিতে লালগড়ের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। কারণ, গোয়ালতোড়ের দিকে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। মেদিনীপুরের ডিএফও বিজয় সালিমঠ বলেন, “হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর সদর এবং শালবনি এলাকায় কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শষ্যহানি এড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।” |
|
|
দেউলকুণ্ডায়
হাতির হানা |
শালবনির দেউলকুণ্ডায়
হাতির দাপটে বিপর্যস্ত আলু খেত। |
|
এই সময়ে হাতি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বন কর্তাদের উদ্বেগ থাকেই। সাধারণত, ওড়িশা থেকে নয়াগ্রামে ঢোকার পর সাঁকরাইল, খড়্গপুর গ্রামীণ, মেদিনীপুর সদর ব্লক হয়ে লালগড়ে ঢুকে পড়ে দলমার দলটি। যাতায়াতের পথে প্রচুর ফসলের ক্ষয়ক্ষতি করে। এ বারও তাই হচ্ছে। দিন কয়েক আগে ১৩০টি হাতির দল ওড়িশা থেকে নয়াগ্রামে ঢুকে পড়ে। পরে নয়াগ্রাম থেকে কলাইকুণ্ডার শঙ্করবনির জঙ্গলে চলে আসে। মঙ্গলবার রাতে সাঁকরাইল ব্লকের পাঁচটি গ্রামে তাণ্ডব চালায় দলটি। বৃহস্পতিবার দলটি চাঁদড়ায় আসে। ওই দিন রাতে হাতির একটি পাল জঙ্গলপথ ধরে ঢুকে পড়ে শালবনির দেউলকুণ্ডায়। রাত আড়াইটে থেকে ভোর চারটে টানা দেড় ঘণ্টা ধরে দাপিয়ে বেড়ায়। শুক্রবার পিড়াকাটা পেরিয়ে গোদাপিয়াশালের জঙ্গলে আসে। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে হাতির হানায় অন্তত ৭০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি মহিষ, ৮টি ছাগল মারা গিয়েছে। ২০০ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাতির হানায় দেউলকুণ্ডার মঙ্গল সরেণের ২টি মহিষ মারা গিয়েছে। মঙ্গলবাবুর কথায়, “রাত দু’টো নাগাদ হাতির দলটি গ্রামে ঢুকে পড়ে। এরপর তাণ্ডব শুরু হয়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।” দেউলকুণ্ডার পাশাপাশি তিলাবনি, দহ ও তার আশপাশের এলাকা হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দলমার এই দলটিতে দু’টি সদ্যোজাত রয়েছে। ফলে, দলটি দ্রুত এলাকা ছাড়ছে না। সদ্যোজাতদের সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। শুক্রবার বন দফতরের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করেন। দফতরের এক আধিকারিক বলছিলেন, “দেখে মনে হচ্ছে, দলটি গোয়ালতোড়ের দিকে এগোতে চাইছে। কিন্তু, আমরা দলটিতে লালগড়ের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করছি। গোয়ালতোড়ের দিকে গেলে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হবে। শষ্যহানি আরও বাড়বে।”
উল্লেখ্য, আশির দশক থেকে হাতি আসা শুরু হয়েছিল এ রাজ্যে। তখন শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা কাঁকড়াঝোর ও ময়ূরঝর্না পর্যন্ত হাতি আসত। ধীরে ধীরে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে হাতি জেলার অন্যত্রও ঢুকতে শুরু করে। এক সময়ে দাবি উঠেছিল, দলমা থেকে আসা হাতির দলকে সীমান্তেই আটকে দিতে হবে। তখন সরকার ময়ূরঝর্নায় একটি প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেখানে হাতির খাবার উপযোগী গাছ লাগানো হবে, পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু, প্রকল্প সে ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এ দিকে, প্রতি বছর যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাতির সংখ্যা। ক্ষয়ক্ষতিও। অবশ্য, এখন ‘রেসিডেন্সিয়াল’ হাতির সংখ্যাও বেড়েছে। ২০০৯ সালের গণনা অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া মিলে ‘রেসিডেন্সিয়াল’ হাতির সংখ্যা ৩৭। এখন এই সংখ্যাটা ৫৫ পেরিয়ে গিয়েছে বলেই মনে করছেন বন দফতরের কর্তারা। |